দেশীয় চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের নাম রাজ্জাক। 'নায়করাজ' খ্যাতি পাওয়া দুই বাংলার কিংবদন্তি এই অভিনেতার আজ জন্মদিন। স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত এই তারকা বেঁচে থাকলে আজ ৮২ বছরে পা রাখতেন। ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি নায়করাজ রাজ্জাক কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট ৭৫ বছর বয়সে তিনি ঢাকায় মৃতু্যবরণ করেন। নায়করাজের জন্মদিনে প্রতিবারের মতো তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজকের ছোট ছেলে চিত্রনায়ক খালিদ হোসেন সম্রাট জানান, বছরের এই বিশেষ দিনটিতে তিনি রাজধানীর বনানী কবরস্থানে যান ফজরের নামাজের পরপরই। বাবার কবরের পাশে কিছুটা সময় কাটান এবং দোয়া-দরুদ পাঠ করেন। সম্রাট জানান, এটা তিনি নিয়মিতই করার চেষ্টা করেন। চিত্রনায়ক রাজ্জাক গুলশানের আজাদ মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তেন। তাই তার জন্ম-মৃতু্যদিনে এ মসজিদে দোয়া-দরুদ, মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করা হয় এবং সবাইকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়ে আসছে। সেইসঙ্গে নায়করাজের বাসায়ও পারিবারিক মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
সম্রাট বলেন, 'সত্যি বলতে কী আব্বা চলে গেছেন ছয় বছর হলো। কিন্তু সারাদেশের মানুষ আব্বাকে এখনো এত ভালোবাসেন, শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন তা চলতে গিয়ে আমি অনুভব করি, প্রমাণও পাই। অনেকের সঙ্গে দেখা হলে আব্বাকে নিয়ে গল্প করেন। তার সন্তান হিসেবে আমি গর্ববোধ করি। আর আজকের দিনটিতে অর্থাৎ তার জন্মদিনে তাকে বিশেষভাবে মনে করেন, বিশেষত যারা তাকে মন থেকে অনেক ভালোবাসতেন, শ্রদ্ধা করতেন। আব্বার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে পারিবারিকভাবে আজ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর রাতে পরিবারের কাছের মানুষের সঙ্গে দেখা হবে, যেখানে আব্বাকে নিয়েই আসলে গল্প আড্ডা হয়ে থাকে। সবার কাছে আব্বার জন্য দোয়া চাই আলস্নাহ যেন আমার আব্বাকে বেহেস্ত নসিব করেন।'
অন্যদিকে নায়করাজ রাজ্জাকের জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করছে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল।
চলচ্চিত্রে নায়ক হওয়ার অদম্য স্বপ্ন ও ইচ্ছা নিয়ে রাজ্জাক ১৯৫৯ সালে ভারতের মুম্বাইয়ের ফিল্মালয়ে সিনেমার ওপর পড়াশোনা ও ডিপেস্নামা করেন রাজ্জাক। এরপর কলকাতায় ফিরে এসে শিলালিপি ও আরও একটি সিনেমায় অভিনয় করেন। তবে ১৯৬৪ সালে কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন নায়করাজ। জহির রায়হান পরিচালিত 'বেহুলা' সিনেমাতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে সুচন্দার বিপরীতে নায়ক হিসেবে তার অভিষেক হয়। নায়ক হিসেবে তার শেষ সিনেমা ছিল শফিকুর রহমান পরিচালিত 'মালামতি'। এতে তার বিপরীতে ছিলেন নূতন। ১৯৭৭ সালে নায়ক রাজ প্রথম 'অনন্ত প্রেম' সিনেমাটি পরিচালনা করেন। সিনেমায় নায়করাজের বিপরীতে ছিলেন ববিতা। তার পরিচালনার সর্বশেষ সিনেমা ছিল 'আয়না কাহিনী'। এতে সম্রাট ও কেয়া অভিনয় করেছিলেন। নায়করাজ অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা হচ্ছে বাপ্পারাজ পরিচালিত 'কার্তুজ'।
নায়করাজ রাজ্জাক অভিনীত উলেস্নখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে বেহুলা, আবির্ভাব, এতটুকু আশা, ময়নামতি, নীল আকাশের নীচে, জীবন থেকে নেয়া, পীচঢালা পথ, নাচের পুতুল, অবুঝ মন, রংবাজ, আলোর মিছিল, বেঈমান, বাঁদী থেকে বেগম, অনন্ত প্রেম, অশিক্ষিত, বড় ভালো লোক ছিল, ছুটির ঘণ্টা, অভিযান, চন্দ্রনাথ, আয়না কাহিনী প্রভৃতি। চলচ্চিত্রের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি অভিনয় ছাড়াও পরিচালনা করেছেন ১৬টি চলচ্চিত্র। গড়ে তোলেন নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রাজলক্ষ্ণী প্রোডাকশন। ২০১৫ সালে অর্জন করেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার। ২০১৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। তিনি পাঁচবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট মৃতু্যবরণ করেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি এই চলচ্চিত্রব্যক্তিত্ব।