শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

মাঠে ফিরছে কনসার্ট

মাতিয়ার রাফায়েল
  ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস

এমনিতেই শীতের দু'মাস চলে গেল নির্বাচনী ডামাডোলের মধ্যে। যেটা ছিল দেশের কনসার্ট মৌসুমের চরম সময়। যাকে বলে পিক টাইম। কিন্তু তাই বলে এ বছরটা একেবারেই কনসার্টবিহীন মাঠে মারা যাবে! না, সে রকমটি হচ্ছে না। এরই মধ্যে সারাদেশ এখন শীতে কাঁপছে। এমন শীতকে গরম করে দেওয়ার জন্য কনসার্টের চেয়ে ভালো উপাদান কী আর আছে? এই চলতি জানুয়ারিরই ১৯ তারিখ আবার মঞ্চে উঠতে যাচ্ছেন নগর বাউলখ্যাত জেমস। মঞ্চের এই অনুষ্ঠানটি হতে যাচ্ছে ৩১তম বিসিএস ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে। ওইদিন বিকালে এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের সামনে জনপ্রিয় সব গান পরিবেশন করবেন দেশের বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। তাদের উদ্যোগেই একটা বড় পরিসরে গড়াচ্ছে আবার কনসার্ট। এ ছাড়া ইতোমধ্যে আরও বেশকিছু কনসার্টের আয়োজনের খবর আসতে শুরু করেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। যেখানে থাকে দেশের ছোট-বড় সব ব্যান্ডদল। মঞ্চ উন্মাতাল করা হেভি মিউজিক, যেটা হতে পারত বছরের শুরুতেই সেটা যদি বছরের প্রথম মাসের মাঝামাঝি থেকেও, তাতেও বা মন্দ কি।

প্রসঙ্গত, গেল বছরের নভেম্বরে বড় পরিসরে কনসার্ট হলেও এরপর থেকে প্রশাসনের অনুমতি না মেলাতে আয়োজকরা আর কোনো কনসার্টের আয়োজন করতে পারেনি। এখন যেহেতু প্রশাসনের দিক থেকে তেমন কোনো ঝামেলা নেই তাই এখন থেকেই বাকি যতদিন শীতের সময়টা থাকছে তার মধ্যেই আয়োজকরা আবার তাদের গা গরম করে নিতে চাইছেন বিভিন্ন জায়গায় কনসার্টের আয়োজন করে।

তবে এ অনুষ্ঠানে জেমস যেসব গান গাইবেন সবই তার আগের গাওয়া গান। নতুন কোনো গান নয়। জেমস দীর্ঘদিন ধরেই নতুন গান তেমন দিতে পারছেন না। আবার এখন থেকে যেসব গান নতুন হিসেবে গাইবেন সেটাও এখন আর যেখানে-সেখানে গাইতে পারবেন না বলে বসুন্ধরার সঙ্গে চুক্তি করে রেখেছেন। ফলে বড় পরিসরে গাইলেও এসব গানই তার আগের গানই।

তবে ১৯ তারিখের আগেও কনসার্ট হয়ে গেছে নির্বাচনোত্তর সময়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু স্মারক ভাস্কর্য চত্বরে ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় 'কনসার্ট ফর ফাইটার্স'-এর আয়োজন। উলেস্নখ্য, ১১ বছর পর একই শিরোনামে কনসার্টটি হয়। চ্যারাটিমূলক এ আয়োজনটি করা হয় গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল আদিবাসী সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। কনসার্ট উৎসর্গ করা হয় সঙ্গীতশিল্পী-সাংবাদিক প্রয়াত সঞ্জীব চৌধুরীকে।

গেল বছর ১৬ নভেম্বর থেকে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ শিরোনোমে কনসার্টটি আয়োজন করে আসছে ঢাকা, জগন্নাথ ও বুয়েটের বেশ কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মী। এই টু্যরিং কনসার্ট হয়েছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট ও জগন্নাথসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

মূলত ১৬ নভেম্বর টিএসসি থেকে এ ভ্রাম্যমাণ কনসার্ট শুরু হয়। যার শেষ কনসার্টটিও হয় ওই একই জায়গায়। এই কনসার্টে দেশের বিভিন্ন নামে ব্যান্ডদল তাদের গান পরিবেশনা করে এবং এর বেশিরভাগই তরুণ শিল্পীদের নিয়ে গড়া ব্যান্ডদল।

তাদের মধ্যে মাকসুদ ও ঢাকা, মেঘদল, সহজিয়া, মাদল, শহরতলী, সমগীত, চিৎকার, মনোসরণি, লীলা, গানপোকা ও আদিবাসী মেয়েদের ব্যান্ড এফ-মাইনর।

হেভি মিউজিক বা ব্যান্ড গানের সঙ্গে এ দেশের মানুষের পরিচয় খুব বেশি দিনের নয়। অনেকে বলেন, পপসম্রাট আজম খানের হাত ধরেই এর যাত্রা শুরু। অনেকে চট্টগ্রামের 'জিংগা শিল্পগোষ্ঠী'কে দেশের প্রথম ব্যান্ডদল বলেন। যার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাকব ডায়াজ। কেউ 'লাইটনিংস'কেও প্রথম ব্যান্ড বলে দাবি করেন। তবে এ দেশে ব্যান্ডের ইতিহাস ৫০ বছরের বেশি নয়। যাত্রার শুরু থেকেই এটা তরুণহৃদয়ে যথেষ্ঠ সাড়া পেয়েই আবির্ভূত হয়। তবে যিনিই এই ব্যান্ড গানের গোড়াপত্তন করুন না কেন এটা ঠিক যে, আজম খানের হাত ধরেই এ দেশে ব্যান্ডসঙ্গীত জনপ্রিয়তা পায়। সেজন্যই তাকে পপগানের গুরু বলা হয়ে থাকে। মূলত পপগানের ভক্ত তরুণরাই। আবার অসংখ্য তরুণ ছিলেন যারা আজম খানের খুবই ভক্ত।

চিরকুটের শারমিন সুলতানা সুমি বলেন, 'বাংলাদেশে এখন একটি সাধারণ কনসার্টে ৪০-৫০ হাজার লোক হয়? বড় কনসার্টে দুই লাখ, তিন লাখ? এভাবেই ব্যান্ড সঙ্গীত তারুণ্যকে এক করছে।'

তার মানে ব্যান্ডের গান চির তরুণ ও তারুণ্যের গান। তাইতো এই কনসার্ট করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে শীতের মৌসুমকেই। যে শীতকে গরম করতে হাজার হাজার তরুণ একটি কনসার্টের সামনে জড়ো হয়।

অথচ এই ব্যান্ডসঙ্গীত নিয়েই এক সময় মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা প্রবল ছিল? এখনো কম-বেশি আছে? আর পিছনে শক্ত যুক্তিও আছে। যেমন তাদের মতে, এটা দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। একই গান বারবার গাওয়া হয়। এই গান হেভি মিউজিকের ওপরই টিকে থাকার একমাত্র ভরসা। এটা দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে না গেলেও সময়ের তরুণদের সঙ্গে যায়। আবার প্রৌঢ় বয়সে সেটাই তাদের কাছে মরে যায়। তখন আর তাদের কাছে এই গান ভালো লাগে না।

খ্যাতিমান ব্যান্ড সঙ্গীত শিল্পী মাকসুদ উল হক বলেন, 'বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীত নানা ধরনের সমালোচনার মুখেই এগিয়ে গেছে? সবকিছুই পরিবর্তন হয়? শব্দের মানচিত্রও পাল্টায়। শব্দের ধরনও পাল্টায়? তাই হেভি মিউজিকে হয়তো কেউ অনভ্যস্ত? তাই সমালোচনাও আসে? কিন্তু সারবিশ্বে সঙ্গীতে যে পরিবর্তন আসছে, আমাদের তরুণরা সেই পরিবর্তনকে দেখবে না, ধারণ করবে না, তা তো হয় না?'

মাইলসের শাফিন আহমেদ বলেন, 'সঙ্গীত জগৎটা অত্যন্ত সৃজনশীল একটা মাধ্যম। যেখানে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন সেভাবেই পরিবর্তিত হবে। নির্দিষ্ট একটি গন্ডিতেই আটকে থাকতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই।' তবে এটা খুব সৃজনশীলও হতে পারছে না। নয়তো এর শ্রোতা শুধু তরুণরাই থাকত না। যতই পরিবর্তিত হোক প্রবীণ শিল্পীর কণ্ঠে এটা তরুণ শ্রোতা শুনছে না।

এ সম্পর্কে একজন তরুণী গায়িকা বলেন, 'আসলে এই গান গাইতে প্রচুর অ্যানার্জিরও দরকার হয়। প্রবীণ শিল্পীতে এটা কম থাকে বলেই একবারের বেশি দুবার গাইতে পারেন না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে