সা ক্ষা ৎ কা র

সিনেমায় অনুদানের টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে

শাকিল খান- এক সময়ের ব্যস্ততম অভিনেতা। ১৯৯৭ সালে 'আমার ঘর আমার বেহেশত' সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেন। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত। এরপর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রায় দেড়শ' সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর বহু সিনেমাই ব্যবসা সফল। জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও চলচ্চিত্র থেকে সরে যান এবং নিজেকে রাজনীতিতেই সঁপে দেন। এ অভিনেতার চলমান সময়সহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন...

প্রকাশ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শাকিল খান
দর্শকপ্রিয়তা থাকতেও কেন ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরে গেলেন- কোনো অভিমান ছিল? আমি এমনিতেই অত্যন্ত শক্ত মনের মানুষ। ওসব অভিমানের মতো জলো আবেগের মধ্যে আমি নেই। ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরে যাই একটি কারণে। ওই সময়টায় অশ্লীল সিনেমায় সয়লাব হয়ে গিয়েছিল। আমি প্রায় দেড়শ'টি সিনেমা করেছি। এর মধ্যে একটি সিনেমাকেও কেউ অশ্লীল বলতে পারবে না। আমি আমার ক্যারিয়ারে ওই ময়লা-আবর্জনা জাতীয় সিনেমা রাখতে চাইনি। এফডিসির ওই বাজে পরিবেশের জন্যই চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে যেতে হয় আমাকে। অনেকে বলেন আপনি নাকি শুটিং ফাঁসিয়ে দিতেন? এটা একেবারেই বানোয়াট কথা। আমি সবসময়ই আমার কাজের ব্যাপারে শতভাগ সিনসিয়ার। আমি সবসময়ই ইতিবাচক মানুষ। একজন ইতিবাচক মানুষ হিসেবে আমি কখনোই নেতিবাচক কিছু সহ্য করতে পারি না। যারা আমার সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলেন তাদের আমি ভালো মনে করি না। কাজের অবসরে কী করেন- নিজের অভিনয় জীবন নিয়ে কিছু মনে পড়ে? তখন দেশ-বিদেশের সিনেমা দেখি। নিজের অভিনীত সিনেমাগুলো নতুন করে দেখি। তখন যেন অন্য জগতে চলে যাই। এছাড়া বই পড়ে এবং সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাই। মনে তো পড়েই। কখনো ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার সময়টা মাথায় ঘুরপাক খায়। এই যেমন কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে অনেকগুলো ছবিতে অভিনয় করেছি আমি। ওই সময়ের স্মৃতিগুলো এখনো জীবন্ত হয়ে আছে। রাজ্জাক ভাইকে ছাড়া এখনো এফডিসি শূন্য মনে হয়। তিনি ছিলেন অদ্ভুত এক অভিনয়ের জাদুকর। এমন অভিভাবকের সঙ্গ পাওয়ায় নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। তিনি ছিলেন আমাদের ফিল্মের মাথা। এমন মানুষটা যখন চলে যান, তখন যেন সব শূন্য শূন্য মনে হয়। শুধু কি নায়করাজ রাজ্জাকের কথাই মনে পড়ে? না, আরও অনেকের কথাই মনে পড়ে। ফরীদি ভাই (হুমায়ুন ফরীদি), রাজীব ভাই, জসীম ভাই, কৌতুক অভিনেতা দিলদার ভাই, অনেক নির্মাতা, ফাইট ডিরেক্টর, ড্যান্স ডিরেক্টরদের কথা মনে পড়ে। তাদের সঙ্গে তো আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। তারা আজ নেই, কিন্তু মাঝেমধ্যে যখন মনে পড়ে, তখন খুব কষ্ট লাগে। এখন তো সেটা অতীত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে চলচ্চিত্রে ফিরতে ইচ্ছে করে? এটা ঠিক যে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব সিনেমা হচ্ছে এগুলো খুবই আশা জাগানিয়া। এখন আর সেই অশ্লীল সিনেমা নেই। একটা সুস্থ পরিবেশে ফিরে এসেছে এফডিসি এটা তো খুবই ভালো কথা। ইচ্ছে হয় আবার সিনেমায় ফেরার। তবে নিজেকে যেভাবে ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছি তাতে মনে হয় না এমন ব্যবসায়িক ব্যস্ততার মধ্যে কোনো শুটিংয়ে সময় দিতে পারব। কারণ, ব্যবসার প্রধান দায়িত্ব আমাকেই সামলাতে হয়। তবে তারপরও সিনেমায় ফেরার ইচ্ছে নেই এমন নয়। ভালো কিছু প্রস্তাব এলে অবশ্যই ফেরার চিন্তা করব। এই সময়ের সিনেমা দেখে কী মনে হয়? আমি তো বলব এই সময়ে যেসব সিনেমা মুক্তি পেয়েছে এগুলো আগের চেয়ে ভালো। যদিও আগের মতো দর্শক হচ্ছে না। আমি মনে করি, দর্শকের এখন হলে গিয়ে ছবি দেখা উচিত। আর দর্শক হলে আসবেই বা কেন। আগে সিনেমা হতো অনেক রকম চরিত্র নিয়ে। এখন সিনেমা হয়ে পড়েছে এক-দু'জননির্ভর। দর্শক তো এই এক-দু'জনের অভিনয় দেখে তৃপ্ত হতে পারে না। একটি সিনেমায় অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী থাকতে হবে। তাতে অভিনয়েও একটা প্রতিযোগিতা আসবে। তখন ভালো ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রী বেরিয়ে আসবে। এই আগের চেয়ে ভালো হওয়ার পেছনে অনুদানের সিনেমার অবদান আছে? আমি তা মনে করি না। বরং আমি দেখেছি অনুদানের যেসব সিনেমা বানানো হয়েছে, সেসব সিনেমা একটা দিনও হলে চলেনি। হল থেকেই নামিয়ে দিতে হয়েছে। এই অনুদানের টাকায় বরং যেনতেনভাবে কোনো রকমে একটি ফিল্ম বানিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার একটা প্রবণতাই স্টাবলিশ হয়েছে। আর এই টাকা আত্মসাতেরই ধারাবাহিকতা চলছে। এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমি জানি না এখানে এমন কেউ দায়িত্বে থাকবে কিনা। তবে এটা শক্ত হাতে হ্যান্ডেল করা দরকার।