বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক
  ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

অ্যানিমেশন

অ্যানিমেশন বা সজীবতা হচ্ছে স্থিরচিত্রের একটি ক্রম যেগুলোকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় লক্ষ্য করলে জীবন্ত ও সচল বলে মনে হয়। অ্যানিমেশন তৈরি, সংরক্ষণ বা ধারণ করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, যেমন : অ্যানালগ পদ্ধতিতে ক্রম-সচল বই,সচল ছবি, ভিডিও টেপ আর ডিজিটাল পদ্ধতিতে জিআইএফ, ফ্লাশ বা ডিজিটাল ভিডিও মাধ্যম ব্যবহার করা হয়। এটি প্রদর্শনের জন্য ক্যামেরা,কম্পিউটার বা প্রজেক্টর ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সহজ অর্থে একে 'চলমান চিত্র' বলেও অভিহিত করা যায়। চলচ্চিত্র ও অ্যানিমেশনের সংজ্ঞার মূল কারিগরি নীতি একই। চলচ্চিত্রের সংজ্ঞা অ্যানিমেশনকে সঙ্গে নেয়। নির্মাণ প্রক্রিয়ার ভিন্নতা অনুসারে চলচ্চিত্রকে জীবন্ত গতি (ষরাব ধপঃরড়হ) বা অ্যানিমেশন এ দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। জীবন্ত গতি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চলমান বস্তুটিকে ক্যামেরার সহায়তায় সময়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অন্তরালে ফটো তোলা হয়। এ ছবিগুলো চলমান বস্তুটির বিভিন্ন মুহূর্তকে স্থিরচিত্র কওে ফেলে। প্রতিটি ছবিকে একটি 'ফ্রেম' বলা হয়। বর্তমানে কম্পিউটারের সহায়তায় অ্যানিমেশন নির্মাণ করাটি জনপ্রিয় উপায়। অ্যানিমেশন দ্বিমাত্রিক (২উ) বা ত্রিমাত্রিক (৩উ) হতে পারে।

শব্দের উৎপত্তি : ল্যাটিন ভাষার শব্দ ধহরসধ (আত্মা/ংড়ঁষ), এর ক্রিয়াবাচক শব্দ হলো অহরসধঃব। অহরসধঃব শব্দের অর্থ আত্মা দান করা, বা প্রাণ দেওয়া। অর্থাৎ একটি জড়বস্তুতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা। অ্যানিমেশনে জড়/স্থিরচিত্রকে গতিশীল কওে 'প্রাণ দেওয়া' হয় বলেই একে অ্যানিমেশন বলা হয়।

পারস্পরিক অ্যানিমেশন : পারস্পরিক অ্যানিমেশনকে সেল (ঈবষ) অ্যানিমেশন বা হাতে আঁকা (ঐধহফ ফৎধহি) অ্যানিমেশন বলেও ডাকা হয়। বিংশ শতকের অ্যানিমেশন ছবি এ পদ্ধতিতে নির্মাণ করা হয়েছিল। অ্যানিমেশনের জন্য ছবি আঁকা ব্যক্তিকে 'অ্যানিমেটর' (অহরসধঃড়ৎ) বলে। প্রতিটি ছবি একটা গতির ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হওয়া স্থানের ছবি। কাগজ থেকে পারদর্শী 'সেল'-এ ছবিটি 'ট্রেসিং' করে নেওয়া হয়। এ সেলের ওপরে রঙ লাগানো হয়। প্রয়োজন অনুসারে একটির বেশি 'সেল'-এর উপরে লাগিয়ে দিয়ে বহু চরিত্র এক সঙ্গে রাখা যায়। 'ব্যাকগ্রাইন্ড'-এর ছবিও আলাদাভাবে এঁকে সেলের তলায় রাখা হয়। পরে সেই ছবি ক্যামেরায় একটি একটি কওে চলচ্চিত্রের 'ফিল্ম'-এ ফুটিয়ে তোলা হয়।

সম্পূর্ণ অ্যানিমেশন : পরম্পরাগত পদ্ধতিতে উচ্চমানের ছবি এবং মসৃণ চলাফেরাগতিতে নির্মাণ করা অ্যানিমেশন। এ ধরনের অ্যানিমেশনে চলন মসৃণ রাখার জন্য নির্মাতাকে অধিক কষ্ট করতে হয়।

সীমিত অ্যানিমেশন : পরম্পরাগত পদ্ধতি ব্যবহার করে নির্মাণ করলেও এটিতে কম মানসম্পন্ন ছবি এবং গতির মসৃণতা বজায় রাখতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় না। সাধারণত দূরদর্শনের জন্য নির্মাণ করা অ্যানিমেশন ছবিতে ব্যবহার হয়। এ পদ্ধতিতে নির্মাণ করলে কষ্ট এবং সময় দুই-ই লাঘব হয়, দ্রম্নতগতিতে ছবি নির্মাণ করতে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

রটোস্কোপিং (জড়ঃড়ংপড়ঢ়রহম) মেক্স ফ্লেইসারের (গধী ঋষবরংপযবৎ) ১৯১৭ সালে উদ্ভাবন করা একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে প্রথমে একজন অভিনেতার দ্বারা অ্যানিমেশনকরণীয় অংশের চলচ্চিত্র বানিয়ে নেওয়া হয়। পরে সেই ছবি একটি একটি করে কাগজে পরিবর্ধন করে 'ট্রেসিং' করে ছবি আঁকা হয়। এ পদ্ধতিতে বাস্তব চলাচলের নকল তৈরি করা যায়। অবশ্য বাস্তব চলাচল ট্রেসিং করলে চলাচলের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যেতে দেখা যায়।

