আমি শুধু আমার মতো কাজ করে গেছি :আসাদ
প্রকাশ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
মাতিয়ার রাফায়েল
রাইসুল ইসলাম আসাদ। একাত্তরের গেরিলা যোদ্ধা। এদেশের একজন বরেণ্য অভিনেতা। শুধু ঢাকাই চলচ্চিত্রেই নয়, ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও সুনাম অর্জন করেছেন তিনি। এ পর্যন্ত ৬ বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়া জাতীয় চলচ্চিত্রে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন। পেয়েছেন একুশে পদক। যেখানেই কাজ করেছেন সেখানেই পরিচয় দিয়েছেন নিজের অভিনয় গুণের। একজন অভিনেতা, যিনি মুক্তিযুদ্ধের পর হুট করেই দাঁড়িয়ে যান মঞ্চে অভিনয় করতে এবং শুরুতেই তিনি জানান দিয়ে রাখলেন, 'হঁ্যা. তিনি পারবেন, পারতেই দায়িছেন মঞ্চে।' এমন অভিনেতার এমন গুণটি কি তবে মাতৃগর্ভ থেকেই নিয়ে এসেছিলেন? একি তার সহজাত প্রতিভা? এমন কথায় রাইসুল ইসলাম আসাদ বলেন, 'আমি সেই বাহাত্তর সাল থেকে থিয়েটার বলেন, বেতার নাটক বলেন, টিভি নাটক বলেন কিংবা চলচ্চিত্র- সব মাধ্যমেই তিয়াত্তর সালের মধ্যে একই সঙ্গে এসব কাজ করে ফেলেছি। এমন নয় যে, আগে থিয়েটারের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হয়ে পরে অন্যান্য মাধ্যমে কাজ করেছি। আমি কি কাজ করেছি, তার পরিচয় আমার কর্মের মধ্যেই রয়েছে। আমার কর্ম তো আছেই, সে তো হারিয়ে যায়নি। আমি তো এ সম্পর্কে আমার মুখ দিয়ে বলতে পারি না।'
আগে টিভি নাটকে যারা এসেছেন প্রায় সবাই থিয়েটার হয়ে এসেছেন, এখন কিন্তু সেরকম নয়- এমন কথা প্রসঙ্গে দেশের বরেণ্য অভিনেতা, একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী রাইসুল ইসলাম আসাদ উপরোক্ত জবাবের সঙ্গে আরও যোগ করে বলেন- 'এখন তো এসব শেখার জন্য থিয়েটারের বাইরে অনেক ট্রেনিং সেন্টারও আছে। ইউনিভার্সিটিও আছে। যেখানে এগুলো পড়ানো হয়। আমার কথা হচ্ছে, যে যেই কাজই করুক, তা জেনে-বুঝে শিখে করলে ভালো হয়। এখন সে জানাটা কীভাবে অর্জন করবে তা তার ব্যাপার। একেক জনের একেক রকম হবে। সেজন্য গৎবাধা কোনো ফর্মুলা নেই। সেটা যে কোনো কাজের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। তবে সমস্যাটা হচ্ছে, গৎবাধা শেখা বিষয় দিয়ে কখনোই আগানো যায় না।'
কিন্তু সেটা বর্তমান নাটক বা চলচ্চিত্রে হচ্ছে কিনা- এ বিষয়ে ফের জানতে চাইলে তিনি প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, 'সেটা আমি জানি না। এ বিষয়ে আমি কিচ্ছু বলতে পারব না। আমি এসবের মধ্যে নাইও। গত তিন-চার বছর আমি এসবের বাইরে আছি। আর আমি এসবের কোনো খোঁজখবরও রাখি না। সে কারণে এসব নিয়ে আমি বলতে পারব না।'
সর্বশেষ তার মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ছিল 'মুজিব : একটি জাতির রূপকার'। যে ছবিতে তিনি মওলানা ভাসানী চরিত্রে রূপদান করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনেও একসময়ে তিনি ছিলেন মওলানা ভাসানীর ভক্ত। সেই নিরিখে সিনেমাটিতে তার অভিনয় নিয়ে কথা উঠলে তিনি বলেন, 'আমরা জানি, মওলানা হামিদ খান ভাসানী ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক হিসেবে কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন। তার চরিত্র পর্দায় ফুটিয়ে তোলা নিঃসন্দেহে ভীষণ কঠিন। তবে আমি একজন অভিনেতা। পরিচালক যেভাবে চাইবেন আমি যেভাবেই কাজ করব। তিনি যেখানে যেমন দেখাতে চেয়েছেন আমি সেভাবেই অভিনয়টা দিতে চেষ্টা করেছি। তবে ছাত্রজীবনে আমি পল্টনে ভাসানী সাহেবের ভাষণ শুনেছি। তাকে সামনে থেকে দেখছি। তাই তার সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান আমার ছিল। সেটা আমাকে তার ভূমিকায় অভিনয় করতে সাহায্য করেছে। মোট কথা, এ চরিত্রে অভিনয় করার জন্য মওলানা ভাসানীকে আমি আমার অন্তরে ধারণ করেই অভিনয়টা করার চেষ্টা করেছি।'
