বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

কৃত্রিম উপগ্রহ

প্রকাশ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কৃত্রিম উপগ্রহ হলো মহাকাশে উৎক্ষেপিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত উপগ্রহ। কৃত্রিম উপগ্রহ এমনভাবে পৃথিবীর চতুর্দিকে ঘূর্ণায়মান হয়, যাতে এর গতির সেন্ট্রিফিউগাল বা বহির্মুখিন শক্তি তাকে বাইরের দিকে গতি প্রদান করে। কিন্তু পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি একে পৃথিবীর আওতার বাইরে যেতে দেয় না। উভয় শক্তি কৃত্রিম উপগ্রহকে ভারসাম্য প্রদান করে এবং কৃত্রিম উপগ্রহটি পৃথিবীর চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে। যেহেতু মহাকাশে বায়ুর অস্তিত্ব নেই তাই এটি বাধাহীনভাবে পরিক্রমণ করে। কৃত্রিম উপগ্রহগুলো বৃত্তাকারে পরিক্রমণ করে না, তার গতি ডিম্বাকৃতির। টিভি ও বেতারসংকেত প্রেরণ এবং আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী কৃত্রিম উপগ্রহগুলো সাধারণত পৃথিবী থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে। পৃথিবী থেকে বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে তথ্য পাঠানো হয়, কৃত্রিম উপগ্রহ সেগুলো গ্রহণ করে এবং বিবর্ধিত (এমপিস্নফাই) করে পৃথিবীতে প্রেরণ করে। কৃত্রিম উপগ্রহ দুটি ভিন্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গ ব্যবহার করে সিগনাল (তথ্য) গ্রহণ এবং পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পৃথিবীতে আসা সিগনাল অনেক দুর্বল বা কম শক্তিসম্পন্ন হয়ে থাকে, তাই প্রথমে ডিস এন্টেনা ব্যবহার করে সিগনালকে কেন্দ্রীভূত করা হয় এবং পরে রিসিভার দিয়ে গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হয়। কৃত্রিম উপগ্রহগুলোর উৎক্ষেপণের সময়ই পর্যাপ্ত জ্বালানি গ্রহণ করতে হয়। কারণ মহাকাশে রিফুয়েলিংয়ের কোনো সুযোগ নেই। তবে কিছু উপগ্রহ জ্বালানি হিসেবে সৌরশক্তি ব্যবহার করে। এদের গায়ে সৌরকোষ লাগানো থাকে, যা ব্যবহার করে সে সূর্য থেকে তার প্রয়োজনীয় শক্তি গ্রহণ করে। মহাকাশে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের কৃতিত্ব সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের। ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর উৎক্ষেপিত স্পুটনিক ১ নামের কৃত্রিম উপগ্রহটির নকশা করেছিলেন সের্গেই করালিওভ নামের একজন ইউক্রেনীয়। একই বছর সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশে দ্বিতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক-২ উৎক্ষেপণ করে। স্পুটনিক-২ লাইকা নামের একটা কুকুর বহন করে নিয়ে যায়। অবশ্য উৎক্ষেপণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ত্রম্নটির কারণে লাইকা মারা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালে মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর পরিকল্পনা করে। তাদের পরিকল্পনা সফল হয় ১৯৫৮ সালের ৩১ জানুয়ারি। তাদের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ এক্সপেস্নারার-১ এদিন মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়। ভারতের প্রথম মহাকাশ উপগ্রহ অঝঞজঙঝঅঞ. মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে অনেক কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছে, বিশেষ করে কমিউনিকেশনের (যোগাযোগ) কাজে স্যাটেলাইট অনেক বেশি ব্যবহৃত হয়। বেশির ভাগ টেলিভিশন চ্যানেল তাদের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে এর মাধ্যমে। তা ছাড়া ইন্টারনেট সংযোগ, টেলিফোন সংযোগ, উড়ন্ত বিমানে নেটওয়ার্ক প্রদান, দুর্গম এলাকায় নেটওয়ার্ক প্রদান, জিপিএস সংযোগসহ বিভিন্ন কাজে কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহৃত হয়। কৃত্রিম উপগ্রহ বিভিন্ন আকারের ও গড়নের হতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ কৃত্রিম উপগ্রহেরই দুটি সাধারণ অংশ থাকে- একটি অ্যান্টেনা ও একটি শক্তির উৎস। অ্যান্টেনা তথ্য প্রদান ও গ্রহণ করে থাকে। সৌর প্যানেল বা ব্যাটারি শক্তির উৎস হতে পারে। সৌর প্যানেল সূর্যরশ্মিকে বিদু্যতে পরিণত করে। নাসার অনেক কৃত্রিম উপগ্রহে ক্যামেরা ও বিভিন্ন সেন্সর যুক্ত থাকে। কৃত্রিম উপগ্রহ কীভাবে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে অধিকাংশ কৃত্রিম উপগ্রহই রকেটের মাধ্যমে মহাশূন্যে উৎক্ষেপণ করা হয়। একটি কৃত্রিম উপগ্রহ তখনই পৃথিবীকে আবর্তন করে যখন তার গতি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ টানের (যে বল দ্বারা পৃথিবী সবকিছুকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে) সমতা রক্ষা করে।তা না হলে এটি উৎক্ষেপণের পরে সোজা মহাশূন্যে হারিয়ে যেত অথবা আবার পৃথিবীতে ফিরে আসত। হ শিক্ষা জগৎ ডেস্ক