দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
বাংলাদেশের ভৌগোলিক বিবরণ গ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত অঞ্চলসমূহ হলো পস্নাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহ। নিচে পস্নাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহ মানচিত্রে উপস্থাপন করা হলো : চিত্র : বাংলাদেশের পস্নাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহ ঘ. শিক্ষার্থীরা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বরেন্দ্র ভূমি, মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এবং লালমাই পাহাড়ের ভূপ্রকৃতির একইরূপ বৈশিষ্ট্য দেখতে পায়। বর্ণিত অঞ্চলসমূহের ভূপ্রকৃতি হলো পস্নাইস্টোসিনকালের সোপান। আনুমানিক ২৫,০০০ বছর পূর্বের সময়কে পস্নাইস্টোসিনকাল বলা হয়। পস্নাইস্টোসিনকালে এসব সোপান গঠিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয় এবং গঠন প্রক্রিয়া একই রকম ছিল। তাই এদের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য একই। যেমন, এদের বৈশিষ্ট্য আলোচনায় আমরা দেখি- ১. বরেন্দ্রভূমি : দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৯,৩২০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বরেন্দ্রভূমি বিস্তৃত। পস্নাবণ সমভূমি হতে এর উচ্চতা ৬ থেকে ১২ মিটার। এ স্থানের মাটি ধূসর ও লাল বর্ণের। ২. মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় : টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলায় মধুপুর এবং গাজীপুর জেলায় ভাওয়ালের গড় অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ৪,১০৩ বর্গকিলোমিটার। সমভূমি থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার। মাটির রং লালচে ও ধূসর। ৩. লালমাই পাহাড় : কুমিলস্না শহর থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে লালমাই থেকে ময়নামতি পর্যন্ত এ পাহাড়টি বিস্তৃত। এর আয়তন প্রায় ৩৪ বর্গকিলোমিটার এবং গড় উচ্চতা ২১ মিটার। সুতরাং গঠন বৈশিষ্ট্যের কারণে তিনটি ভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত হলেও বাংলাদেশের উচ্চভূমির ভূপ্রকৃতি সমরূপ বৈশিষ্ট্যের। প্রশ্ন: বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। মানুষের জীবনযাত্রার ওপর নদীর প্রভাব লক্ষণীয়। পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, কর্ণফুলী বাংলাদেশের প্রধান নদী। এ নদীগুলোর অসংখ্য উপনদী ও শাখা নদী রয়েছে। বাংলাদেশের নদীসমূহের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২২,১৫৫ কিলোমিটার। প্রায় সব নদীই হিমালয় ও এর সমগোত্রীয় পর্বতশ্রেণি থেকে উৎপন্ন হয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। ক. বাংলাদেশের প্রধান প্রধান নদীগুলোর নাম লিখ। খ. পদ্মা নদীর গতিপথের বর্ণনা কর। গ. মানচিত্রে উদ্দীপকের নদীব্যবস্থা প্রদর্শন কর। ঘ. অর্থনীতিতে উদ্দীপকের প্রধান নদনদীর ভূমিকা মূল্যায়ন কর। উত্তর: ক. বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলো হচ্ছে- পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, মেঘনা ও কর্ণফুলী। খ. বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম নদী পদ্মা যা ভারতে গঙ্গা নামে পরিচিত। গঙ্গা নদী হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। গঙ্গা নদীর মূল প্রবাহ রাজশাহী অঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পদ্মা নামে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ সীমানা বরাবর এসে কুষ্টিয়ার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর দৌলতদিয়ার নিকট যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এ মিলিত ধারা পদ্মা নামে দক্ষিণ-পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে চাঁদপুরের কাছে মেঘনার সাথে মিলিত হয়েছে। গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদনদী তথা এদেশের নদী ব্যবস্থা উলিস্নখিত হয়েছে। নিচে বাংলাদেশের মানচিত্র অঙ্কন করে নদী ব্যবস্থাটি দেখানো হলো : ঘ. বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রা এবং অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর উদ্দীপকে উলিস্নখিত প্রধান নদী তথা পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও কর্ণফুলী নদীর প্রভাব ব্যাপক। এই প্রভাব ইতিবাচক তবে কখনো কখনো নেতিবাচক। যথা : র. অনুকূল প্রভাব : কৃষিকাজের প্রসার : বর্ষাকালে নদীবাহিত পলি পার্শ্ববর্তী নিচু আবাদি অঞ্চলে সঞ্চিত হয়ে জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে। আবাদি জমিতে পানি সেচ দেয়ার জন্য নদীর পানি ব্যবহার করা হয়। ধান, গম, পাট, আখ, তুলা, তামাক, ডাল, তেলবীজ, সবজি প্রভৃতি বাংলাদেশের কৃষিজ পণ্য। কৃষিভিত্তিক শিল্প এদেশের অর্থনীতির অন্যতম শক্তিশালী খাত। মৎস্য আহরণ ক্ষেত্র : নদী ও এর সাথে সংযুক্ত বিভিন্ন জলাশয় এদেশের গুরুত্বপূর্ণ মৎস্যচারণ ও প্রজনন ক্ষেত্র। দেশের মোট অভ্যন্তরীণ মৎস্যের প্রায় ৬০% এসব অঞ্চল থেকে আহরিত হয়। ভূগর্ভে পানি সঞ্চয়ন : নদীর পানি ভূগর্ভস্থ জলাধারকে পরিপুষ্ট করে যা মানুষ খাবার, চাষের জন্য ব্যবহার করে। বাংলাদেশের নগর ও শহরে নদীর পানি পরিশোধন করে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করা হয়। নৌপরিবহন সুবিধা : বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে নদীপথ একটি উলেস্নখযোগ্য পরিবহন পথ। বাংলাদেশের অধিকাংশ বড় শহর, নগর, শিল্প, ব্যবসা কেন্দ্র নদী তীরে অবস্থিত। যেমন : ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী যা বুড়িগঙ্গা নদী তীরে অবস্থিত। রর. প্রতিকূল প্রভাব : বন্যার ফলে ক্ষয়ক্ষতি : বর্ষাকালে নদী প্রবাহ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা সৃষ্টি হয় যা এদেশের শত শত কোটি টাকার ফসল এবং সম্পদ বিনষ্ট হয়ে থাকে। প্রধান বড় বন্যা হয়- ১৯৭০, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০১, ২০০৭ সালে। নদীভাঙন এবং জনবিচু্যতি : নদীভাঙন এদেশের মারাত্মক সমস্যা। যমুনার তীরে অবস্থিত সিরাজগঞ্জ এবং মেঘনার তীরে অবস্থিত চাঁদপুর এ দুটি প্রসিদ্ধ শহর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এভাবে নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ নদনদীর প্রভাবে মাঝে মাঝে প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হয়। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়