ঘঁসনবৎ এর বাংলা প্রতিশব্দ 'সংখ্যা'। সংখ্যার ব্যবহার যে আসলে কবে শুরু হয়েছিল সেটা একটা রহস্য। কে কোথায় কবে সংখ্যা আবিষ্কার করেছিল তা বলা মুশকিল। তবে ধারণা করা হয় আদি মানব নিজেদের প্রয়োজনে গণনার চেষ্টা থেকেই সংখ্যার আবিষ্কার করেছে। নৃতাত্ত্বিকদের মতে প্রায় ২০ লক্ষ বছর পূর্বে মানব জীবনের উৎপত্তি ঘটে। মানুষ তখন বসবাস করত বনে জঙ্গলে পাহাড়ের গুহায়। সভ্যতার ছোঁয়া থেকে মানুষ তখন ছিল দুরহস্ত। বন্যপ্রাণী ও গাছের ফলমূল ছিল মানুষের ক্ষুধা নিবারণের উপায়। আধুনিক সভ্য মানবের মতো জীবন এত সহজ ছিল না। বৈরী আবহাওয়া ও বন্যহিংস্র জীবজন্তুর সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে মানুষ হাতিয়ারের ব্যবহার শুরু করল। পাথর হলো মানব আবিষ্কৃত প্রথম হাতিয়ার। তাই নৃতাত্ত্বিকগণ সেই যুগকে পুরাতন প্রস্তর যুগ হিসেবে অভিহিত করে। সময়ের পরিক্রমায় বন্য মানুষের জীবনধারায় পরিবর্তন আসে। ক্রমে ক্রমে পৃথিবীতে ঘটে নানা বিবর্তন। ছয় লক্ষ বছর আগের বরফ আচ্ছাদিত পৃথিবী একসময় সবুজে ভরে ওঠে। ঠিক সেই সময়কালে মানুষ পাথরে পাথর ঘষে আগুন জ্বালিয়ে ফেলে। পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি হয় এক নব অধ্যায়। এরপর থেকে হিংস্র জন্তুর হাত থেকে বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ দলবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করে। চাহিদার কারণে মানুষ অপেক্ষাকৃত বড় পশু শিকার করা শুরু করে এবং আগুনে ঝলসে খেতে অভ্যস্ত হয়। দলবেঁধে শিকার করার প্রয়োজনে আস্তে আস্তে মানুষ ইশারা ও আওয়াজ করা শিখে। এভাবেই বন্য ও গুহাবাসী মানুষ প্রকৃতির উপর নির্ভর করে পৃথিবীর বুকে কয়েক লক্ষ বছর অতিবাহিত করে ফেলে। সময়ের পরিক্রমায় পৃথিবীর বিভিন্ন ভৌগোলিক রূপান্তরের সাথে সাথে মানুষেরও পরিবর্তন হয়। নৃতত্ত্ববিদ ও ঐতিহাসিকদের মতে প্রায় এক লক্ষ বছর আগে সর্বপ্রথম আফ্রিকায় বুদ্ধিমান মানুষের জন্ম হয়। আফ্রিকা থেকে এই বুদ্ধিমান মানুষেরা ইউরোপ, এশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পরে। প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে এশিয়ার বেরিং প্রণালী হয়ে আফ্রিকানরা উত্তর আমেরিকায় পাড়ি জমায়। এই সকল অঞ্চল বরফে আচ্ছন্ন থাকায় মানুষের পদচিহ্ন রাখতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।কাল পরিক্রমায় উত্তর আমেরিকা থেকে মানুষ দক্ষিণ আমেরিকায় প্রবেশ করে। আবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপসমূহ পাড়ি দিয়ে মানুষ অস্ট্রেলিয়ায় বসতি গড়ে তোলে। বরফাচ্ছন্ন যুগ পৃথিবীতে বহুদিন স্থায়ী ছিল এ সময় আদি মানুষ ইশারায় ভাব বিনিময় করত এবং দলবদ্ধ হয়ে শিকার করত। শিকারকে তারা ১,২,৩ ইঙ্গিতের মাধ্যমে প্রকাশ করত এর অধিক হলেই তারা অনেক হিসেবে অভিহিত করত। আস্তে আস্তে পৃথিবী উষ্ণ হতে থাকে এবং বড় আচ্ছাদিত অঞ্চল গলে বিভিন্ন নদীর উদ্ভব হয়, নদীপথে পানি প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে পতিত হয় ফলে মানুষ নৌপথে অভ্যস্ত হওয়া শুরু করে। নৌপথে চলতে গিয়ে দূর আকাশে রাতের চাঁদের গতিবিধি লক্ষ্য করে হয়তো মনের অজান্তেই সময়ের হিসাব শুরু করে। দূর আকাশের চাঁদের পরিবর্তন দেখে দেখে মানুষ একসময় বুঝতে পারে একটি পূর্ণচন্দ্র হতে সময় লাগে ৩০ দিন। ধারণা করা হয় এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করেই গড়ে ওঠে প্রাচীন ট্যালি পদ্ধতি। একসময় বরফ যুগের অবসান হলো আর আদি মানব পড়ল এক খাদ্য সংকটে। কারণ পশু শিকার করে চলত তাদের জীবনধারণ কিন্তু পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ায় বরফ যুগের সেই পশুও হারিয়ে গেল। ফলে আদি মানব ক্ষুদা নিবারণে নতুন করে নির্ভরশীল হওয়া শুরু করল বিভিন্ন ফল, লতা-পাতা, বীজ ও শস্যের উপর। আস্তে আস্তে মানব সমাজ দলবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করলো এবং জীবন ধারণে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ফল শস্য উৎপাদন করা শিখলো। বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবৃত্তি সৃষ্টি হল। বিভিন্ন বন জঙ্গল থেকে মানুষ শস্য ফলমূল সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা শুরু করল এবং ফলে বসবাস ও জীবিকার সুবিধার কথা চিন্তা করে মানুষ স্থায়ী জায়গায় অবস্থান করা শুরু করল। মানুষ বুঝতে শিখল বিচ্ছিন্নভাবে থাকার চাইতে দলবদ্ধভাবে এক স্থানে অবস্থান করে বাস করা বেশি নিরাপদ ও জীবিকা নির্বাহ করা তুলনামূলকভাবে সহজ। আদি মানব জীবনযাপনের এই সময়কাল নৃতাত্বিকদের ভাষায় প্রস্তর যুগ নামে অভিহিত। এভাবেই প্রাচীন মানুষ যখন সভ্য হওয়া শুরু করল অর্থাৎ যখন থেকে সভ্যতার বিবর্তন ঘটা শুরু করল ঠিক তখন থেকেই ভাব প্রকাশ, হিসাব-নিকাশ নানা ক্ষেত্রে সংখ্যার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। জন্ম লগ্ন থেকে গণনার বিষয়টি তথা সংখ্যা পদ্ধতি এতোটা উন্নত ছিল না। মানুষ যখন স্থায়ীভাবে কৃষি কাজে নিয়োজিত হলো, প্রয়োজনের তাগিদে তারা হাতিয়ার উন্নত করার দিকে মনোযোগ দিল। ফলে উৎপাদন বেড়ে গেল। খাবার পরে উদ্বৃত্ত শস্য হিসাব রাখার জন্য মাটিতে দাগ টেনে, কাঠি বা নুড়ি পাথর ব্যবহার করে অথবা দড়িতে গিট দিয়ে কিংবা আঙ্গুলের সাহায্যে হিসাব রাখা শুরু করল। বিজ্ঞানীদের ধারণা আজকে থেকে প্রায় বিশ হাজার বছর পূর্বে এভাবেই প্রথম মানুষ সংখ্যা দিয়ে গণনা শুরু করে। সভ্যতার শুরুতে মানুষের গণনার জন্য বড় বড়... হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়