মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে সাবিনা ইয়াসমিন

বিনোদন রিপোর্ট
  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সাবিনা ইয়াসমিন

বাংলাদেশের পেস্ন-ব্যাক সম্রাজ্ঞী হিসেবে কোকিলকণ্ঠী গায়িকা হিসেবে খ্যাত কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। ২০০৭ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেবার মরণঘাতী এই ব্যাধিকে জয় করে ফিরেছিলেন ভক্তদের মাঝে। ১৭ বছর পর জানা গেল, আবারও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। চিকিৎসার জন্য তাকে নেওয়া হয়েছে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালের ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টারে।

পারিবারিক সূত্রের বরাতে জানা গেছে, গত বছরের শেষের দিকে সাবিনা ইয়াসমিনের শরীরে কিছু জটিলতা তৈরি হয়। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায়, শিল্পীর মুখগহ্বরে আবারও ক্যান্সার হয়েছে। ফেব্রম্নয়ারির প্রথম সপ্তাহে তাকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়।

জানা গেছে, এরইমধ্যে সাবিনার মুখে একটি সার্জারি হয়েছে। শিগগিরই থেরাপি দেওয়া শুরু হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়া চাওয়া হয়েছে শিল্পীর জন্য।

২০০৭ সালে এই শিল্পী প্রথম ওরাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তখন দেশ-বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। এরপর থেকে নিয়মিত চেক-আপের মাধ্যমে ভালোই ছিলেন তিনি।

পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে সঙ্গীতের সঙ্গে আছেন সাবিনা ইয়াসমিন। তার মতো মিষ্টি কণ্ঠ এই বাংলায় দ্বিতীয়টি আসেনি বলেও অনেকে মনে করেন। যদিও অনেকে রুনা লায়লাকে বাংলাদেশের সেরা কণ্ঠশিল্পী হিসেবে মনে করেন। তবে আবার অনেকে এটাও মনে করেন রুনা লায়লা তখন গানের ক্ষেত্রে গানের অতিরিক্ত তার কমার্শিয়াল গায়কী ঢং দিয়ে যেটা করেছেন সেটা আজকে মিউজিক ভিডিওতে যেমন করা হয় তেমনভাবে নিজেকে উপস্থাপনার কারণেই। পক্ষান্তরে সাবিনা ইয়াসমিন ছিলেন একেবারেই প্রথাগত এবং নন-কমার্শিয়াল একজন শিল্পীর শিল্পীসত্তাকে অক্ষুণ্ন রেখেই তার গায়কী ধরে রেখেই তার গান সারাজীবন গেয়ে গেছেন। শ্রোতাকে আলাদাভাবে উদ্দীপ্তকরণের চেষ্টা করেননি তিনি। শারীরিক কোনো কসরৎ ছাড়াই তিনি তার সুরেলা কণ্ঠের জাদুতেই শ্রোতাকে মাতিয়েছেন। যে কারণে রুনা লায়লা আজকের মিউজিক ভিডিওর শারীরিক কসরৎপূর্ণ গায়কী ঢংয়ের স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিলেও সাবিনা ইয়াসমিন এটা মেনে নিতে পারছেন না। কণ্ঠশিল্পী হিসেবে এই দু'জনের এ রকম পরস্পরবিরোধী রুচির অবস্থান থেকেও পরিষ্কার হয়ে যায় সাবিনা ইয়াসমিন কতটা উচ্চমানসম্পন্ন কণ্ঠশিল্পী।

চলচ্চিত্র ও আধুনিক গান তো আছেই পাশাপাশি সাবিনা ইয়াসমিন দেশাত্মবোধক গান কণ্ঠে তুলে সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস। তিনি ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা 'স্বাধীনতা পুরস্কার' ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা 'একুশে পদক' লাভ করেন সাবিনা ইয়াসমিন। এ ছাড়াও ছয়বার বাচসাস পুরস্কার, উত্তমকুমার পুরস্কার, জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন তিনি।

ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের ভুবনে পদচারণা শুরু হলেও চলচ্চিত্রে পূর্ণ নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে সাবিনা ইয়াসমিনের আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৭ সালে 'আগুন নিয়ে খেলা' চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। ১৯৭২ সালে 'অবুঝ মন' চলচ্চিত্রের 'শুধু গান গেয়ে পরিচয়' গানে কণ্ঠ দিয়ে তিনি প্রথম জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

এ শিল্পীর উলেস্নখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে রয়েছে 'সব সখীরে পার করিতে', 'এই পৃথিবীর পরে', 'মন যদি ভেঙে যায়', 'ও আমার রসিয়া বন্ধু রে', 'জীবন মানেই যন্ত্রণা', 'জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো', 'সব ক'টা জানালা খুলে দাও না', 'ও আমার বাংলা মা', 'মাঝি নাও ছাড়িয়া দে', 'সুন্দর সুবর্ণ', 'একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার' প্রভৃতি।

সাবিনা ইয়াসমিন সর্বশেষ পেস্ন-ব্যাক করেছেন প্রয়াত চিত্রনায়িকা ও নির্মাতা কবরী পরিচালিত 'এই তুমি সেই তুমি' সিনেমার 'দু'টি চোখে ছিল কিছু নীরব কথা' শিরোনামের একটি গানে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে গানটিতে কণ্ঠ দেন তিনি। এছাড়া কবরীর 'এই তুমি সেই তুমি' সিনেমার চারটি গানে সুরও দেন সাবিনা ইয়াসমিন। এর মাধ্যমে ক্যারিয়ারে প্রথমবার তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

সেই শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত সাবিনা ইয়াসমিন তার মধুমাখানো সুরেলা কণ্ঠের মায়ায় মোহগ্রস্ত করে রাখেন শ্রোতাদের। আধুনিক, দেশাবোধক, পেস্ন-ব্যাক সব ঘরনাতেই যুগ যুগ ধরে মানুষের হৃদয়ের গভীরে স্থায়ী হয়ে আছে তার সুরের জাদু মাখানো গান। কোনো সংশয়ই নেই, দুই বাংলা মিলিয়েই বাংলা গানের সেরা শিল্পীর তালিকা করলে তার নামটি একেবারে শুরুতেই থাকবে। তিনি আবারও ক্যান্সারকে জয় করে সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন এটা সবারই কামনা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে