তার উচ্চতা নির্ণয়করেন। থেলস ই প্রথম ব্যক্তি যার নামের সাথে গণিত শাস্ত্রের বিভিন্ন আবিষ্কার জড়িত। প্রাচীনকালের সাতজন মহাজ্ঞানী ব্যক্তির মধ্যে থেলস একজন। তাকে গ্রিস জ্যোতিষশাস্ত্র, জ্যামিতি ও পাটিগণিতের জনক বলা হয়। সংখ্যা পদ্ধতির ইতিহাসে থেলস প্রবর্তিত চিন্তাধারা এক নতুন জ্ঞানের জগতের দ্বার উন্মোচিত করে। পূর্ণ সংখ্যার সংস্করণ ও হিন্দু- আরবীয় সংখ্যার বিকাশে অনবদ্য ভূমিকার জন্য ভারতীয় গণিতবিদ আর্যভট্টকে সংখ্যা পদ্ধতির জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়। সুমেরীয় সভ্যতার সময় আবিষ্কৃত ট্যালি পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা হলো বড় সংখ্যা যেমন : হাজার বা লক্ষের ঘরের সংখ্যা এই পদ্ধতির সাহায্যে প্রকাশ করা যেত না। এই সমস্যা প্রথম অনুধাবন করেন মিসরীয় মানুষেরা। মিশরীয়রা চিন্তাধারায় যথেষ্ট উন্নত ছিল। মিসরীয়রা অনেক বড় বড় স্থাপনার কাজ করেছে। এ সকল স্থাপনার কাজ করতে গিয়ে তাদের বড় সংখ্যার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। মানব সভ্যতার বিকাশে মিসরীয়দের অবদান সবচেয়ে বেশি। কারণ মিসরীয় সভ্যতার ইতিহাস ও সংখ্যা পদ্ধতির ইতিহাস পারস্পরিক অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। মিসরীয়দের বড় বড় স্থাপনাসমূহ নির্মাণের সময়ে হাজার হাজার শ্রমিকের খাবার ও নির্মাণ সামগ্রীর হিসাব রাখতে গিয়ে তারা সংখ্যা প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহার করত। ধারণা করা হয়, মিসরীয়দের সংখ্যা পদ্ধতির সূচনা হয়েছিল পিরামিড নির্মাণেরও বহুবছর পূর্বে প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ৩৪০০ অব্দের দিকে। মিসরীয়দের দ্বারা প্রচলিত এসব লিখিত চিহ্নের নাম হায়ারোগিস্নফিক্স (ঐরবৎড়মষুঢ়যরপং). হায়ারোগিস্নফিক্স শব্দটি গ্রিক শব্দ হায়ারোগ্রিফোস থেকে এসেছে যার অর্থ পবিত্র লিপি। মিসরীয়দের হায়ারোগিস্নফিক্স লিপি মূলত চিত্রলিপি। প্রাচীন মিশরে তিন ধরনের চিত্রলিপি প্রচলিত ছিল। গ্রিকরা যখন মিসর দখল করে নেয় তখন তারা বিভিন্ন উপাসনালয়ের গায়ে এই লিপি দেখতে পায় তাই তারা এই লিপিকে পবিত্রলিপি মনে করে। উদ্ভবকাল থেকে বিলুপ্তকাল পর্যন্ত এই লিপি ছিল শব্দলিপি ও অক্ষরলিপি নির্ভর। অক্ষরলিপি হিসেবে এখানে প্রায় ২৪টি ব্যঞ্জনবর্ণ ব্যবহার হলেও স্বরবর্ণের কোন অস্তিত্ব ছিল না খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে মিসরীয়রা সর্বপ্রথম গণনা ছাড়াও পরিমাপের জন্য সংখ্যা পদ্ধতির ব্যবহার শুরু করেন। এই পরিমাপের পদ্ধতিটি কিউবিট (ঈটইওঞ) নামে পরিচিত। এক কিউবিট হচ্ছে একজন মানুষের বাহুর দৈর্ঘ্য ও হাতের তালুর প্রস্থের যোগফলের সমান। এই এককটি তাদের কাছে খুবই পবিত্র ছিল যার ফলে তারা এটার সমান করে একটি লাঠি কেটে তাদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে সংরক্ষণ করত। এই মাপ দিয়েই তারা বিভিন্ন স্থাপনা যেমন : পিরামিড, মাস্তাবা, মন্দির ইত্যাদি তৈরি করত এবং এসব স্থাপনা জ্যামিতিকভাবে খুবই নিখুত ছিল। মিসরীয়দের সংখ্যা ব্যবস্থা ছিল দশ ভিত্তিক। মিসরীয়রা হায়ারোগিস্নফিক্স পদ্ধতিতে একের জন্য একটি দাগ ব্যবহারের পাশাপাশি প্রতিটি পূর্ণ সংখ্যার জন্য আলাদা করে সংখ্যা ব্যবহার না করে দশ গুণোত্তর হারে প্রতিটি পূর্ণ সংখ্যার জন্য ভিন্ন প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহার করত। এই পদ্ধতিতে সংখ্যার কোন স্থানীয় মান ছিল না। মিসরীয়দের এই পদ্ধতিটি আপাতত দৃষ্টিতে দুর্বোধ্য মনে হলেও সমসাময়িক কালে অনেক বড় বড় সংখ্যাকে সহজে প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছিল। এই পদ্ধতিতে সর্বনিম্ন সংখ্যা ছিল-১ যা দ্বারা প্রকাশ করা হতো এবং সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ১০ লক্ষ যা হাঁটু গেড়ে বসা একজন মানুষের ছবি দিয়ে প্রকাশ করা হতো। এই সংখ্যা পদ্ধতিতে শূন্যের কোন অস্তিত্ব ছিল না। হিসেবে ব্যালেন্স না থাকলে মিসরীয়রা 'নফর' ব্যবহার করত। 'নফর' কোনোভাবেই গাণিতিক সংখ্যা শূন্য নয়। ভগ্নাংশ সংখ্যার প্রথম প্রবর্তন হয় মিসরে। এই পদ্ধতিতে স্থানীয় মানের কোন অস্তিত্ব ছিল না।
ধরা যাক মিসরীয় পদ্ধতিতে আমরা ২০২৪ লিখতে চাই সেক্ষেত্রে আমাদের লিখার কোন উপায় ছিল না কারণ এই পদ্ধতিতে শূন্যের কোন অস্তিত্ব নেই কিন্তু যদি ২৩৭৮ লিখতে চাই তাহলে দুইটি ১০০০, তিনটি ১০০, সাতটি ১০ এবং আটটি ১ এর চিহ্ন বা প্রতীক পাশাপাশি লিখে প্রকাশ করতে হবে।
মিসরীয়দের এই সংখ্যা পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে পিথাগোরাস কেবলমাত্র গণিতের উপর আলাদা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময় পিথাগোরাস সর্বপ্রথম জোড় বিজোড় সংখ্যার ধারণা প্রবর্তন করেন। তাই পিথাগোরাসকে বলা হয় পৃথিবীর প্রথম তত্ত্বীয় গণিতবিদ। পিথাগোরাস কখনোই শূন্য ব্যবহারের অনুমোদন করেননি এ বিষয়ে তিনি এবং তার অনুচরেরা অত্যন্ত কঠোর ভূমিকা পালন করেন।