মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বাংলাদেশে বাকি জীবন কাটাতে চান কবীর সুমন

বিনোদন ডেস্ক
  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
কবীর সুমন

উপমহাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কবীর সুমনের জন্ম ভারতের ওড়িশায়। বেড়ে ওঠা কলকাতাতে হলেও বাংলাদেশের প্রতিও বেশ টান রয়েছে তার। তাই জীবনের শেষ দিনগুলো বাংলাদেশে কাটাতে চান কবীর সুমন। এমনটিই জানিয়েছেন তিনি। সোমবার দুপুরের পর নিজের ফেসবুক আইডিতে দীর্ঘ পোস্ট দিয়ে এ ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন তিনি।

বয়সের কারণে প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। কিছুদিন আগে টানা প্রায় সপ্তাহখানেক হাসপাতালে থেকে এসে এমন উপলব্ধিই হয়েছে তার, এমনটাই উলেস্নখ করেছেন ফেসবুক পোস্টে।

ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, 'এই কথা আমি আগেও অনেকবার বলেছি। তাও ফের বলছি, কারণ আমার কথায় কোনো কাজ হচ্ছে না। এমন নয় যে সনাতনধর্মীয় নামধারী কোনো বঙ্গজ আমায় সম্মান করেন না। মুষ্টিমেয় কিছু বঙ্গজ করেন। কিন্তু বড্ড বেশি সংখ্যক সনাতনধর্মীয় বঙ্গজ আমায় ঢাক পিটিয়ে ঘৃণা করেন এবং তা জাহির করে সনাতনী সুখ পান।

নিজের নামের ব্যাখ্যা করে এ শিল্পী লেখেন, আর এক শ্রেণির সনাতন-বঙ্গজ আছে যারা আমায় কবীর নামে ডাকতে চায় না। এরা, যা দেখেছি 'বামপন্থী'। ২০০০ সালের ফেব্রম্নয়ারি থেকে আমার নাম ভারতের সংবিধান মোতাবেক ঘোষিতভাবে কবীর সুমন। ফার্স্ট নেম কবীর। সারনেম সুমন।

আমার আয়কর ফাইলর্ যাশন কার্ড, পাসপোর্ট, ভোটার আইডি, আধার কার্ড সর্বত্র এই নামটাই আছে। এই নামে আমি ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে লড়ে মাননীয় সি পি আই এম সদস্য ডক্টর সুজন চক্রবর্তীকে হারিয়ে দিয়ে লোকসভার সাংসদ হয়েছিলাম। ভারতের অন্তর্ভুক্ত পশ্চিম বাংলায় তা সবার জানার কথা। তা সত্ত্বেও সি পি আই এম করা বঙ্গজরা আমায় আমার বর্জিত নামে ডাকেন। শুধরে দিলেও শুধরে নেন না। আর নকশালপন্থি দলের বঙ্গজ নেতাও (নামে সনাতনধর্মীয়) আমায় ভুলেও কবীর সুমন বলেন না, কবীর তো নয়ই। তিনি অবিরাম সুমন সুমন করে যান। এদিকে সবাই নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার, ব্যক্তিগত অধিকার বলতে গদগদ। আর একদল আছে, যারা আমায় গানওলা বলে ডাকে। কী বলি।

বাংলাদেশিরা তাকে সম্মান করেন এটা উলেস্নখ করে বলেন, যা বুঝেছি, আমায় নির্দ্বিধায় সম্মান করেন যারা, প্রাপ্য সম্মানটুকু দেন যারা তারা সদলবলে বাংলাদেশের নাগরিক। পশ্চিমবঙ্গের সনাতনধর্মীয় বঙ্গজদের মতো বাংলাদেশের কেউ আমায় সমানে, যে কোনো উপায়ে অপমান করে যান না। আর মাসখানেক পরে আমি ৭৫ পুরো করে ৭৬-এ পড়ব।

তবে কলকাতা তার প্রথম জানিয়ে বলেন, কলকাতা আমার প্রথম প্রেম। কলকাতা নামটা আমার গানে যতবার এসেছে আর কারুর কবিতায় গানে তা আসেনি। আমায় যারা বাঁচিয়ে রেখেছেন তারা সবাই কলকাতার সনাতনধর্মীয় বঙ্গজ। তাদের ছেড়ে থাকতে পারব না। কিন্তু, কারুর কোনো ক্ষতি না করা সত্ত্বেও সমানে অপমানিত হতে হতে এবারে আমি চাইছি এই দেশটা, মায় এই শহরটাও ছেড়ে চলে যেতে। এখানকার সনাতনধর্মীয় বঙ্গজদের মধ্যে অন্তত দু'জন ফেসবুকে ঘোষণাও করেছেন 'হাসপাতাল থেকে ফিরে না এলেই ভাল হতো।' তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু লেখেনি।

তার মৃতু্যর পর কি হবে সেটা জানিয়ে বলেন, মরে যাবার পর কোনো ধর্মীয় শেষকৃত্যের প্রশ্নই উঠবে না। আমার দেহ দান করা আছে। বাংলাদেশে মরলে সেখানকার কোনো হাসপাতালে আমার শরীর কাজে লাগানো যেতে পারে। আজও আমি ফেসবুকে আমার সম্পর্কে সনাতনধর্মীয় বঙ্গজদের খিস্তি পড়েছি। এতে আমার মধ্যে কোনো উত্তেজনা জাগেনি। জাগছে এই 'বিদেশটা' ত্যাগ করে ভাষা মতিনের দেশে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া, সেই দেশের কাজে লাগার ইচ্ছে।

তিনি বাংলাদেশের সরকারের কাছে সাহায্য চাইলেও পোস্টের শেষে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি। তিনি বলেন, প্রকাশ্যে সাহায্য ও আশ্রয় চাইছি। এই রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী আমার আবেদনে সাড়া দিয়ে বাংলা খেয়ালকে স্বীকৃতি দিয়েছেন, রাজ্য ক্লাসিকাল মিউজিক কনফারেন্সে আমায় বাংলা খেয়াল গাইতে দিয়েছেন। এ রাজ্যের একজন শিল্পীও কিন্তু সংহতি জানাননি আমার সঙ্গে। যতদিন বেঁচে থাকব শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব, তার পক্ষে থাকব। কেউ যদি পারেন আমায় সাহায্য করুন।

উলেস্নখ্য, সংগীতশিল্পী কবীর সুমনের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৬ মার্চ ১৯৪৯। তিনি একাধারে গায়ক ও গীতিকার। পাশাপাশি কিছুদিন সাংবাদিকতা ও অভিনয়ও করেছেন। ছিলেন সংসদ সদস্যও। ২০০০ সালে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে তিনি তার পুরনো নাম পরিত্যাগ করেন। ১৯৯২ সালে তার 'তোমাকে চাই' অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি বাংলা গানে এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেন। তার রচিত গানের অ্যালবামের সংখ্যা পনেরো। দুই বাংলার তরুণদের কাছে দারুণ জন্মপ্রিয় এই শিল্পী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে