বাংলাদেশের ভৌগোলিক বিবরণ
উত্তর:
ক. ধলেশ্বরী যমুনা নদীর শাখানদী।
খ. কালবৈশাখী ঝড় গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ সময় সূর্য বঙ্গোপসাগরের ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে সূর্যতাপে জলভাগের উপরের বায়ু সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। বিকালের দিকে তখন নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। এ সময় দেশের উত্তর-পশ্চিম বা হিমালয়ের দিকে বায়ুর চাপ থাকে বেশি। তাই উচ্চচাপের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বায়ু প্রবল বেগে দক্ষিণের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ধাবিত হলে বজ্রসহ ঝড়বৃষ্টি হয়।
গ. শিক্ষার্থীদের দেখা নদীটি হলো কর্ণফুলী নদী। বাংলাদেশে কর্ণফুলী নদীর স্রোতকে কাজে লাগিয়েই কেবল বিদু্যৎ শক্তি উৎপন্ন করা হয়। আসামের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রায় ২৭৪ কিলোমিটার দীর্ঘ কর্ণফুলী নদী রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এটি চট্টগ্রাম ও রাঙামাটির প্রধান নদী। কর্ণফুলীর প্রধান উপনদী কাসালাং, হালদা এবং বোয়ালখালী।
চিত্র : কর্ণফুলী নদীর গতিপথ
ঘ. কর্ণফুলী নদী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বৃহত্তম নদী কর্ণফুলি। এ নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৭৪ কিলোমিটার এবং অববাহিকার আয়তন ১৪,২৪৫ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের একমাত্র জলবিদু্যৎ কেন্দ্রটি হলো কর্ণফুলী পানিবিদু্যৎ কেন্দ্র। উদ্দীপকে শিক্ষার্থীরা এই বিদু্যৎ শক্তির উৎপাদনই দেখতে পায়। ১৯৬২ সালের রাঙামাটি জেলার কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে এ বিদু্যৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়। এর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট। পানিবিদু্যৎ উৎপাদন ছাড়াও এ বাঁধের সাহায্যে বন্যা প্রতিরোধ, নৌচলাচল ও প্রায় ১০ লাখ একর জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত। কর্ণফুলী নদীপথে জাহাজযোগে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির সিংহভাগ সম্পাদিত হয়ে থাকে। কর্ণফুলী নদীর তীরে চন্দ্রঘোনায় গড়ে ওঠা দেশের বৃহত্তম কাগজ মিলে যে বাঁশ ব্যবহৃত হয় তা মূলত কর্ণফুলী নদীপথে আনা হয় এবং উৎপাদিত কাগজ কর্ণফুলী নদীপথে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। কর্ণফুলী নদী বিশেষ করে কাপ্তাই হ্রদ একটি উত্তম মৎস্যচারণ ক্ষেত্র। এর হালদা উপনদী প্রাকৃতিক মৎস্যচারণ হিসেবে গড়ে উঠেছে। এ নদীকে কেন্দ্র করে শহর, গঞ্জ, হাট-বাজার গড়ে উঠেছে এবং বহু লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে গণ্য হচ্ছে। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কর্ণফুলী নদীর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রশ্ন:
ঋতু সময় তাপমাত্রার গড় অ ফাল্গুন-জ্যৈষ্ঠ ২৮ক্ক সেঃ ই জ্যৈষ্ঠ-কার্তিক ২৭ক্ক সেঃ ঈ কার্তিক- ফাল্গুন ১৭.৭ক্ক সেঃ ক. 'ধরলা' কোন নদীর উপনদী?
খ. বাংলাদেশের নদীগুলোর নাব্য হ্রাসের প্রভাব ব্যাখ্যা কর।
গ. 'ই' ঋতুতে বাংলাদেশে অধিক তাপমাত্রা অনুভূত হয় না কেন?- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. 'অ' এবং 'ঈ' ঋতুর তুলনামূলক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:
ক 'ধরলা' ব্র?হ্মপুত্র নদীর উপনদী।
খ বাংলাদেশে নদীগুলোর নাব্য হ্রাসের প্রভাব সামগ্রিক পরিবেশকে বিপর্যস্ত করছে। বাংলাদেশে নদী ও জলাশয়গুলো ভরাটের কারণে তথ্য নাব্য হারানোর কারণে বর্ষাকালে পানির প্রবাহধারা বাধাগ্রস্ত হয় এবং দুকূল উপচিয়ে বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। আর শুষ্ক মৌসুমে ঐগুলোতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় নৌচলাচল, সেচ ব্যবস্থা ও মাছচাষ ব্যাহত হচ্ছে। প্রাকৃতিক পানির জলাধারের সংরক্ষণ ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হওয়ায় শহরগুলোতে পানির সরবরাহ কমে যাচ্ছে ও পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। এভাবে এদেশে নদীগুলোর নাব্য হ্রাস সামগ্রিক পরিবেশ ও জীবনের জন্য বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।
গ 'ই' ঋতুতে অর্থাৎ বর্ষা ঋতুতে মেঘলা আকাশ এবং প্রচুর বৃষ্টিপাতের জন্য বাংলাদেশে অধিক তাপমাত্রা অনুভব হয় না। উদ্দীপকের ছকে উলিস্নখিত হয়েছে 'ই' ঋতু জ্যৈষ্ঠ - কার্তিক মাসে বিস্তৃত এবং গড় তাপমাত্রা ২৭ক্ক সেলসিয়াস। বাংলাদেশে জুন থেকে অক্টোবর মাস (জ্যৈষ্ঠ কার্তিক) পর্যন্ত বর্ষাকাল। অর্থাৎ গ্রীষ্ম ও শীতের মাঝামাঝি বৃষ্টিবহুল সময়কে বর্ষাকাল বা বর্ষা ঋতু বলে। জুন মাসের প্রথম দিকে মৌসুমি বায়ুর তাপমাত্রার সঙ্গে সঙ্গে বর্ষাকাল শুরু হয়ে যায়। বর্ষা ঋতুর গড় তাপমাত্রা ২৭ক্ক সেলসিয়াস। এতদসত্ত্বেও বর্ষাকালে এদেশে তেমন তাপমাত্রা অনুভূত হয় না। বর্ষাকালে সূর্য বাংলাদেশে প্রায় লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু আকাশে মেঘ থাকে এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, ফলে এ সময় অধিক তাপমাত্রা অনুভূত হয় না।
ঘ বাংলাদেশে 'অ' ও 'ঈ' ঋতু হচ্ছে যথাক্রমে গ্রীষ্মকাল ও শীতকাল। তাপমাত্রা বৃষ্টিপাত ও বায়ুপ্রবাহগত বৈশিষ্ট্যে এ দুটি ঋতু সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। বাংলাদেশের সবচেয়ে উষ্ণ ঋতু হলো গ্রীষ্মকাল। এ সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ক্ক সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০ক্ক সেলসিয়াস। গড় হিসেবে এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮ক্ক সেলসিয়াস পরিলক্ষিত হয়। এপ্রিল উষ্ণতম মাস, এ সময় সমুদ্র উপকূল থেকে দেশের অভ্যন্তরভাগে তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। অপরদিকে আমাদের দেশে শীতকালে তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে। এ সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯ক্ক সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ক্ক সেলসিয়াস। জনুয়ারি শীতলতম মাস এবং এ মাসের গড় তাপমাত্রা ১৭দ্ধ৭ক্ক সেলসিয়াস। শীতকালে দেশের উপকূল ভাগ থেকে উত্তর দিকে তাপমাত্রা কম থাকে। গ্রীষ্মকালে উত্তর গোলার্ধে সূর্যের উত্তরায়ণের জন্য বায়ুচাপের পরিবর্তন ঘটে। এ সময় বাংলাদেশে দক্ষিণ দিক থেকে আগত উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ুপ্রবাহ অধিক উত্তাপের প্রভাবে ও উপরে উঠে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আগত শীতল ও শুষ্ক বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে সংঘর্ষে বজ্রসহ ঝড়বৃষ্টি হয়। অন্যদিকে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আগত শীতল মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকে। বাংলাদেশে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের শতকরা প্রায় ২০ ভাগ গ্রীষ্মকালে হয়। এ অপরদিকে শীতকালে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না বললেই চলে। উপরের আলোচনা থেকে তাই বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশে গ্রীষ্ম ও শীত খুব সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়