নতুন বছরে নতুন কাজের খবর কেমন?
নতুন কাজের মধ্যে আছে তিনটি গল্পে সাজানো 'জীবন জুয়া' নামের অ্যান্থোলজি সিনেমা নির্মাণ করছেন তিন নির্মাতা। তারা হলেন- আবুল খায়ের চাঁদ, আশুতোষ সুজন ও ইফতেখার মাহমুদ ওসিন। এর মধ্যে 'ফিল্ম কানন' নামের একটি সিনেমায় আছি আমি। সিনেমাপাগল মানুষের গল্প নিয়ে তৈরি সিনেমাটির পরিচালনায় আছেন আশুতোষ সুজন। সিনেমাটিতে আমি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছি।
সিনেমার গল্পটি কেমন?
মানুষের জীবনে তো নানা রকমের স্বপ্ন থাকে। কেউ স্বপ্ন দেখে শিল্পপতি হবে, কেউ স্বপ্ন দেখে খ্যাতিমান খেলোয়াড় হবে। এই সিনেমার বজলু নামের লোকটা সারা জীবন স্বপ্ন দেখেছে, সে নায়ক হবে। সেই স্বপ্নটা তার কীভাবে পূরণ হবে, সে জানে না। কিন্তু নিজের স্বপ্নটা বুকে নিয়ে সে ঠিকই পথে নামে নায়ক হওয়ার আশায়। এই স্বপ্নের পেছনে ছুটতে ছুটতে বয়স হয়ে গেলেও সে এখনো স্বপ্ন দেখে। অতি সাধারণ একটা গল্পে বিরাট এক তাৎপর্য লুকিয়ে আছে।
\হ
ক্যারিয়ারে ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেন- এতো অনেক বড় স্বীকৃতি!
আমি মনে করি, যে কোনো ভালো কাজের সঙ্গে থাকলে তার স্বীকৃতি আসবেই। ভালো রেজাল্ট আসবেই। আমি তো উদ্দেশ্যবিহীনভাবের্ যানডম চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত নই। মেইনস্টিমের চলচ্চিত্র বলতে বোঝায়, সে ধরনের চলচ্চিত্রেও অভিনয় করি না। আমি একেবারে সেই চলচ্চিত্রেই অভিনয় করে থাকি, যে চলচ্চিত্র আমাদের প্রাত্যহিক জীবন-যাপনের সঙ্গে খাপ খায়। যেগুলো আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে যায়। যেগুলোকে জীবনঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্র বলা যায়। এগুলোকে আমি যেমন আর্টফিল্ম বলব, না বিকল্প চলচ্চিত্রও বলব না। আমি বলব, যে চলচ্চিত্র আমাদের হওয়া উচিত আমরা চেষ্টা করি সে ধরনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে যে চলচ্চিত্র আমাদের হওয়া উচিত। আমি মনে করি যে, এটাই হওয়া উচিত আমাদের চলচ্চিত্রে।
চলচ্চিত্রে একটু দেরিতে এসেছেন- আরও আগে আসলে কী ভালো হতো?
এমন নয় যে, আমাকে আগে কেউ ডাকেনি। এমন নয়; চলচ্চিত্রে আমার কাছে একটু দেরিতে প্রস্তাব এসেছে। চলচ্চিত্রে আমার কাছে আরও অনেক আগেই প্রস্তাব আসে। কিন্তু তখন মেইনস্টিমের যেসব চলচ্চিত্রে কাজের প্রস্তাব আসে, সে কাজের সঙ্গে তো আমি থাকতে পারি না। ওই ছবি তো আমি করব না। আমি তো প্রস্তাব পেয়েছি অনেক আগেই। তখন টেলিভিশনে সিনিয়র অনেক সেলিব্রিটি অভিনয়শিল্পী ছিলেন, যারা খুবই নিম্নমানের সিনেমায় অভিনয় করতেন। এখন দেখা গেল, আপনি আর্টিস্ট বড়, কিন্তু কাজ করছেন ছোট। তখন আমাকেও নানাভাবে প্রস্তাব দেওয়া হতো। আমি তখন বলতাম, যে চলচ্চিত্র আমার পরিবার-পরিজন একসঙ্গে বসে দেখতে পারবে না, সে চলচ্চিত্রে তো আমি অভিনয় করতে পারি না। সে কারণেই করিনি।
এখন ভালো কাজ হয় বলেই নিজের সেরাটা দিতে পারছেন?
এটাই, আমরা ভালো কাজ করতে চাই। ভালো কাজকে প্যাট্রোনাইজ করতে চাই। শুধু ভালো কাজ করতে চাই তাই নয়, সে জন্য সব জায়গা থেকে পৃষ্ঠপোষকতাও চাই।
আমরা তো ভালো সিনেমা করতে গিয়ে সেক্রিফাইসও করি- তাই না! আমরা তো বেশি টাকা নিয়ে বড় শিল্পী হতে চাই না। আমাদের এখানে একটা ব্যাপার প্রচলিত আছে, যিনি যত বেশি টাকা পান, তিনি তত বড় শিল্পী। সেটা তো আমাদের কাছে বড় কিছু না- আমরা ভালো কাজ করি, ভালো কাজ করতে চাই- মানুষের ভালোবাসা চাই।
আর্টফিল্ম বা বিকল্প চলচ্চিত্রের বাইরেই বরং বেশি জীবনঘনিষ্ঠ অভিনয় করা যায়- তাই তো!
হঁ্যা, আমি মনে করি যে, আমাদের যে প্রান্তিক মানুষ আছে, তাদের যে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা আছে, আমাদের যে মধ্যবিত্তের গল্প আছে, সব ধরনের যে গল্প আছে, সেগুলোই উঠে আসা উচিত আমাদের চলচ্চিত্রে। আর সেটা এখন উঠে আসছেও। নট অনলি বাংলাদেশ, পৃথিবীতেই এটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে।
নানান ধরনের কাজ হচ্ছে এবং নির্মাতাদের মধ্যে নতুন করে গল্প বলার চেষ্টা আসছে। নতুন ধরনের ফর্ম তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে গল্পকাররা,
চলচ্চিত্রকাররা নতুন করে গল্প বলার চেষ্টা করছে- তাই না! এর মধ্যে সুররিয়ালিস্টিক ফর্ম আছে, ম্যাজিক রিয়ালিজম আছে, এর মধ্যে আমরা যেটা করি, ন্যাচারালিস্টিক ফর্ম আছে। এখন তো আগেকার যাত্রার মতো নাচানাচি, উচ্চস্বরে ডাগালগ ছোড়ার মতো অভিনয় দিয়ে হবে না।