শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

অভিনয়ের তারকারাও নেপথ্য কণ্ঠে

মাতিয়ার রাফায়েল
  ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অভিনয়ের তারকারাও নেপথ্য কণ্ঠে

নাটক হোক আর সিনেমাই হোক এটা যদি শুধু শুটিংয়ের ওপরই তৈরি হতো তাহলে সেটা হাস্যকর নির্বাক যুগের মূকাভিনয়সুলভ বিনোদন ছাড়া কিছুই খুঁজে পাওয়া যেত না। আজকাল শুধু চলচ্চিত্র কিংবা বিজ্ঞাপনচিত্রই নয়- ডাবিং হচ্ছে নাটকেরও।

ডাবিং বলতে

সাধারণভাবে যেমন আন্দাজ করা হয় ডায়ালগ ব্যবহার করার নামই ডাবিং, বিষয়টি সেরকম নয়। অর্থাৎ শুধু সংলাপ ব্যবহার করাই ডাবিং নয়। ধারণ করা চিত্রের সঙ্গে শব্দ যোগ করার পুরো প্রক্রিয়াটিই ডাবিং। ফলে চিত্রের সঙ্গে যথাযথভাবে শব্দ ব্যবহার না করা গেলে সেটা ডাবিং হয় না।

পর্দার মধ্য দিয়ে আকাশে যে বিজলি চমকানোর দৃশ্য দেখানো হয় তার সঙ্গে তার শব্দটির ব্যবহার করার নামই ডাবিং। পর্দায় যে বন্দুক তাক করানোর দৃশ্য দেখা যায় তার সঙ্গে সেই বন্দুকের গুলি ছোড়ার যে শব্দ হয় সেই শব্দ যোগ করার নামই ডাবিং। অর্থাৎ যে শব্দ কানে শোনানোর কাজ হয় সেটার ব্যবহারই ডাবিং।

তবে সবসময় এসব শব্দ বাস্তবে ধারণ করা সম্ভব হয় না। বিশ্বের প্রায় সব চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে এই শব্দ কৃত্রিমভাবে তৈরির জন্য শিল্পীগোষ্ঠী আছে। হাঁস-মুরগি, বাঘ-মহিষ থেকে শুরু করে নদীর ঢেউয়ের শব্দ পর্যন্ত তারা মুখ দিয়ে বের করেন। যদিও ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে সচরাচর স্টক সাউন্ডই বেশি ব্যবহার করা হয়। বর্তমান ডিজিটাল প্রযুক্তির বদৌলতে এটা পাওয়া এখন একেবারেই মামুলি বিষয়। তবুও যারা ডাবিংয়ের সঙ্গে যুক্ত তাদের গুরুত্ব একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। এখনো অনেকে এই ডাবিংয়ের পেশায় যুক্ত থেকে মোটামুটি ভালো আয় রোজগার করছেন। এই ডাবিংয়ের কাজটির সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন ইন্ডাস্ট্রিতে তারা ডাবিং অ্যাক্টর বা ডাবিংশিল্পী হিসেবেই পরিচিত। কণ্ঠ দিয়েই মূলত তারা অভিনয়ের কাজটি সারেন।

অনেকেই এই ডাবিংয়ের সঙ্গে যুক্ত থেকে বেশ ভালোই খ্যাতি পেয়েছেন। তার মধ্যে আহমেদ রেজা রুবেল অন্যতম। বিশেষ করে বিদেশি সিরিয়াল নাটকের বাংলা ভার্সনের ডাবিংয়ের ক্ষেত্রে তাকে অপ্রতিদ্বন্দ্বিই বলা যায়।

এছাড়া আরও অনেকে আছেন যারা বিদেশি সিরিয়াল নাটকে বাংলায় কণ্ঠ দিয়ে আসছেন। বিশেষ করে চলচ্চিত্রে বা নাটকে নতুন শিল্পী বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের কণ্ঠের জন্য পেশাদার শিল্পীরাই কণ্ঠ দিয়েছেন। শাবনাজ, শাবনূর, পপিদের প্রথম দিককার ছবিতে কণ্ঠ দিয়েছেন আফসানা মিমি, তারিন ও ঈশিতার মতো টিভি অভিনেত্রীরা। বলিউডের ক্যাটরিনা কাইফ, রানী মুখার্জি, প্রিয়াংকা চোপড়ারাও একটা সময়ে ডাবিং শিল্পী নিয়ে কাজ করেছেন।

বাংলাদেশে যারা ডাবিং শিল্পী হিসেবে কাজ করছেন তাদের প্রায় সবাই অ্যানিমেশন ও বিদেশি সিরিয়ালে কণ্ঠ দিয়ে থাকেন।

তনিমা আহমেদ, শেখ ডেভিড, শতাব্দী ওয়াদুদ, দীপক সুমন, আনোয়ার শাহী, ইভান সাইর, শর্মীমালা, সাইমন তারিক, মেরিনা আফরোজ, ফিরোজ আলমসহ আরও অনেকে এই পেশায় নিয়োজিত আছেন।

একসময়ে যেমন আফসানা মিমি, তারিন জাহান, ঈশিতারা অভিনয়ের পাশাপাশি ডাবিংয়ের কাজও চালিয়ে গেছেন

তেমনি এখনো অনেক শিল্পীরা এর সঙ্গে নিয়মিত বা কালেভদ্রে যুক্ত হচ্ছেন। বিদেশি সিরিয়াল ও সিনেমাতে কাজ করছেন। যেমন- দক্ষিণ ভারতীয় সুপারস্টার আলস্নু অর্জুনের 'পুষ্পা : দ্য রাইজ' সিনেমা বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিল ২০২১ সালে। এটা যখন ওটিটি পস্ন্যাটফর্মের জন্য বাংলা ভাষায় ডাবিং করা হয় তখন সিনেমাটির পুষ্পা চরিত্রে অভিনয় করা আলস্নু অর্জুনের চরিত্রে বাংলা ভাষার ডাবিংয়ে কণ্ঠ দিয়েছেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত অভিনেতা শরিফুল রাজ। এ প্রসঙ্গে শরিফুল রাজ বলেন, 'এই কাজটা সত্যি অসাধারণ একটা নতুন অভিজ্ঞতা আমার জন্য। নতুন বিষয়ের মুখোমুখি হতে পছন্দ সবসময়। অন্য দেশের একজন নায়কের মুখে আমার কণ্ঠের সংলাপ বলা রোমাঞ্চকর একটা স্বাদ দিচ্ছে।'

এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ান আলোচিত তারকা লি মিন-হো'র বাংলা ডাবিংয়ে কণ্ঠ দিয়েছেন ছোট পর্দার অভিনেতা আবদুন নূর সজল। লি মিন-হো অভিনীত 'লিজেন্ড অব দ্য বস্নু সি' নামে এই ড্রামা সিরিজটি নেটফ্লিক্সের জন্য নির্মিত হলেও বাংলায় ডাবিং করা হয় বায়োস্কোপের জন্য।

এছাড়া ডাবিংশিল্পী হিসেবে নাম লেখিয়েছেন তাসনিয়া ফারিণও। কণ্ঠ দিয়েছেন এক বিদেশি সিরিয়ালের আলোচিত চরিত্রে। কোরিয়ান 'লিজেন্ড অব দ্য বস্নু সি' নামে কোরিয়ান সিরিজের অভিনেত্রী জুন জি-হিউনের বাংলা ডাবিংয়ে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। তাসনিয়া ফারিণ বলেন, 'ভয়েস অ্যাক্টর হিসেবে এটা আমার প্রথমবার কাজ। এতদিন তো অনেক কিছুই করেছি। কিন্তু ভয়েস অ্যাক্টিংটা করা হয়নি। তাই নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবেই এটা করা। আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে।'

হলিউডের ভৌতিক সিনেমা 'রেসিডেন্ট এভিল'-এর বাংলা ডাবিং ভার্সনে অ্যালিস চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রাভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম। কণ্ঠশিল্পী হিসেবে এটাই তার প্রথম কাজ। তিনি বলেন, 'জীবনের প্রথম পেশাগত ডাব করা! এর আগে নিজের চরিত্রে ডাব করেছি। কিন্তু অন্য একটা চরিত্রে তার মতো করে, তার আবেগ ধারণ করে, চোখের চাহনি ও শরীরের ভাষা বুঝে ডাব করাটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল।' শুধু কণ্ঠ দিলেও চরিত্রটি নিজের মধ্যে ধারণ করতে হয়েছে বলে জানান এই অভিনেত্রী।

'রেসিডেন্ট এভিল'-এর বাংলা ডাবিং ভার্সনটি পরিচালনা করছেন খালিদ হাসান অভি। 'রেসিডেন্ট এভিল' সিরিজের প্রথম সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০০২ সালের ১৫ মার্চ। এটি নির্মাণ করেছিলেন পল ডবিস্নউ এস অ্যান্ডারসন। সিনেমাটির অ্যালিস চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মার্কিন অভিনেত্রী মিলা জভোভিচ। তার চরিত্রেই কণ্ঠ দেন মম।

হুইলের বিজ্ঞাপনে সালমান খানের ঠোঁটে শোনা যায় শতাব্দী ওয়াদুদের কণ্ঠ। বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি বিদেশি সিরিয়ালেও কণ্ঠ দেন শতাব্দী।

অভিনয়ে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন শর্মীমালা। অপু বিশ্বাসের ছয়টি সিনেমার ডাবিং শর্মীমালা করেছেন। নাট্যাভিনয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনেও নিয়মিত ভয়েস দেন।

শর্মীমালা বলেন, 'পালাকার দলের প্রধান আমিনুর রহমান মুকুল ভাই প্রথমে সামাজিক সচেতনতামূলক একটি বিজ্ঞাপনের জন্য ডেকেছিলেন। তিনিই আমাকে সিনেমায় কণ্ঠ দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেন। এভাবে প্রথম ভয়েস দেওয়া শুরু। এটাও একটা আর্ট। রপ্ত করতে হয়।'

তনিমা বলেন, 'পর্দার সামনে বসে নায়িকার অ্যাকশন-রিঅ্যাকশন দেখেই কণ্ঠের ভিন্নতা চলে আসে। মনে হয় আমিই অভিনয় করছি। প্রথমদিকে কষ্ট হলেও এখনতো উপভোগই করছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে