শুভ্র দেব- শুধু গায়ক হিসেবেই নয়, ছাত্র হিসেবেও মেধাবী ছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জৈব রসায়নে মাস্টার্স করেছেন। শুভ্র দেব একাধারে একজন গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক এবং কম্পোজার। সব মিলিয়ে ২৭টি অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে তার। বর্তমান কাজসহ তার সঙ্গীত জীবনের নানা বিষয়ে কথা বলেছেন.....
গান-বাজনা কেমন চলছে?
গান তো নিয়মিতই করছি। বিটিভিসহ বিভিন্ন চ্যানেলে নিয়মিতই গান করছি। লাইভে উপস্থিত থাকছি। ফেসবুকেও অনেক সময় পার করছি।
কিন্তু আগের মতো সরব দেখছি না কেন?
আসলে এখন অনেক নতুন নতুন শিল্পী এসেছে। অনেক নতুন নতুন পস্ন্যাটফর্ম এসেছে। এখন তো আগের মতো দুই-চারটি পস্ন্যাটফর্মকেন্দ্রিক গান হচ্ছে না। আগের সেই অডিও যুগও নেই। অ্যালবামের যুগ নেই। যাতে কার কেমন জনপ্রিয়তা ওপেনলি বোঝা যেতে পারে। আসলে স্টেজ শো ছাড়া এখন সবাই একটা খোলসের ভেতর চলে গেছে। প্রযুক্তিগত একটা সিস্টেমে খোলসের মধ্যে থেকেই গান গাইছে ও শুনছে। এরপরও আমার গান থেমে নেই। এখনো সামনে আরও নতুন নতুন গান দিতে আমি স্বত:স্ফূর্ত। এর মধ্যেও আমার গান চলছে।
পেস্ন-ব্যাকেও এখন দেখছি না?
পেস্ন-ব্যাকে সবসময়ই কম গান করেছি। আসলে আমাকে পেস্ন-ব্যাকের জন্য সেভাবে ডাকা হয়নি। কেন ডাকা হয় না, জানি না। হয়ত আমার প্রেজেন্টেশন পেস্ন-ব্যাকের জন্য উপযোগী নয়। সর্বশেষ সৈয়দ মাসুমের 'সুরঞ্জনা' সিনেমায় মিলন খানের কথা ও সুরে কণ্ঠ দিলাম। গানের টাইটেল, 'আমি ভাবছি আর চেয়ে চেয়ে দেখছি'। মিলন খানের কথা ও সুরে আরও কয়েকটি পেস্ন-ব্যাকে গান করার কথা আছে।
অডিওতে কিন্তু আপনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন!
সেই অডিও যুগও তো শেষ হয়ে গেল। এটা ভেবে মাঝে মাঝে খুবই খারাপ লাগে। 'ককটেল' নামে সর্বশেষ অ্যালবামটি করি ২০১৫ সালে। এখন তো সব অন লাইনেই চলছে। আমি সবসময়ই ভালো কথা ও সুরের গান করে আসছি। আহমেদ ইমতিয়াজ, আলম খান, শেখ সাদি খান, আলাউদ্দিন, আনোয়ার পারভেজ- এখন তরুণদের সঙ্গেও গান করছি। যারা ভালো মিউজিশিয়ান।
এখন তো গানের চেয়ে ভিডিওকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়-
এটা ঠিক নয়, ভিডিওর আগে অডিওকেই গুরুত্ব দিতে হবে। যদিও এখন অডিও ভালো না হলেও ভিডিও দিয়ে সেটা পার পাওয়ার চেষ্টা করেন অনেকেই এবং তারাই গানের চেয়ে ভিডিওকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এটাকে আমি সমর্থন করি না। গানের অডিও আগে হতে হবে। বাদ বাকি নিয়ে সব পরে ভাবতে হবে।
মেধাবী স্টুডেন্ট ছিলেন। গানে কীভাবে এলেন?
আমি খুব ছোটবেলা থেকেই আমার বড় বোনের গানের সঙ্গে তবলা বাজাতাম। নতুন কুড়িতেও ছিলাম। সেখানেও তবলাই বাজাতাম। মজার ব্যাপার হলো- জীবনে প্রথম জাতীয় পুরস্কার পাই তবলা বাজিয়ে। নতুন কুড়ির মাধ্যমে জাতীয় শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতায় আমি তবলা বাজানোতে প্রথম হয়েছিলাম। এরপর আমার গান শুনে আমাকে বদলি করা হয়। অষ্টম শ্রেণিতে থাকতে আমি সিলেটের একটা ব্যান্ডের ভোকালিস্ট ছিলাম। সেটার নাম ছিল সমস্বর। এই তো এভাবেই গানের জগতে এসে গেলাম।
গানে আপনার টার্নিং পয়েন্ট কোনটি?
১৯৮৪ সালের ঘটনা। তখন আমি ১৭ বছরের। মাহফুজুর রহমানের লেখা 'আমি হ্যামিলনের সেই বাঁশিওয়ালা' গানটি সুর করার পর তাহের ভাই আমাকে ফোন করে বললেন, শুভ্র তুমি আমার বাসায় এসো। ফোন পেয়ে ছুটে গেলাম তার বাসায়। তিনি গানটি নিয়ে আমার সঙ্গে বসলেন। আমি গানটি শিখলাম। এরপর ফেরদৌস ওয়াহিদ ভাইয়ের স্টুডিওতে গানটি রেকর্ডিং করা হয়। এই গানটিই ছিল আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।
সাম্প্রতিক গান কেমন লাগে?
আসলে একটা ভালো গান প্রকাশ করতে হলে টিমওয়ার্ক লাগে। এখন তো সেই টিমওয়ার্কটি নেই। কেউ কি আর নিজের ভুলটা নিজে ধরতে পারে। ভালোটাও তো ধরতে পারে না। এই টিমলেস যেসব গান হচ্ছে, সেগুলো অত্যন্ত লঘু। মেলোডির গভীরতা কম। আসলে এখন নকল কথা ও সুরের গানই বেশি হচ্ছে। গত দুই দশক ধরেই এটা হচ্ছে। এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, গানের কথা খুবই দুর্বল। এরপরও এর মধ্যে ন্যান্সি, পড়সী, তৌসিফ ও পুলক অধিকারী ভালো করছে।