শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষয়ে ক্ষয়ে দিন কাটাচ্ছেন প্রবীর মিত্র

জাহাঙ্গীর বিপস্নব
  ২৭ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০
প্রবীর মিত্র

প্রবীর মিত্র। নামটি শুনলেই দেশের সর্বস্তরের সিনেমাপ্রেমি মানুষের কাছে ভেসে ওঠে সাদামাটা এক মুখ। যিনি জীবনের এক-তৃতীআংশ সময় অভিনয়ে কাটিয়েছেন। উপহার দিয়েছেন শত শত চলচ্চিত্র। বেশিরভাগ চলচ্চিত্রেই ইতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করছেন। এ কারণে দর্শকদের কাছে তিনি 'মাটির মানুষ' বলে পরিচিত। বাস্তবেও তেমনই সহজ-সরল আর নরম-ধরম। রুপালি পর্দার সেই গুণী মানুষটির সময় কাটছে ঘরে শুয়ে-বসে। ছবিতে কাজ করছেন না বছর তিনেক হলো। বহুমুখী অসুস্থতায় ক্ষয়ে ক্ষয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে তাকে। দীর্ঘদিন আর্থ্রাইটিজ সমস্যা, বিশেষ করে দুই হাঁটুর তীব্র অসুস্থতার কারণে প্রবীর মিত্র এখন ঘরের চার দেয়ালে বন্দি হয়ে প্রায় নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, অস্টিওপরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। এই রোগের ফলে তার হাড়ে ক্ষয় ধরেছে। যন্ত্রণাদায়ক এই রোগের জন্য ঠিকমত হাঁটতে পারেন না। মাঝেমধ্যে প্রচন্ড ব্যথায় ভোগেন, আবার কদিন ভালো থাকেন। অনেকটা নিথর-নিরেট হয়ে একপলকে চুপচাপ দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকেন বেশিরভাগ সময়। এর মধ্যে ঈদের আগের দিন রাতে বাথরুমে পা পিছলে পড়ে এই অভিনেতার মাথা ফেটে যায়। তারপর থেকে কানেও একদম শোনেন না। কানে শোনার জন্য মেশিন ব্যবহার করেও কাজ হচ্ছে না।

এত কিছুর পরও মাঝখানে মহামারি করোনার ভয়ানক থাবায় দুমড়ে-মুচড়ে যান তিনি। ২২ জুন বর্ষীয়ান এ অভিনেতার শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর থেকে ছিলেন হাসপাতালে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরের দিন ২৩ জুন রাজধানীর হেল্প অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। টানা ১৪ দিন সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর ৭ জুলাই করোনামুক্ত হন। করোনা জয় করার পর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় নিজ বাসাতে সময় পার করছেন কিংবদন্তি চলচ্চিত্রাভিনেতা প্রবীর মিত্র। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আগে বই পড়তেন, টিভি দেখতেন। এখন এসবও আর দেখেন না। চেষ্টা করেন বাইরে বের হওয়ার। কিন্তু চাইলেই তো আর হয় না। তাকে দুতিনজন ধরে তারপর বাইরে বের হতে হয়। প্রবীণ এই অভিনেতার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তার পুত্রবধূ সোনিয়া ইয়াসমিন জানান, করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠার পর বেশ কয়েকদিন ভালো ছিলেন। এরপর হঠাৎ একদিন বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে যায় তার। এরপর থেকে বেশিরভাগ সময় রুমের মধ্যে কাটান তিনি।

এই শরীর নিয়েই কষ্ট করে কথা বলার চেষ্টা করেন প্রবীর মিত্র। আবারও ফিরতে চান লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনে। আক্ষেপ করে প্রবীর মিত্র জানান, এভাবে আর কতদিন ঘরে বসে বসে সময় পার করা যায়? তাই তার ইচ্ছে মাঝে মাঝে যদি অভিনয় করতে পারতেন, তাহলে হয়তো ভালো লাগত। তিনি বলেন, 'আমি আমার বেডরুম থেকে ড্রইংরুম পর্যন্ত একা একাই ধীরে ধীরে চলাফেরা করতে পারি। একজন পরিচালক যদি চান আমাকে দিয়ে ঘরের মধ্যে কাজ করাতে পারবেন, তাহলে তিনি অভিনয়ে ফিরতে পারবেন। তার ইচ্ছা, যদি ঘরের বাইরে শুটিংয়ে যেতে হয়, তাহলে কষ্ট করে হলেও যাব। তিনি বলেন, সত্যি বলতে কী অভিনয় করার জন্য মনটা ভীষণ ব্যাকুল হয়ে আছে। সারা জীবনতো অভিনয়ই করেছি। এখন করতে পারছি না, তাই খারাপ লাগে, কষ্ট হয়। এ অবস্থায় সরেজমিনে আমার সিনেমায় কাজ করার মতো পরিস্থিতি নেই। আদৌ আর কাজ করতে পারব কিনা জানি না, সারাদিন বাসায় থাকি। এ ঘর থেকে ও ঘরে যাই লাঠিতে ভর করে। আমি ক্লান্ত।'

প্রবীর মিত্রের প্রবল উচ্ছে, বিএফডিসিতে অনেকটা সময় ধরে ঘুরে বেড়াতে। কারণ জীবনের দীর্ঘ সময় এখানেই কেটেছে তার। প্রবীরমিত্রের দুই পায়ের হাঁটুতে সমস্যা একযুগেরও বেশি সময় ধরে। হাঁটুর হাড় এখন আরও বেশি ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে হাঁটতেও পারেন না ঠিকমত। তবুও তার মধ্যে অভিনয়ে ফেরার প্রবল ইচ্ছা কাজ করে।

যে চলচ্চিত্রের জন্য জীবনের এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করেছেন, সেখানকার দু-একজন ছাড়া কেউ তেমন খোঁজ-খবর নেন না। প্রবীর মিত্র বলেন, 'আগে সবার সঙ্গে দেখা হতো, কথা হতো। এখন মাসের পর মাস অনেকের সঙ্গে দেখা হয় না, কথা হয় না। এটা পীড়া দেয়। আমার সবাইকে দেখতে ইচ্ছে করে, তাদেরও হয়তো ইচ্ছে হয়। কিন্তু দেখাটা হয়ে ওঠে না। যা-ই হোক, সবকিছু মেনে নিতে হয়।'

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অল্প কিছু অনুদান পেয়েছিলেন সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এ অভিনেতা। জানা গেছে, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি থেকে মাঝেমধ্যে লোক যান প্রবীর মিত্রর বাসায় খবর নেওয়ার জন্য। এছাড়া আর কেউ খবর নেন না, ফোনও করেন না। ভীষণ কাজপাগল মানুষ ছিলেন তিনি। কাজ করতে না পারায় ভীষণ আক্ষেপ তার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<116601 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1