সিনেমা হল খুললেও সাড়া মিলছে না দর্শকের

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
শনিবার রাজধানীর আনন্দ সিনেমা হলের একটি চিত্র
যা ভাবা হয়েছিল, ঠিক যেন তাই হলো। দীর্ঘ ৭ মাস পর সিনেমা হল খুললেও দর্শক সাড়া মিলছে না। মানহীন ছবি, নতুন ছবি না থাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, করোনার আতঙ্কসহ নানা কারণে হলে ফিরছে না দর্শক। দর্শক খরার আশঙ্কায় ঘোষণা দেওয়ার পরেও খোলেনি রাজধানীসহ দেশের বেশকিছু বড় সিনেমা হল। প্রথমদিন শুক্রবার দেশের ৬৬টি হল খুলেছে। এরমধ্যে ৪০টিতে মুক্তি পেয়েছে ?'সাহসী হিরো আলম' এবং বাকি ২৬ হলে চলছে পুরনো ছবি। নতুন-পুরনো দুটো ক্ষেত্রেই এদিন হলগুলোতে দর্শক উপস্থিতি ছিল একেবারেই নগণ্য। শুক্রবার সরেজমিন রাজধানীর কয়েকটি সিনেমা হল ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাতেগোনা নামমাত্র কয়েকজন দর্শক নিয়েই চলছে সিনেমা। দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবারও ছিল একই অবস্থা। চলতি সপ্তাহ দর্শক খরায় ভুগলেও আগামী সপ্তাহ থেকে দর্শক বাড়ার আশা করছেন সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ফার্মগেটের আনন্দ ও ছন্দ সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, 'প্রত্যাশার চেয়ে দর্শক কম হলেও দীর্ঘদিনের খরার পর সামান্য বৃষ্টির আনন্দ অনুভব করেছি। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসনে দর্শক বসার ব্যবস্থা করেছি আমরা। দর্শক হচ্ছে না তবে আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকে দর্শক কিছুটা বাড়বে।' জানা গেছে, দেশে বর্তমানে সিনেমা প্রদর্শনের জন্য ১১৫টি হল থাকলেও ৩০ থেকে ৩৫টি সিনেমা হল খোলেনি শুধু বিদু্যৎ বিল বকেয়া থাকার কারণে। অন্যদিকে মধুমিতা, বলাকা, শ্যামলী সিনেমা হলের মতো রাজধানীর বেশ কয়েকটি বড় হল দর্শক সংকটের আশঙ্কা ও নতুন ছবি মুক্তি না পাওয়ায় খোলেনি। বলাকা সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক শাহীন হোসেন বলেন, 'বলাকা সিনেমা হলের আশপাশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় আমাদের দর্শক হলো শিক্ষার্থী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ মুহূর্তে আমরা দর্শক পাচ্ছি না। অন্যদিকে নতুন ছবি নেই। এ পরিস্থিতিতে ছবি মুক্তি দিলে দর্শক সংকটে পড়তে হবে। এতে লোকসানও গুনতে হবে। তার পরেও আমরা হল খোলা নিয়ে ভাবছি।' ঢাকার বাইরে বৃহৎ সিনেমা হল যশোরের মণিহার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ হলেও নতুন সিনেমার পরিবর্তে চালানো হচ্ছে শাকিব খানের শাহেনশাহ' সিনেমাটি। হলের ব্যবস্থাপক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, 'সাধারণত শুক্রবার দর্শক সমাগম ঘটে। কিন্তু এ শুক্রবারে দর্শক হয়নি বললেই চলে। বিষয়টি হতাশাজনক। এর পরও ধীরে ধীরে দর্শক বাড়বে এ প্রত্যাশা করছি।' বিষয়টি নিয়ে প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ও মধুমিতা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, 'ভালো ছবি না এলে হল খুলব না। যে সব ছবির কোনো কোয়ালিটি নেই সে সব চালাতে চাই না। এতে লাভ তো দূরে থাক, খরচের টাকা ওঠে না। প্রয়োজনে বাইরে থেকে ছবি আনবো, তবুও মানহীন কিছু চালাবো না।' প্রদর্শক সমিতির সাবেক উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, 'দীর্ঘদিন সিনেমা হল বন্ধ থাকায় দর্শক হারিয়ে গেছে। দর্শক হলমুখী হতে একটু সময় লাগবে। তবে সেই পুরনো দিনের হাউসফুল দর্শক আশা করাটা কঠিন। যখন দেশে প্রায় দেড় হাজার সিনেমা হল ছিল। নতুন সিনেমা মুক্তি পেলে দর্শক হলে গিয়ে সিনেমা দেখতেন। প্রযুক্তির কারণে মানুষ এখন ঘরে বসে ইউটিউব বা অন্যমাধ্যমে সিনেমা দেখছেন। হলে মুক্তি পাওয়া প্রায় সিনেমাগুলো কিছুদিন পরে ইউটিউবে প্রকাশ পাচ্ছে। তাই দর্শক আর হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে চান না। খুব কম ছবিই আছে দর্শক টানতে পারে। করোনায় দীর্ঘ ৭ মাস সিনেমা হল বন্ধ থাকার পর গত শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে 'সাহসী হিরো আলম' নামে একটি নতুন ছবি। দর্শক খরায় ছবিটির লাভ-লোকশান নিয়ে মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, 'হিরো আলমের ছবিটি ৪০ হলে মুক্তি পাওয়া তার জন্য অনেক কিছু। লাভ-লোকসানের কথা বলতে পারব না তবে এত হলে মুক্তি নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট।' তবে দর্শক সংকটের কথা অস্বীকার করে হিরো আলম গণমাধ্যমে জানান, তার মুক্তি পাওয়া সিনেমা রাজধানীর চিত্রামহল, জিঞ্জিরার নিউ গুলশান ও নারায়ণগঞ্জে ভালো ব্যবসা করছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শোগুলো ছিল দর্শকপূর্ণ। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে থেকে তার কাছে যে সব হল থেকে ফোন এসেছে, সেগুলোতেও দর্শক সমাগম ছিল উলেস্নখ করার মতো। প্রযোজক পরিবেশক সমিতির হিসাবে, দেশে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে নতুন ২৪টি সিনেমা। হল খুললেও বিশাল লগ্নির এ সব নতুন সিনেমা তারা মুক্তি দিতে চাচ্ছে না। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, 'প্রযোজকরা টাকা লগ্নি করে সিনেমা তৈরি করেন। সিনেমা হলে দর্শক না পেলে কেন তারা সিনেমা মুক্তি দেবেন? দীর্ঘদিন পর সিনেমা হল খুলেছে এটা ভালো খবর। কিন্তু হলে দর্শক নেই। এর কিছু কারণও আছে। প্রথমত, কারণ হলো আশানুরূপ ছবি নেই। দ্বিতীয়ত, মানুষের মধ্যে এখনো করোনার ভয় কাটেনি। আর তৃতীয়ত আমরা বিগ বাজেটের কিংবা আলোচিত ছবি মুক্তি দিতে পারিনি।'