বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন একসময়ের দাপুটে খল অভিনেতা আহমেদ শরীফ। ঢাকাই চলচ্চিত্রের তিনি অনেক দর্শক প্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন। চলচ্চিত্রের সোনালী সময়ে যারা খল অভিনেতা হিসেবে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন আহমেদ শরীফ তাদের অন্যতম। সম্প্রতি তিনি আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছেন। এই অভিনেতার দেশে ফেরার পরপরই নতুন এক গুঞ্জনের ডালপালা মেলেছে। তিনি নাকি ২০২৪-২৫ শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে অংশ নিতে চলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই জ্যেষ্ঠ শিল্পী গত বুধবার রাতে সমিতির অফিসে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। সমিতি ঘিরে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ দেন।
আহমেদ শরীফ মনে করেন, 'সিনেমা নিয়ে সবার আগে আলোচনা হওয়া দরকার। কেন আমরা বিশ্বমানের বেশি বেশি সিনেমা তৈরি করতেন পারছি না, এ কথা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। নির্বাচন ঘিরে যা হচ্ছে, এতে সাধারণ মানুষের মনে সিনেমা ও শিল্পীর ওপর সাধারণ মানুষের নেগেটিভ ধারণার জন্ম হচ্ছে।
আহমেদ শরীফ বলেন, আগে এত সংগঠন ছিল না। শিল্পীকে কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতে হতো। যখন নির্বাচন হতো, এফডিসিতে শিল্পীদের সমাগমে ঈদের আমেজ বিরাজ করত। উৎসবের আমেজে তারকা শিল্পীরা ভোট দিতে আসতেন।
প্রসঙ্গত, চলচ্চিত্রশিল্পীদের স্বার্থরক্ষা ও সবাইকে এক সুতায় গাঁথতে প্রয়াত সুপারস্টার নায়করাজ রাজ্জাকের হাত ধরে ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। আনুষ্ঠানিক কমিটি গঠিত নির্বাচিত হওয়ার আগে আহ্বায়ক ছিলেন খল অভিনেতা আহমেদ শরীফ। পরে শিল্পীদের ভোটে নায়করাজ রাজ্জাক সভাপতি হয়েছিলেন এবং সাধারণ সম্পাদক হন আহমেদ শরীফ।
স্মৃতিচারণা করে আহমেদ শরীফ জানান, তখনকার নির্বাচনগুলোতে ছিল না কোনো পক্ষ-বিপক্ষ, প্যানেল কালচার এবং নির্বাচন ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনারও সুযোগ ছিল না। এমনকি শিল্পী নির্বাচনে পুলিশি পাহারা দেওয়া হতো না! ফল যা হতো, শিল্পীরা তা মেনে নিয়ে ভোটের পর আবার একসঙ্গে কাজে নেমে পড়তেন। এখনকার নির্বাচন ও পরবর্তী ঘটনাগুলো লজ্জাজনক। যা চলচ্চিত্রের বাইরে মানুষের শিল্পীদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করছে। বিগত মেয়াদে নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো আমাকে বিব্রত করেছে। চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরিয়ে আনার জন্য শিল্পী সমিতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের শিল্পী সমিতির নির্বাচন ঘিরে এফডিসিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি নির্বাচনী ফলের ফয়সালা করতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত যেতে হচ্ছে প্রার্থীদের। এটা সত্যিই দুঃখজনক এবং লজ্জার বিষয়।
আহমেদ শরীফ বলেন, 'আমি আমেরিকায় থাকি। সেখানকার মানুষের সঙ্গে দেখা হলে আগে তারা সিনেমার খবর নিত। এখন সিনেমার কথা না জিজ্ঞেস করে এফডিসির নির্বাচন ও গন্ডগোল নিয়ে জিজ্ঞাসা করে। এতে আমি বিব্রত হই। তাদের বলি, আমি তো এই সংগঠনের নির্বাচন করি না। আবার আমেরিকাপ্রবাসীরা আমাকে বলেন, 'আপনাদের সময় তো এমন হতো না। এখন কেন হচ্ছে এমন বিশৃঙ্খলা?' এসব জানতে চাইলে বিব্রত হই। লজ্জায় সঠিক উত্তর দিতে পারি না।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার পর গুঞ্জন ওঠে শিল্পী সমিতির নির্বাচনে নিপুণের প্যানেল থেকে প্রার্থী হতে পারেন আহমেদ শরীফ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'কোনো প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নেব কি না, এর জন্য সিদ্ধান্ত নিতে আমার আরও সময় প্রয়োজন।'
প্রসঙ্গত শিল্পী সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার ইলিয়াস কাঞ্চনকে সভাপতি পদে রাখতে ব্যর্থ হয়ে নতুন সভাপতির খুঁজে একেক তারকা শিল্পীর কাছে ধর্ণা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ইতিপূর্বে তিনি শাকিব খানকে এই পদের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তিনি তা ফিরিয়ে দেন। এরপর তিনি আরেক তারকা শিল্পী অনন্ত জলিলের দ্বারস্থ হন। তিনিও চলচ্চিত্রে ব্যস্ততার অজুহাতে নিপুণের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। অতপর নিরুপায় হয়ে সুদুর আমেরিকায় অবস্থানরত আহমেদ শরিফের দ্বারস্থ হন। গুঞ্জন চলছে তারই প্রেক্ষিতে আহমেদ শরিফের ঢাকায় আসা।