মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শোবিজ অঙ্গনে একুশের চেতনা

আজ মহান একুশে ফেব্রম্নয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। প্রতিবারের মতো এবারও নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে দিনটি। আজ থেকে ৭২ বছর আগে এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্যদিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল আজকের এই ভাষার চেতনা, একুশের চেতনা। সময়ের প্রেক্ষাপট বিচার করলে সেদিনের সঙ্গে আজকের প্রেক্ষাপটে রয়েছে আকাশ-পাতাল তফাত। তফাত আছে সেদিনের গভীর আবেগের সঙ্গে বর্তমানের প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্র-সংস্কৃতির আবেগেরও। যে আবেগের পিঠে জন্ম নিয়েছিল ভাষা আন্দোলন সেটা বর্তমানের এই যন্ত্র-সংস্কৃতির যুগে ইংরেজিপ্রীতির সময়ে বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের মনে সেটা কতটা আপন করে নিতে পারে তাতে একটা অনেক বড় প্রশ্ন চিহ্ন দিতে পারে। সেই গভীর আবেগ এখনো আছে কিনা কিংবা না থাকলেও কতখানি নেই সেটাও একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিতে পারে। দেখা যায় একটি প্রেমের পরিণতির সংসারে বা পারিবারিক পছন্দের সংসারে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে কারও-কারও ক্ষেত্রে মাস কয়েক গেলেই তাদের আবেগ হালকা হয়ে যায় বা মরেও যায় আবার কারও কারও ক্ষেত্রে যতই দিন যায় ততই যেন গভীর থেকে গভীর হতে হতে জীবনের শেষ পর্যন্ত টিঁকে থাকে। এরই নিরিখে বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের হৃদয়ে একুশ, সেই ভাষার প্রতি আবেগ কতটা অন্তরে ও মননে সর্বব্যাপী জুড়ে আছে তারই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন দেশের শোবিজের কয়েকজন গানের ও অভিনয়ের শিল্পীর কাছে- মাতিয়ার রাফায়েল
  ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শোবিজ অঙ্গনে একুশের চেতনা

জয়া আহসান

মডেল, অভিনেত্রী

বরকত, সালাম, রফিক, জব্বার, সালাহউদ্দীন প্রমুখ ছাত্র-জনতার প্রাণের বিনিময়েই আমরা পেয়েছি মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার। তাদের অনুপ্রেরণা ও পথ ধরেই আমরা পৌঁছে যেতে পেরেছি '৭১-এর রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে। বাংলার দামাল মুক্তি সেনারা অকাতরে প্রাণ দিয়ে ছিনিয়ে এনেছে প্রিয় স্বাধীনতা। আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্ত মানুষ। আমি মনে করি, '৫২-এর ভাষা আন্দোলন না হলে '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ হতো না। জাতি হিসেবে বাঙালি ধীরে ধীরে তার অস্তিত্ব হারাত। এ কথা ভেবে আজ গৌরববোধ করি।

আরিফিন শুভ

মডেল, চিত্রনায়ক

বলাই বাহুল্য একুশ আমার কাছে এমন একটা চেতনার নাম যে চেতনা নিজের ভাষাকে ভালোবাসতে উদ্বুদ্ধ করে। ভাষার সঠিক চর্চা করতে অনুপ্রেরণা জোগায়। ভাষার জন্য কোনো জাতি প্রাণ দিতে পারে এটি আয়নার মতো সামনে দাঁড় করায় আমাদের। সর্বোপরি একুশ আমাদের মনে সাহস জোগায় সংগ্রাম-অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের। কথাগুলো শুধু বলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আমি যে পেশাতে আছি, সেখানেও শুদ্ধাভরে ভাষা ব্যবহার করে বাংলা ভাষাকে সবার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা সবসময় থাকে।

সাইমন সাদিক

চিত্রনায়ক

আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া, আমি বাঙালি। বাংলায় কথা বলি। কোটি কোটি শ্রদ্ধা, যারা আমার ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। আমি একুশের চেতনা সর্বদা লালন করি নিজের মধ্যে। আমাদের যা কিছু অর্জন তার সব সাফল্যের সুতিকাগার এই একুশ। এ একুশ না হলে আমাদের পরবর্তী কালে স্বাধীনতাও অর্জিত হত কিনা এ নিয়ে সংশয় আছে। একুশ এবং একাত্তর আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের যেন একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।

বাপ্পী চৌধুরী

চিত্রনায়ক

একুশে ফেব্রম্নয়ারি আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এদিনটিতে আমি ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। একুশ এলেই তার মনের মধ্যে অন্য ধরনের অনুভূতি কাজ করে। আর বাঙালি হিসেবে বাংলা ভাষার জন্য নিজেকে নিয়ে সবসময় গর্ববোধ করি। তবে আমার একটাই দুঃখ, মুক্তিযুদ্ধের ওপর অনেক সিনেমা হলেও এই একুশের চেতনার ওপর খুব একটা ভালো সিনেমা না হওয়া। যে রকম সেই জহির রায়হার 'জীবন থেকে নেওয়া' নামে একটি সিনেমা করেছিলেন। যে একুশ না হলে পরবর্তী আন্দোলনসহ মুক্তিযুদ্ধও হতো কিনা কে জানে।

সিয়াম আহমেদ

মডেল, চিত্রনায়ক

আমাদের জাতির সবচেয়ে গৌরবময় দুটি অধ্যায় ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ। এ বিষয়ে যা জেনেছি, সবই লেখাপড়া করে বা কারও মুখে শুনে। বিশেষ করে ২১ সম্পর্কে আমার জানার পরিধি খুবই কম ছিল। তবে আমার সৌভাগ্য ভাষা আন্দোলনের সিনেমা 'ফাগুন হাওয়ায়'তে অভিনয় করতে পেরেছি। চরিত্রের জন্য আমাকে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানতে হয়েছে। আমি তাতে আবিষ্কার করেছি কী পরিমাণ দেশপ্রেম থাকলে একজন মানুষ নিজের তাজা প্রাণ সঁপে দিতে পারে মৃতু্যর দুয়ারে। ওই সময় সারা শহরে কারফিউ চলছিল, গুলি খাবে জেনেও ভাষাশহীদরা ভাষার দাবিতে মুখর হয়েছিলেন। তারাই সত্যিকার নায়ক, সত্যিকার নেতা।

আব্দুন নূর সজল

মডেল-অভিনেতা

ফেব্রম্নয়ারি এলে আমরা বাংলা ভাষা নিয়ে, একুশ নিয়ে কথা বলি, শ্রদ্ধা জানাই। শুধু প্রভাতফেরিতে অংশগ্রহণ করে এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাংলা ভাষা ও ভাষা শহীদদের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন হয় না। বরং তাদের চেতনাকে বুকে ধারণ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। আকাশ সংস্কৃতির মধ্যে বিলীন না হয়ে, ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলাদেশি সংস্কৃতির লালন ও চর্চা করতে হবে।

আজমেরী হক বাঁধন

মডেল, অভিনেত্রী

অনেক গর্বের ব্যাপার, একুশে ফেব্রম্নয়ারিকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আজকের এই দিনে। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারটা রক্ত দিয়ে অর্জন করেছি বলেই এটা আমাদের জন্য অন্যরকম একটি ব্যাপার। তবে শুধু এক দিনের জন্য না হয়ে বছরের প্রতিটা দিন সচেতনভাবে বাংলা ভাষাকে ভালোবাসা উচিত। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি, অনেকে নিজে বাঙালি হয়েও মাতৃভাষার প্রতি সন্তানকে আগ্রহী করে তোলেন না। সন্তান বাংলা বলতে বা লিখতে পারে না এটা নিয়ে গর্ববোধ করেন।

সানিয়া সুলতানা লিজা

কণ্ঠশিল্পী

আমরা যে দেশকে কতটা ভালোবাসি, তা সবসময় অনুভব না করলে দেশের গান গাইতে গেলে তা টের পাই। অন্য রকম অনুভূতি ভর করে নিজের মধ্যে। আমরা শিল্পীরা তো খুব আবেগপ্রবণ হই, তাই গানের কথার অর্থ আমাদের খুব প্রভাবিত করে। তাই তো দেশের গান গাইতে আমি সবচেয়ে ভালোবাসি। গানের মাধ্যমেই ভাষার গুরুত্ব-তাৎপর্য ভাষার জন্য আমাদের মহান শহীদদের আত্মত্যাগের কথা দর্শক-শ্রোতাদের জানানোর চেষ্টা করি। এটা আমার দায়িত্ব বলেই মনে করি।

সাবিলা নূর

মডেল, অভিনেত্রী

আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই ভাষা। আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই দিনটির স্বীকৃতি পেয়েছি। এটা আমাদের বড় অর্জন। তবে কালের বিপর্যয়ে আমাদের মাতৃভাষার অনেক পরিবর্তন এসেছে। বলতে হয় এর উৎকর্ষতা আমরা অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনেই আমরা অশুদ্ধ বাংলা ব্যবহার করি। কেউ কেউ হয়তো দু-তিনটি ভাষার মিশ্রণের কথা বলে। আমিও মাঝে মাঝে বলে ফেলি।

জাকিয়া বারি মম

মডেল, অভিনেত্রী

আমি আমার চেতনায় একুশ সর্বদাই ধারণ করি। পৃথিবীর কোন দেশে এমনটি ঘটেছে যে ভাষার জন্য যুদ্ধ হয়েছে। আমরা এমনই এক গর্বিত ইতিহাসের উত্তরসুরী। আমাদের পূর্ব প্রজন্ম হিসেবে সেই ভাষা শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, মাতৃভাষার প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা। আর এ শ্রদ্ধা তাদের প্রতি যারা কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয় বরং আন্তরিকতা নিয়ে সারা বছর আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষাকে লালন করছেন জীবনে ও যাপনে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে