বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

মিসরীয় সংখ্যা পদ্ধতি

মো. তাহমিদ রহমান প্রভাষক (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) নূরুল আমিন মজুমদার ডিগ্রি কলেজ লাকসাম, কুমিলস্না।
  ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
মিসরীয় সংখ্যা পদ্ধতি
মিসরীয় সংখ্যা পদ্ধতি

সংখ্যার প্রয়োজন হতো না। তাই এ সব পদ্ধতি সেই সময়কার গণনার যেকোনো প্রয়োজন মিটিয়ে ফেলতে পারত। মনোবিজ্ঞানী জেয়ার্ড ডায়মন্ডের লেখা থেকে পাওয়া যায় নিউগিনির কিছু গ্রামে কেবল দুটি সংখ্যা প্রচলিত ছিল। তারা এক বুঝানোর জন্য আইয়া (রুধ) এবং দুই বুঝানোর জন্য রারিডো(ৎধৎরফড়) ব্যবহার করত। কখনো চার ব্যবহার করার প্রয়োজন হলে তারা বলতো রারিডো-রারিডো এবং পাঁচ বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা তো রারিডো-রারিডো- আইয়া। ধীরে ধীরে মানুষ বসবাসের সুবিধাজনক স্থানে নগর সভ্যতা গড়ে তুলল। সময়ের পরিশ্রমায় বড় সংখ্যা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। যীশু খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় ৪০০০ বছর আগে সুমেরীয় ও সমসাময়িক অন্যান্য সভ্যতার মানুষ মাটিতে দাগ টেনে বড় সংখ্যা হিসাব করার এক পদ্ধতি বের করে ফেলল। যা আজও আমাদের কাছে ট্যালি নামে পরিচিত। এই ট্যালি গণনার সংখ্যা পদ্ধতি পৃথিবীর বহু দেশে আজও প্রচলিত আছে। সাধারণত লোকসংখ্যা গণনা, গবাদি পশু গণনা, শস্য গণনার কাজে সুমেরিয় সভ্যতায় ট্যালি পদ্ধতি ব্যবহৃত হতো। সুমেরীয় সভ্যতা মূলত গড়ে উঠেছিল নদীবেষ্টিত দেশ ইরাক ও এর দক্ষিণ-পশ্চিমাংশীয় সুমের অঞ্চলে। এই অঞ্চলের মানুষজন ছবির সাহায্যে সংখ্যাকে প্রকাশ করা শুরু করে। এই সভ্যতাকেই আবার গ্রিকরা নামকরণ করেন মেসোপটেমিও সভ্যতা হিসেবে। বেলজিয়াম প্রত্নতত্ত্ববিদ জিন ডি হ্যানজেলিন ডি ব্রাউকোর্ট ১৯৬০ সালে আফ্রিকার কঙ্গোর ফিশারমেন সেটেলমেন্টের সেমলিকি নদীর তীরবর্তী এলাকায় বেবুনের হাজার বছরের পুরনো একটি হাড় খুঁজে পান। যাতে বেশ কিছু পরিকল্পিতভাবে খোদাই করা দাগ দেখতে পাওয়া যায় যেগুলো দেখে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেন যে দাগগুলো সংখ্যা গণনার হিসাব রাখার জন্য খোদাই করা হয়েছিল। এই হাঁড়টি ওঝঐঅঘএঙ ইঙঘঊঝ নামে পরিচিত যা সংখ্যা পদ্ধতির আদি নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রত্নতাত্ত্বিক গণ এই হাঁড়টি ২৫,০০০ বছর আগের বলে দাবি করেন। বেঁবুনের এই হাঁড়টি দৈর্ঘ্য দশ সেন্টিমিটার, গারো বাদামি রঙের এই হাড়টির এক প্রান্তে কোয়ার্টসের একটি ধাঁরালো টুকরা লাগানো রয়েছে। অনেকেই এই হাড়ের খোঁদাই করা দাগগুলোকে ট্যালি চিহ্ন হিসেবে অভিহিত করেন। বিজ্ঞানীরা মনে করে হাড়টি চন্দ্র পঞ্জিকার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এটি হলো মানবজাতির প্রাচীনতম গাণিতিক হাতিয়ার। ওংযধহমড় ইড়হবং এর উপর অঙ্কিত ১৬৮ টি চিহ্ন বা দাগাঙ্কিত রেখা হারের দৈর্ঘ্য বরাবর তিনটি সমান্তরাল কলামে সাজানো। প্রতিটি কলামে দৈর্ঘ্য ও অভিযোজন ভিন্ন বিন্যাসে সজ্জিত করা। প্রথম কলামটি হাড়ের সবচেয়ে বাঁকাদিক বরাবর যা গ কলাম নামে পরিচিত। বাম এবং ডান দিকের কলামগুলোকে যথাক্রমে এ এবং উ নামে অভিহিত করা হয়। সমান্তরাল চিহ্নগুলি বিভিন্ন :ধহঃধষরুরহম অনুমানের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। অর্থাৎ এগুলো দশমিক সংখ্যার ইঙ্গিত বহন করে। তবে অনেক গণিতবিদ অভিমত দেন যে এটি সহজতম কোন গাণিতিক সংখ্যা পদ্ধতি তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। হাড়ের আবিষ্কারক 'জিন ডি হ্যানজেলিন ডি ব্রাউকোর্ট' চিহ্নগুলোকে সরল পাটিগণিতের প্রমাণক হিসেবে মত দেন। গণিতবিদ পিটার এস রুডম্যান ধারণা করেন সংখ্যাগুলো ৫০০ খ্রিষ্টপূর্বে গ্রিক সময়কালের। গণিতবিদ ডার্ক হুইলব্রম্নকের মতে ওঝঐঅঘএঙ ইঙঘঊঝ হল এমন একটি গণনা যন্ত্র যার বেস হলো ১২ সাববেস হলো ৩ এবং ৪। এটি দ্বারা সরল গুণের কাজ সম্পাদন করা হতো। নৃবিজ্ঞানী ক্যাডেল অ্যাভারেট হাড়ের অন্তদৃষ্টি ব্যাখ্যায় বলেন যে- চিহ্নের গ্রম্নপগুলোতে যে পরিমাণ সংখ্যাগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেগুলো স্পষ্ট প্রাগৈতিহাসিক সংখ্যার প্রমাণ। পূর্ণ সংখ্যার সংস্করণ ও হিন্দু- আরবীয় সংখ্যার বিকাশে অনবদ্য ভূমিকার জন্য ভারতীয় গণিতবিদ আর্যভট্টকে সংখ্যা পদ্ধতির জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়। গ্রিক দার্শনিক থেলস্‌(ঞযধষবং) সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সংখ্যা প্রকাশ করেন। থেলস -ই প্রথম সংখ্যার বিজ্ঞান চর্চা শুরু করেন। প্রথম জীবনে থেলস একজন ব্যবসায়ী ছিলেন এবং ব্যবসার মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন, শেষ জীবনে জ্ঞান অর্জন এবং পরিভ্রমণের মাধ্যমে এই অর্থ তিনি ব্যয় করেন। মিসরে অবস্থান কালে ছায়ার সাহায্যে পিরামিডের উচ্চতা নির্ণয় করে সাধারনের প্রশংসা ভাজন হন। মানুষের ছায়া যখন তার দৈর্ঘ্যের সমান হয়, সেই সময় তিনি পিরামিডের ছায়া মেপে... হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে