বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

উচ্চশিক্ষায় জরুরি ফলাফল নাকি বিশ্ববিদ্যালয়

মশিউর রহমান ইংরেজি শিক্ষক আছমত আলী খান ইনস্টিটিউশন, বরিশাল।
  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
উচ্চশিক্ষায় জরুরি ফলাফল নাকি বিশ্ববিদ্যালয়
উচ্চশিক্ষায় জরুরি ফলাফল নাকি বিশ্ববিদ্যালয়

মানুষ স্বপ্নবাজ, সে জীবনে প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখে। একটি কথা আছে 'যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ' মানুষ মৃতু্যর আগ পর্যন্ত নতুন আশায় বুক বাঁধে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরুতেই একজন শিক্ষার্থীর কচি মনে স্বপ্ন বুনন শুরু হয়। কেউবা স্বপ্ন দেখে আগামীদিনের ডাক্তার, কেউবা প্রকৌশলী, কেউবা বড় আমলা, আবার কেউবা ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। প্রাথমিক থেকে তাকে ধাপে ধাপে পার হতে হয় শিক্ষাস্তরগুলোর। একজন শিক্ষার্থীকে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়ে, উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়। অনেক ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে এ পর্যায়ে আসতে হয়। আমাদের দেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, একজন শিক্ষার্থীর এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফল এবং ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ। এক একটি আসনের বিপরীতে প্রায় অর্ধশত প্রার্থীকেও লড়তে হয়। এই তুমুল প্রতিযোগিতায়, কেউ কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়, আবার কেউ সুযোগ না পেলে তার শিক্ষা জীবনে নেয় অন্য মোড়।

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় ঘুরেফিরে আমাদের কাছে আসে তাহলো- একজন শিক্ষার্থীর ফলাফল, তার পঠিত বিষয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের জানতে হবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা কোন জিনিসটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেব বা শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনে কোনো জিনিসটির গুরুত্ব কতটুকু?

শিক্ষার লক্ষ্য জ্ঞান অর্জন হলেও, আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে একজন শিক্ষিত যুবকের পড়াশোনা শেষ করে একটি কর্ম দরকার। হোক সেটা সরকারি বা বেসরকারি।

এবারে যাওয়া যাক কর্মের সন্ধানে। সরকারি- বেসরকারি সব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর একাডেমিক ফলাফল চাওয়া হয়। এখানে একটু পরিষ্কার করে বলতে চাই, কিছু কিছু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যে কোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং এসএসসি, এইচএসসিতে প্রথম বিভাগ আবার কখনো কখনো যে কোনো তিনটি বিষয়ে প্রথম শ্রেণিও চাওয়া হয়। এটা সহজেই অনুমেয় চাকরির বাজার অনেক চড়া। চাকরির পদ সংখ্যার চেয়ে প্রার্থীর সংখ্যা অনেক গুণ বেশি।

চাকরির এই শর্ত থেকে আমরা তাহলে কি বুঝতে পারি? সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে যিনি চাকরিতে প্রবেশ করবেন তাকে প্রথমত ভালো ফলাফলের অধিকারী হতে হবে। এবারে আসা যাক তার পঠিত বিষয়ের ওপরে গুরুত্ব কতটুকু? কিছু টেকনিক্যাল পেশা রয়েছে, যেখানে বিষয়ভিত্তিক প্রার্থী দরকার আবার কিছু প্রার্থী টেকনিক্যাল বিষয়ে পড়াশোনা

করেও বিষয় সংশ্লিষ্ট পেশায় যান না। এটা আমাদের দেশে সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই আছে। এমনকি প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে বড় নিয়োগ বিসিএস, এখানেও প্রতি বছর উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী টেকনিক্যাল বিষয়ে পড়াশোনা করেও জেনারেল পদের জন্য প্রতিযোগিতা করেন। ভালো বেতন, ভালো সুযোগ-সুবিধা পেলে অন্য পেশায় চলে যান। অপেক্ষাকৃত ভালো সুযোগ-সুবিধা একজন চাকরি প্রার্থীর প্রথম পছন্দ এবং এটা খুবই স্বাভাবিক। এখানে তিনি কোনো বিষয়ে পড়াশোনা করছেন এবং সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্ম তার কাছে মুখ্য নয়। সুতরাং, সহজেই বোধগম্য উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের প্রথমে গুরুত্ব দিতে হবে ফলাফলকে, পরে আসবে তার পঠিত বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিষয় প্রাপ্তিও আবার ফলাফল ভিত্তিতে হয়ে থাকে। সব বিষয় আবেদনের যোগ্যতা সমান নয় এবং সব বিষয়ে প্রতিযোগিতার সংখ্যাও সমান নয়। সুতরাং, বিষয় প্রাপ্তিও একজন প্রার্থীর একাডেমিক ফলাফলকে নির্দেশ করে। এখন আসি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলব না- কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব রয়েছে ইউজিসির। অবশ্য কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়কে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভেতর কিছুটা হেরফের রয়েছে- কারণ সব বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রতিযোগিতা সমান হারে হয় না। যাহোক, প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষারই নূ্যনতম মান রয়েছে।

একজন চাকরি প্রার্থীর ক্ষেত্রে, কে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করল সে মূল্যায়ন মৌখিক ভিত্তিতে মানে অনানুষ্ঠানিক। আনুষ্ঠানিক বা দাপ্তরিকভাবে সব বিশ্ববিদ্যালয়কেই সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়।

মূল বিষয় হলো, একজন শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বের দিক দিয়ে প্রথমে ফলাফল, তারপরে পঠিত বিষয়, সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীর চাওয়ার দিক দিয়ে প্রথমে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়, তারপরে তার পছন্দের সাবজেক্ট, ফলাফল অবশ্য ভর্তি হওয়ার পরের ব্যাপার।

বর্তমানে আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির মৌসুম চলছে। ভর্তি যুদ্ধে ভর্তি প্রার্থীরা কেউ কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে পারে আবার কেউ পারে না। যিনি কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়, কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে ভর্তি হতে পারে না, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে হলে কোনো না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, কোনো না কোনো বিষয়ে তাকে ভর্তি হতে হয়। পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়, পছন্দের সাবজেক্টে চান্স না পাওয়ায় মন খারাপ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। যার যে বিশ্ববিদ্যালয়ই চান্স হোক না কেন, তাকে সেখানেই খুশি মনে ভর্তি হওয়া উচিত।

ভর্তি হওয়ার পরে তাকে মনে রাখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে নিজের এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ তাকে একটি কর্মে প্রবেশ করতে হবে। যে কোনো ভালো কর্মের ক্ষেত্রে গুরুত্বের দিক দিয়ে প্রথমে আসবে একাডেমিক ফলাফল, পঠিত বিষয় এবং সবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়য়ের গুরুত্ব। এই তিনটি গুরুত্ব একজন শিক্ষার্থী অনুধাবন করলে, তার কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়,কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে চান্স না পাওয়ার হতাশা দূর হবে। পরিশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া সবার জন্য রইল অশেষ শুভকামনা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে