দরজায় কড়া নাড়ছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৫ মেয়াদের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। আগামী ১৯ এপ্রিল নির্বাচনী মাঠে মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন শিল্পীরা। নির্বাচনী মাঠে নামার আগে দল গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। এবারের নির্বাচনে একজোট হয়ে প্যানেল গড়ছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় দুই অভিনেতা ডিপজল ও মিশা সওদাগর। এরই মধ্যে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে রোজার প্রথম দিন থেকে শেষ পর্যন্ত মাসব্যাপী ইফতার আয়োজন করেছেন মিশা-ডিপজল প্যানেল। অভিনেতা মিশা সওদাগর প্রথম রমজানে উপস্থিত হয়ে সবাইকে নিয়ে ইফতার করেন। এই আয়োজনে শুধু শিল্পী সমিতির সদস্যরাই নন, সিনেমা সংশ্লিষ্ট সবাই ইফতার করার সুযোগ পাবেন। গতকাল সন্ধ্যায় এফডিসিতে উপস্থিত হয়েছিলেন ডিপজল-মিশা প্যানেলের সমর্থিত অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। দীর্ঘদিন পর এফডিসিতে এসেছেন জনপ্রিয় শিল্পী রোজিনা, সুচরিতা, দিলারা, রেবেকা, শাহনূর, আলী রাজ, নানা শাহ, কমল, ডিপজল, মিশা সওদাগর, জয় চৌধুরী, বাপ্পারাজ, সুব্রতসহ আরও অনেকেই। শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে একেকজন একেক মন্তব্য করেন। ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল দুই বছর ক্ষমতায় এসে কতটুকু শিল্পী সমিতির উন্নয়ন বা শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছে তা নিয়েও কথা বলেছেন।
জনপ্রিয় অভিনেত্রী রোজিনা বলেন, অনেক দিন পরে এফডিসিতে আসলাম। একটা সময় এই এফডিসিতে কত কাজ করেছি। সেই দিনগুলো এখনো মিস করি। এখন নির্বাচন উপলক্ষে একসঙ্গে হয়ে খুব ভালো লাগল। অনেক দিন পরে সিনিয়র-জুনিয়র শিল্পীদের সঙ্গে দেখা হলো। আমরা সবাই একসঙ্গে বসে ইফতার করলাম। এটা খুবই ভালো লেগেছে। মিশা-ডিপজল ভাই নির্বাচনের একটা প্যানেল করেছে। আগেও এই প্যানেল থেকে নির্বাচন করেছি। এবারও তাদের প্যানেল থেকে নির্বাচন করব। মিশা-ডিপজল প্যানেল নির্বাচিত হলে শিল্পীদের জন্য আগামীতে অনেক ভালো কিছু হবে।
গতবার ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল থেকে নির্বাচিত নায়িকা শাহনূর এবার মিশা-ডিপজল প্যানেল থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। এই নায়িকার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি গতবার সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অনেক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলাম। কিন্তু দুই বছরে শিল্পীদের জন্য কিছুই করতে পারিনি। তার কারণ শিল্পী সমিতির মিটিং ছাড়া কোনো প্রোগ্রামেই তারা আমাকে ডাকেনি। আমাকে সব কিছু থেকেই দূরে রাখা হয়েছিল। মিশা ভাই আর ডিপজল মামা আমাকে তাদের কমিটিতে নিয়েছে। আমি তাদের তুলনায় একেবারেই ক্ষুদ্র একজন শিল্পী। তাই বলে তারা আমাদের কখনোই অসম্মান করেননি। আমরা শিল্পীরা বিগত মেয়াদের শিল্পী সমিতিতে যে সম্মান হারিয়েছি সেটা যেন আমরা ফিরিয়ে আনতে পারি, সামনে আমাদের এটাই লক্ষ্য থাকবে। সেই লক্ষ্যে আমি কাজ করে যেতে চাই। দুই বছরে আসলেই শিল্পীদের জন্য আমরা কিছুই করতে পারিনি। তাই এই কমিটিতে এসেছি, যাতে শিল্পীদের জন্য কিছু করতে পারি। আর আমাদের শিল্পীদের মধ্যে কোনো বিভাজন চাই না। আমরা আগে যেমন ছিলাম, নির্বাচনের পরে তেমনই থাকতে চাই।
গতবারের কমিটি কেন আপনাদের দূরে সরিয়ে রাখে- এমনটি জানতে চাইলে এ অভিনেত্রী বলেন, ওই কমিটি একজনের কথা শুনেই চালানো হতো। মানুষের কান কথা শুনে আমাকে সব কিছু থেকে সাইড করে রাখা হতো। আর আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন যে এবারের মিশা-ডিপজলের কমিটিতে সব তারকা আছেন। আমিও এই কমিটি থেকে নির্বাচিত হয়ে শিল্পীদের জন্য কাজ করতে চাই।
আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুচরিতা। একসময়ের পর্দা কাঁপানো অভিনেত্রী তিনি। শিশুশিল্পী হয়ে চলচ্চিত্রে পা রাখা এ অভিনেত্রী এখনো চলচ্চিত্রের সঙ্গে আছেন। সুচরিতা শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে মিশা ভাই আমাকে কল করে বলেন, এফডিসিতে ইফতার করতে হবে। এটা শুনেই আমার মনে ঈদ শুরু হয়ে যায়। গত দুইটা বছর এফডিসিতে আসিনি। নিপুণের মতো জুনিয়র নায়িকা নির্বাচিত হয়ে আমাকে আর রুবেলের মতো নায়ককে শিল্পী সমিতির সদস্য পদ থেকে বাতিল করে দিয়েছে। আমি এফডিসিতে চার-পাঁচ বছর বয়সে এসেছি। বলতে গেলে এই এফডিসিতেই আমি বড় হয়েছি। আমি যখন এসেছি তখন এফডিসির চারপাশে বেড়া ছিল না। সেই সুচরিতার শিল্পী সমিতির সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে। এটা আমার জন্য কতটা অসম্মানজনক তা বলতে পারব না। তবে গত দুই বছরে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ শিল্পীদের জন্য কী করেছে তা আপনারা খতিয়ে দেখবেন। আর মিশা-ডিপজল খুব ভালো মানুষ। ডিপজল ভাই তো নিজেই একটা ইন্ডাস্ট্রি। তিনি চাইলে প্রতি মাসে একটা করে সিনেমা বানাতে পারেন। তার কাছে সাহায্য-সহযোগিতা চাইলে কোনো শিল্পীই ফিরে আসে না। তিনি সবাইকে সাহায্য-সহযোগিতা করেন। তাই এবারে নির্বাচনে তাদের নির্বাচিত করতে হবে।
অভিনেতা আলী রাজ বলেন, শিল্পী সমিতির নির্বাচন মানেই তো একটা অন্য রকম উৎসব। এই উৎসবটা যেন সব সময় থাকে। আমরা শিল্পীরা সবাই এক হয়ে কাজ করতে চাই।
আক্ষেপের সঙ্গে চলচ্চিত্রের খল অভিনেতা নানা শাহ বলেন, আগেরবার আমি ও ডি এ তায়েব নিপুণের সঙ্গে নির্বাচন করেছিলাম। ভালো কিছু কাজের আশা করেই তাদের সঙ্গে নির্বাচন করেছিলাম। তারা কথা দিয়েছিল শিল্পী সমিতির উদ্যোগে সিনেমা নির্মাণ করবে। একটি কথা মনে রাখবেন, শিল্পী সমিতি কিন্তু সিনেমা নির্মাণ করতে পারে না। আর নিপুণ কথা দিয়েছিল ৬টি সিনেমা নির্মাণ করবে।
আমি তার কথা অনুযায়ী এগিয়ে ছিলাম। দুটি সিনেমা এন্ট্রি করেছিলাম। কিন্তু তারা আমার পাশে কেউ আসেনি। আমরা শিল্পীরা সম্মান ও ভালোবাসা চাই। এটা যখন আমরা হারিয়ে ফেলি তখন খুব কষ্ট পাই। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে আমাদের অনেক শিল্পী এখন বেকার। তাদের জন্য শিল্পী সমিতি দুই বছর কি করতে পেরেছে?
দুই বছরে শিল্পী সমিতির সফলতা দেখছি না। দুই বছরে কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের কাজের সফলতা না দেখলেও অদ্ভুত সফলতা দেখেছেন উলেস্নখ করে তিনি আরো বলেন, আমাদের টেলিভিশনের নায়ক চঞ্চল চৌধুরী ভারতে পুরস্কার পেয়েছেন সেটি নাকি শিল্পী সমিতির অবদান। এখানে শিল্পী সমিতির কী অবদান আছে? এটি তো চঞ্চল তার কাজের গুণে পেয়েছেন। কাজ করতে হবে, এ রকম অদ্ভুত কথা বলে লাভ নেই। ওই কমিটিতে আমরা গিয়ে ভুল করেছি। তাই এবার আগেই ঠিক করেছি মিশা-ডিপজল প্যানেলে আসব। যারা কিছু করতে পারবে, তারাই এই প্যানেলে আছেন। আগের প্যানেলে প্রযোজক ছিলেন না। কিন্তু এই প্যানেলে প্রযোজক-পরিচালক ও শিল্পী তিনটিই আছে। ডিপজল, মিশা, আমি, রোজিনা, তায়েব, জ্যাকি আলমগীর প্রযোজক। আমরা বলব না কী করব, কাজে দেখাব। আমরা কোনো অন্যায় চাই না, বিভাজন চাই না। এর আগেও আমরা নির্বাচন দেখেছি কিন্তু এখন কেমন যেন এক অদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমি শুনেছি নির্বাচন বন্ধ করে দেবে, হবে না। এসব ফালতু কথা বলে কোনো লাভ নেই। নির্বাচন হবেই। আমরা সব শিল্পী মিলে নির্বাচন করব। কেউ যদি বাধা দেয়, নির্বাচন বানচাল করতে চায় আমরা তাকে বাধা দেব। কিন্তু শিল্পী সমিতির নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে না।
খ্যাতিমান খল অভিনেতা ডিপজল বলেন, যারা আমাদের ভোটার তারা ঠিকই বুঝতে পারবে যে কতটা ভালো হয়েছে, কতটা খারাপ হয়েছে। আমি কাউকেই দোষতে যাব না। এটা আপনারাই বিচার করবেন। কে ভালো করেছে, কে খারাপ করেছে। আমরা ইফতারের আয়োজন করেছি, এটা সবার জন্যই খোলা। যে আসবে সেই এখানে ইফতার করতে পারবে। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত। আমাদের কোনো দল নেই। আমি মনে করি চলচ্চিত্রের সবাই আমরা এক। আর এই নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্কের মধ্যে না জড়ানোই ভালো।