ছবির পোস্টারটিতে দেখা গেছে একটি ছবিই স্পষ্ট বাকি সব ঝাঁপসা জনতা- সেখানে কি তবে ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী, ফজলুল হকদের মতো নেতাদেরও সেরকম ঝাঁপসামতো জনতার ভিড়ে ঠেলে দেওয়া হয়েছে যে কারণে তাদের ছবি পোস্টারে ঠাঁই পায়নি? এমন প্রশ্নে কতকটা যেন বিব্রত হয়ে পড়েন রাইসুল ইসলাম আসাদ। তিনি বলেন, 'দেখেন ছবিটার নাম কি? 'বঙ্গবন্ধু : একটি জাতির রূপকার'- সেখানে তো তাকেই হাইলাইট করা হবে। এটা তো বঙ্গবন্ধুর ওপরে ছবি। সেখানে কেন অন্য কিছু চিন্তা করছেন? সেখানে তার ছবিই তো থাকবে! অন্য কারো ছবি কেন থাকবে? ছবিটা যার ওপরে সেখানে তো অন্য কারো ছবি থাকতে পারে না! এখানে ৪০টি ক্যারেক্টার থাকলে তার সব ছবিই থাকবে? পোস্টারে সবাইর ছবি থাকার দরকারই বা কি, ছবির ভেতরে তো তারা আছে। আপনারা কেন কন্ট্রোভার্সি করা ছাড়া অ্যাপ্রিশিয়েট করতে পারেন না? এত সুন্দর একটা ছবি হয়েছে, আরে ভাই আপনারা একে একটু অ্যাপ্রিশিয়েট করেন না। নিজেরা দেখেন এবং সবাইকে ছবিটা দেখতে বলেন। তারপরে কোনো কিছু খারাপ লাগলে সেটা নিয়ে বলেন। কিন্তু এটা কোনো প্রশ্ন হতে পারে- আমি মনে করি না।'
অনেকে দু'তিনশ' চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও একবারও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেননি। সে ক্ষেত্রে আসাদ তার সংক্ষিপ্ত চলচ্চিত্রের মধ্যেই চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন। এমন কৃতিত্বের জন্য তাকে প্রশংসায় ভাসালে একাত্তরের গেরিলা যোদ্ধা আসাদ বলেন, 'না, না আমি কিছু করি নাই। আমি শুধু আমার মতো করে কাজ করে গেছি। সেই কাজের রেজাল্ট হচ্ছে এগুলো। আমি ওগুলোর কোনোটা বানাইও নাই। এগুলো প্রযোজক-পরিচালকরা বানিয়েছেন। নির্মাতারা যেভাবে চেয়েছেন আমি সেভাবেই কাজ করে গেছি। সব কৃতিত্ব নির্মাতাদের। কিন্তু তারপরও তো সেসব চলচ্চিত্র কোনো লাভের মুখ দেখেনি। ম্যাক্সিমাম ছবি ফ্লপ হয়েছে। তাদের কারোরই টাকা-পয়সা ফেরত আসে নাই।'
বর্তমানে যেসব চলচ্চিত্র পরিচালকের জন্য অনুদান দেওয়া হচ্ছে, এগুলোর সব যোগ্য হাতে যাচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে অনুদানে নির্মিত 'ঘুড্ডি' চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা আসাদ বলেন, 'বর্তমানে কারা অনুদান পাচ্ছে, যোগ্য হাতে যাচ্ছে কিনা বা অনুদান পাওয়া ছবিগুলোর কয়টি নির্মিত হয়েছে তাও জানি না। যতদূর জানি, সেগুলোর একটিও এখনো পর্যন্ত বানানো হয়নি। এর মধ্যে কোনোটি হলেও তা আমার দেখা হয়নি। এ বছর বা গত বছর তো অনেকগুলোই অনুদান পেয়েছে। আগে ছবিগুলো হোক, রিলিজ হোক, তারপর তা দেখে বলব ছবিগুলো যোগ্য হাতে গেছে কিনা। অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রেও তো একটা সিস্টেম আছে, তাই না। আগে ছবিগুলো হোক, তারপর সে নিয়ে বলা যাবে।'