জীবন্ত ছবি এবং অ্যানিমেশনের সমাহার : এ পদ্ধতিতে একটি ফ্রেমে আঁকা ছবি এবং সিনেমার ক্যামেরায় তোলা ছবি থাকে। স্টপ মোশন বাস্তব জগতের বস্তু বা পুতুল-মডেলের স্থান অল্প অল্প করে পরিবর্তিত করে একটি ক্রমে ফুটিয়ে তোলে নির্মাণ করা অ্যানিমেশন। এতে পারস্পরিক অ্যানিমেশনের মতো ছবি আঁকা যায় না। বহু পদ্ধতিতে স্টপ মোশন ছবি নির্মাণ করা যায়। পুতুল অ্যানিমেশন, ক্লে অ্যানিমেশন বা পস্নাস্টিসিন অ্যানিমেশন, সাঁ অ্যানিমেশন, কাট-আউট অ্যানিমেশন, মডেল অ্যানিমেশন, গো মোশন, অবজেক্ট অ্যানিমেশন, গ্রাফিক অ্যানিমেশন, পিক্সিলশন এ সবই অ্যানিমেশনের প্রকারভেদ।

কম্পিউটার অ্যানিমেশন : কম্পিউটারের সহায়তায় নির্মাণ করা অ্যানিমেশনকেই কম্পিউটার অ্যানিমেশন বলা যায়। কম্পিউটার অ্যানিমেশনের কয়েকটি প্রকার আছে। সেগুলো হলো-

দ্বিমাত্রিক অ্যানিমেশন : ছবি সংযোগ এবং সম্পাদনা করে 'দ্বিমাত্রিক অ্যানিমেশন' নির্মাণ করা হয়। দ্বিমাত্রিক ছবিটি কম্পিউটারের সফ্‌টওয়্যার ব্যবহার করে আঁকা হতে পারে বা হাতে এঁকে স্ক্যান করে নেওয়াও হতে পারে।

ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন : এটি মডেল অ্যানিমেশনের কম্পিউটার রূপ বলা যায়। ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন নির্মাণ করার জন্য কম্পিউটার সফটওয়্যাওে ত্রিমাত্রিক মডেল সাজিয়ে নেওয়া হয়।

অ্যানিমেশনের কিছু পদ্ধতি ফিল্মের ওপরে অংকন : এ পদ্ধতিতে চলচ্চিত্রের রিলের প্রতিটি ফ্রেমে ছবি এঁকে অ্যানিমেশন তৈরি করা হয়। এ পদ্ধতিতে অ্যানিমেশন নির্মাণ করা কিছু ব্যক্তির নাম ঘড়ৎসধহ গপখধৎবহ, খবহ খুব ও ঝঃধহ ইৎধশযধমব.

কাচের উপরে পেন্ট অ্যানিমেশন : কাচের উপরে ধীরে শুকানো রঙ (সাধারণত তেল রঙ) ব্যবহার করে আঁকাটি শুকাবার আগেই রঙটি সঠিকভাবে এদিক-সেদিক করে প্রতিটি ফ্রেমের ছবি নেওয়া হয়। অস্কার পুরস্কার বিজয়ী রুশ অ্যানিমেটর আলেকসেন্দ্র পেট্রভ (অষবীধহফৎ চবঃৎড়া) এ পদ্ধতিতে কয়েকটি অ্যানিমেশন ছবি নির্মাণ করেছেন।

মুছে মুছে নির্মাণ করা অ্যানিমেশন : শিল্পীর আঁকা ফুটিয়ে তুলে ফ্রেম সাজিয়ে তৈরি করা অ্যানিমেশন।

পিনের পর্দা অ্যানিমেশন : একটি পর্দার উপরে 'পিন' বিঁধিয়ে নিয়ে পিনগুলোকে সময়মতো ওলট-পালট করে নির্মাণ করা অ্যানিমেশন। এ পদ্ধতিতে আলোর কোনাকুনি করে পর্দাটির ওপরে ফেলা হয় যাতে উঠে থাকা পিনের ছায়া বাকি অংশে পড়ে একটি দৃশ্যের সৃষ্টি করতে পারে।

বালি অ্যানিমেশন : তলার থেকে বা ওপর পর্যন্ত আলো পড়ে থাকা কাচের উপরের বালির তরপকে হাতের মাধ্যমে এদিক-সেদিক করে নির্মাণ করা অ্যানিমেশন। এর বাইরেও অন্য বহু উপায়ে অ্যানিমেশন নির্মাণ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯২ সালে পিওটর ডুমালার (চরড়ঃৎ উঁসধষধ) নির্মিত ফ্রাঞ্জ কাফকায় (ঋৎধহু কধভশধ) পস্নাস্টারের নির্মিত ফলকের উপরে কালো রঙ দিয়ে পরে সেই রঙ অল্প অল্প করে তুলে অ্যানিমেশন নির্মাণ করা হয়েছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে