রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

টিকটকেই ভরসা যেসব শিল্পীদের

মাতিয়ার রাফায়েল
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
টিকটকেই ভরসা যেসব শিল্পীদের

'ভিউ' এখন শোবিজের কাছে মাদকের চেয়েও অনেক ভয়াবহ আসক্তির হয়ে উঠছে দিনকে দিন। বিশেষ করে যাদের কাজ কম বা কাজই পাচ্ছেন না বলতে গেলে, তারা এখন প্রায় সবাই শর্টভিডিও বা টিকটকের মাধ্যমে দেখা দিচ্ছেন তাদের ভক্তদের মাঝে। আর এভাবে তারা দেখে নিচ্ছেন এখনও তাদের ভিউ কেমন। ব্যস, এতেই তাদের তৃপ্তি যদি দেখেন লাখ ছাড়িয়ে গেছে তাদের ভিউ।

দেশের সিনেমা ও হলের সংখ্যা যখন থেকে ক্রমশ কমতে কমতে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে তখন থেকেই তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেকার হতে থাকেন অনেক প্রতিষ্ঠিত অভিনয় শিল্পী। বহু শিল্পী একেবারে বেকার হয়ে পড়েন। তাদের ডাক কমে যায়। কিন্তু যাদের ডিএনএ'তেই মিশে আছে অভিনয় তারা কী করবেন? এভাবেই বেকার সময় কাটিয়ে দেবেন? তাদের জন্যই আশীর্বাদ হয়ে আসে শর্ট ভিডিও। মানুষ যাকে টিকটক বলে জানে। এই টিকটক নিয়েই প্রায় গোটা সময় বিলিয়ে দিচ্ছেন শোবিজে এক সময়ের ব্যস্ত শিল্পীরা। এদের মধ্যে যেমন আছেন মধ্যবয়সি শিল্পী তেমনি আছেন একেবারে তরুণ প্রজন্মের শিল্পীরাও।

টিকটকে ছোট ছোট ভিডিও প্রকাশ করে অনেকেই এখন রীতিমতো পরিচিত তারকা। মিলিয়ন মিলিয়ন ভক্ত তাদের। চলচ্চিত্র, টিভি, সংগীতের অনেক তারকাও আছেন এই অ্যাপে।

ফলে বিতর্কিত টিকটকেও পিছিয়ে নেই শোবিজের নায়িকারা। এদের কারও অভিনয়জীবন চার/পাঁচ দশক। কারও মাত্র কয়েক বছরের। কেউ মঞ্চের, কেউ টেলিভিশনের, কেউবা চলচ্চিত্রের। শুরুটা করোনাকালীন। তখন থেকেই এদের সবাই একপ্রকার বেকার হয়ে পড়েন। একটি কাজ যদি জোটে, আবার মাসের পর মাস বেকার। শোবিজ তারকাদের সেই বেকার সময়েই আশীর্বাদ হয়ে আসে টিকটক।

সম্প্রতি টিকটকে আলোচিত ও জনপ্রিয় ভিডিও নির্মাতাদের শীর্ষ তালিকা প্রকাশ করেছে শর্ট ভিডিও ও বিনোদনের অনলাইন পস্ন্যাটফর্ম টিকটক।

এতে বিনোদন, লাইফস্টাইল, শিক্ষা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতির কনটেন্ট থেকে শুরু করে এমন কিছু নেই যা এখানে নেই; বলা চলে গোটা বিশ্বজুড়েই মানুষ এখন এই টিকটক জ্বরে কাঁপছে। কখনো এটা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় কখনো এটা দর্শককে মুগ্ধও করে। কখনো এটা সামাজিক ভীতির কারণও হয়ে দাঁড়ায়। যেহেতু টিকটকে যথেচ্ছ স্বাধীনতা আছে সে কারণে এর প্রতি বিশ্বের সব মানুষই ঝুঁকছে এখন। প্রতিনিয়তই তারা টিকটকে নতুন নতুন শর্ট ভিডিও ছাড়ছেন। কাউকে খুব ঘন ঘনও ভিডিও ছাড়তে দেখা যায়। তবে সেটা গড়পড়তা বেকারদের জন্যই। কিন্তু যদি দেখা যায় তাদের অনেকেই আছেন যারা শোবিজের ব্যস্ত নায়িকা তারা কখন সময় পান টিকটকে এরকম ঘন ঘন শর্ট ভিডিও ছাড়ার? তার মানে তখন বুঝে নিতে হবে শোবিজের ওই তারকার এখন বেকার সময় যাচ্ছে। সেই ফাঁকেই এখন তারা তাদের বেকার সময়টা চুটিয়ে উপভোগ করছেন টিকটকে শর্ট ভিডিওতে নানা রকমের শর্ট কন্টেন্ট ছেড়ে।

বছর শেষে এর হিসাব মিলাতে গিয়েই দেখা গেল শোবিজের অনেক তারকাই আছেন যারা নিয়মিত টিকটকে শর্ট ভিডিও ছাড়ছেন। আর সেই প্রকাশ হওয়া তালিকায় ভিডিও নির্মাতাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন- ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাফা কবির, মেহজাবিন চৌধুরী, চিত্রনায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম, অনির্বাণ কায়সার, হৃদি শেখ।

ছোটপর্দার সাফা কবিরের এখন ছোটপর্দায় কাজ বলতে গেলে একেবারেই কমে গেছে। শুরুতে তার চাহিদা থাকলেও বর্তমানে নির্মাতাদের তিনি যেন একেবারেই গুরুত্বহীন পড়েছেন। তাই বলে তো বেকার বসে থাকা যায় না! সেই বেকার সময়টিই এখন তিনি পার করছেন টিকটকে শর্ট ভিডিও ছেড়ে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে তিনি গেল বছরে শর্ট ভিডিও ছাড়ায় শীর্ষস্থান দখল করেছেন।

'ফর ইউ' ফিড- এ আলোচিত ছিল তাদের ভিডিওগুলো। যেখানে রমজান প্রস্তুতি শেয়ার করেছেন সাফা কবির। ঈদের প্রস্তুতি, প্রথাগত সৌন্দর্য ও ফ্যাশন তুলে ধরেছেন মেহজাবিন, দুর্গাপূজার উৎসবের লুক শেয়ার করেছেন বিদ্যা সিনহা মিম এবং অনির্বাণ কায়সার তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

বলা চলে, শোবিজের তারকারা এখন নিয়মিত টিকটকের মাধ্যমে দর্শককে বিনা পয়সায় আনন্দের জোয়ারে ভাসাচ্ছেন। তবে এ ক্ষেত্রে পুরুষ তারকাদের থেকে এগিয়ে নারী তারকারা। এসব শর্ট ভিডিওতে তো আসলে পুরুষ তারকাদের দেওয়ারও তেমন কিছু নেই। নারী তারকারা যেমন নিত্যনতুন নিজেদের উপস্থাপন করতে পারেন পুরুষরা সেটা পারেন না। নারীরা যেহেতু নিজেদের ব্যক্তিত্বের অত বালাই নেই তাই তারা যেমন ইচ্ছা তেমন কন্টেন্ট বানাতে পারেন। দিতে পারেন উত্তেজনার খোরাকও।

নবাগত চিত্রনায়িকা প্রার্থনা ফারদিন দীঘি শিশুশিল্পী হিসেবে দারুণ দর্শকপ্রিয় ছিলেন। আর বড় হয়ে নায়িকা হিসেবে অভিনয় শুরুর আগেই তিনি টিকটক দিয়ে আরেক দফা দর্শকের চোখে পড়ার জন্য ক্রিয়াশীল থাকেন।

চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা বছর কয়েক আগে শোবিজ থেকে দূরে থাকায় একদম বেকার হয়ে পড়েছিলেন। সেই বেকার সময়ের জন্য তার জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে টিকটকই। তখন তিনি টিকটক করেই নিজের অস্তিত্বকে সচল রাখতে সক্রিয় থাকেন। এই তারকা বলেন, 'আমরা দর্শককে বিনোদন দিতেই কাজ করি। আর টিকটকের মাধ্যমে দর্শক সত্যি বিনোদিত হয়। নয়তো এত মানুষ এগুলো দেখে কেন? আর অনেকেই আমার টিকটক দেখে তাদের ভালো লাগার কথা জানান। এজন্যই আমার টিকটক করতে ভালো লাগে। হাতে সময় পেলেই টিকটক করি। এতে নিজের সময়টাও মজায় মজায় কেটে যায়।'

এই টিকটকের সঙ্গে যুক্ত আছেন সত্তর-আশি দশকের অঞ্জনা সুলতানা, আশি-নব্বই দশকের ব্যস্ত অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস বা অপু বিশ্বাসও। বয়সের কারণে তাদের টিকটকের কন্টেন্ট অন্যরকম। যতটা না বিনোদনপিয়াসী তার চেয়ে বেশি দর্শনপিয়াসী কন্টেন্ট নিয়েই কাজ করেন তারা।

তবে যেসব শিল্পী বেকার তারাই শুধু টিকটক করছেন- এমন নয়। যারা ব্যস্ত আছেন তাদেরও অনেকে ফুরসৎ পেলে মজার ছলে এই শর্ট ভিডিও বানান। এই টিকটকে যাদের ভিউ বেশি তাদের মধ্যে মাহিয়া মাহী, বিপাশা কবির, ইমরান মাহমুদুল, তৌসিফ, পুজা চেরী, অধরা খান, জিনাত শানু স্বাগতা, সালহা খানম নাদিয়া, অহনা, পড়শী, অমৃতা খান অন্যতম। টিকটক করা প্রসঙ্গে অমৃতা খান বলেন, 'এই মনে করেন ঠ্যালায় পড়ে কিংবা খুশিতে বা ঘুরতে ভালস্নাগে তাই টিকটক করি।' তার এই কথাতেও বোঝা যায় অভিনয়ে কাজের চাপ না থাকাতেই এই বেকার সময়টা পার করতেই তিনি টিকটক করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে