বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

প্রকাশ | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক
রঞ্জনরশ্মি রঞ্জনরশ্মি ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট এক ধরনের তড়িৎ চৌম্বক বিকিরণ। এর অপর নাম এক্স-রে (ঢ-ৎধু)। রঞ্জনরশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য (সাধারণত ১০-০.০১ ন্যানোমিটার) সাধারণ আলোর চেয়ে অনেক কম বলে দর্শন অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে না। ১৮৯৫ সালে উইলিয়াম রন্টজেন এই রশ্মি আবিষ্কার করেন। তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যত ছোট হয় পদার্থ ভেদ করার ক্ষমতা তত বেশি হয়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোগনির্ণয়ে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে রঞ্জনরশ্মি। দ্রম্নতগতিসম্পন্ন ইলেক্ট্রন কোনো ধাতুকে আঘাত করলে তা থেকে অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের এবং উচ্চ ভেদন ক্ষমতাসম্পন্ন এক ধরনের বিকিরণ উৎপন্ন হয়। এই বিকিরণকে বলা হয় এক্স-রে বা এক্সরশ্মি (ঢ-জধু)। এক্স-রের একক হলো রন্টজেন। এক রন্টজেন বলতে সেই পরিমাণ বিকিরণ বুঝায়- যা স্বাভাবিক চাপ ও তাপমাত্রায় এক মিলিমিটার বায়ুতে স্থির বৈদু্যতিক আধানের সমান আধান উৎপন্ন করতে পারে। বৈশিষ্ট্য:এক্স-রে আর সাধারণ আলোর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো এদের তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে। সাধারণ আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৭ী১০৭স থেকে ৪ী১০৭স-এর কাছাকাছি। এক্স-রের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ১০৮স থেকে ১০১৩স-এর কাছাকাছি। সাধারণ আলো দৃশ্যমান এবং বিভিন্ন রঙে বিভক্ত হয়। কিন্তু এক্স-রে দৃশ্যমান নয়। এক্স-রে উচ্চ ভেদন ক্ষমতাসম্পন্ন। এক্স-রে আয়ন সৃষ্টিকারী বিকিরণ গ্যাসের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় গ্যাসকে আয়নিত করে, কিন্তু সাধারণ আলো তা করে না। প্রকারভেদ:কোমল এক্স-রে (ঝড়ভঃ ঢ-ৎধু): এক্স-রে যন্ত্রে কম বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করে যে এক্স-রে পাওয়া যায় অর্থাৎ যে এক্স-রের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত বেশি, ফলে ভেদন ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত কম, তাকে কোমল এক্স-রে বলে। কঠিন এক্স-রে (ঐধৎফ ঢ-ৎধু): এক্স-রে যন্ত্রে বেশি বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করে যে এক্স-রে পাওয়া যায় অর্থাৎ যে এক্স-রের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত কম, ফলে ভেদন ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত বেশি, তাকে কঠিন এক্স-রে বলে। আবিষ্কার বিজ্ঞানী রন্টজেন তড়িৎ ক্ষরণ নলে ১০৩সস পারদ চাপে বায়ুর মধ্যে তড়িৎ রক্ষণের পরীক্ষা করতে গিয়ে লক্ষ্য করেন যে, নল থেকে কিছু দূরে অবস্থিত বেরিয়াম পস্নাটিনোসায়নাইড আবৃত পর্দায় প্রতিপ্রভার সৃষ্টি হচ্ছে। পরে তিনি আবিষ্কার করেন যে, তড়িৎ ক্ষরণ নল থেকে ক্যাথোড রশ্মি যখন নলের দেয়ালে পড়ে তখন এই রশ্মির উৎপত্তি হয়। তিনি এই রশ্মির নাম রাখেন এক্স-রে রশ্মি বা এক্সরশ্মি। ধর্ম:এ রশ্মি সরলরেখায় গমন করে ও অত্যধিক ভেদন ক্ষমতাসম্পন্ন।এক্স-রে তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ, তড়িৎক্ষেত্র বা চৌম্বকক্ষেত্র দ্বারা এটিবিচু্যত হয় না। এটির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য খুব ছোট, কম্পাঙ্ক খুব উচ্চ। সাধারণ আলোর ন্যায় এক্স-রের প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যতিচার,অপবর্তন ও সমাবর্তন হয়ে থাকে। এ রশ্মির আলোক তড়িৎ ক্রিয়া আছে। ফটোগ্রাফিক পেস্নটের উপর এর প্রতিক্রিয়া আছে। জিঙ্ক সালফাইড, বেরিয়াম পস্নাটিনোসায়ানাইড প্রভৃতি পদার্থে এ রশ্মি প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করে। এটা আয়ন সৃষ্টিকারী বিকিরণ ও আধান নিরপেক্ষ। এক্স-রে অদৃশ্য। সাধারণ আলোক রেটিনায় পড়লে দৃষ্টির অনুভূতি জন্মায় কিন্তু এদের ক্ষেত্রে এমন হয় না। এক্স-রে রশ্মি তীব্রতা ব্যস্ত্যানুপাতিক সূত্র মেনে চলে। এটি জীবন্ত কোষকে ধ্বংস করতে পারে ও প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করে। এটি আলোর বেগে অর্থাৎ প্রায় ৩দ্ধ১০৮ সং১ বেগে গমন করে। ব্যবহার:- চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহার:স্থানচু্যত হাড়, হাড়ে দাগ বা ফাটল, ভেঙে যাওয়া হাড়, শরীরের ভেতরেরকোনো বস্তুর বা ফুসফুসের কোনো ক্ষত, দাঁতের ক্যারিস ইত্যাদিরঅবস্থান নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়। সিটি স্ক্যান হলো কম্পিউটারের সাহায্যে রঞ্জনরশ্মি দ্বারা গৃহীত চিত্র সমন্বয় করে ত্রিমাত্রিক বা প্রস্থছেদ চিত্র বানাবার ব্যবস্থা। ক্যান্সারের চিকিৎসায় রঞ্জনরশ্মি বিকিরণ ব্যবহৃত হয়। পরিপাকনালি দিয়ে খাদ্যবস্তুর গমন পথ অনুসরণ, আলসার নির্ণয় ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করা হয়। শিল্পে ব্যবহার:ধাতব ঢালাইয়ের দোষ ত্রম্নটিপূর্ণ ওয়েল্ডিং, ধাতব পাতের গর্ত ইত্যাদি নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়। কেলাস গঠন পরীক্ষায় এক্স-রে ব্যবহৃত হয় এবং মণিকারেরা এর সাহায্যে আসল ও নকল গহনা চিহ্নিত করতে পারেন। টফি লজেন্স, সিগারেট ইত্যাদির মান বজায় আছে কি না বা টফি ও লজেন্সে ক্ষতিকর কোনো কিছু মিশ্রিত হয়েছে কি না তা জানার জন্য ব্যবহৃত হয়। গোয়েন্দা বিভাগে ব্যবহার:কাঠের বাক্স বা চামড়ার থলিতে বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখলে তা খুঁজে বের করতে ব্যবহার করা হয়। কাস্টম কর্মকর্তারা চোরাচালানের দ্রব্যাদি খুঁজে বের করতে ব্যবহার করেন।