দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

প্রকাশ | ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
গ. উদ্দীপকে দ্বিতীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক কার্যাবলির সাথে জড়িত জনসমষ্টি হলো কামার শ্রেণির মানুষ। দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যাবলিতে মানুষ তার প্রথম পর্যায়ের কার্যাবলি দ্বারা উৎপাদিত সামগ্রীকে গঠন করে, আকার পরিবর্তন করে এবং উপযোগিতা বৃদ্ধি করে। কামার পেশাগতভাবে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার্য লৌহজাত সামগ্রী তৈরি করেন। এক্ষেত্রে প্রকৃতির মধ্যে লৌহ খনিজ উত্তোলনে যারা জড়িত আছেন তাদের উৎপাদিত লৌহ তারা ব্যবহার করেন। এজন্য তাদের কার্যাবলি দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক কার্যাবলির অন্তর্গত। কামার সম্প্রদায়ের মানুষ কাঁচা লোহা কিনে এনে এর আকার পরিবর্তন করে উপযোগিতা বৃদ্ধি করে। কামারদের প্রস্তুতকৃত সামগ্রীর মধ্যে দা, কোদাল, কুড়াল, শাবল, বঁটি, পেরেক, ছুরি, চিমটি ইত্যাদি উলেস্নখযোগ্য। সুতরাং কামার শ্রেণির মানুষদের কার্যাবলি দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক কার্যাবলি। ঘ. উদ্দীপকে তৃতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক কার্যাবলির সাথে জড়িত জনসমষ্টি হলো দোকানদার, নার্স, শিক্ষক ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মানুষ। তৃতীয় পর্যায়ের কার্যাবলিতে মানুষ প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যাবলি থেকে উৎপাদিত বস্তুসমূহের উপযোগিতা বৃদ্ধি করে এবং সেবাকার্য সম্পাদন করেন। দোকানদার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যাবলি থেকে উৎপাদিত বস্তুসমূহ কিনে আনেন এবং বিক্রি করেন। নার্স ও শিক্ষক সেবাকার্য সম্পাদন করেন। এক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যাবলি থেকে অর্জিত জ্ঞান তারা বিতরণ করেন। ব্যবসায়ী প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যাবলি থেকে উৎপাদিত বস্তুসমূহের উপযোগিতা বৃদ্ধি করেন। কোনো অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্যের উদ্বৃত্তাংশ ঘাটতি অঞ্চলে প্রেরণ করে ওই বস্তুর উপযোগিতা বাড়িয়ে তোলেন। সুতরাং দোকানদার, নার্স, শিক্ষক ও ব্যবসায়ীর বৈশিষ্ট্যাবলি তৃতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের ভৌগোলিক বিবরণ বাংলাদেশের অবস্থান : বাংলাদেশ ২০ক্ক৩র্৪ উত্তর অক্ষরেখা থেকে ২৬ক্ক৩র্৮ উত্তর অক্ষরেখার মধ্যে এবং ৮৮ক্ক০১র্ পূর্ব দ্রাঘিমারেখা থেকে ৯২ক্ক৪১র্ পূর্ব দ্রাঘিমারেখার মধ্যে অবস্থিত। আয়তন : বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের নদী অঞ্চলের আয়তন ৯,৪০৫ বর্গকিলোমিটার। বনাঞ্চলের আয়তন ২১,৬৫৭ বর্গকিলোমিটার। সীমা : বাংলাদেশের উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় ও আসাম রাজ্য; পূর্বে আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম রাজ্য ও মায়ানমার; দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য অবস্থিত। বাংলাদেশের প্রধান নদনদী : বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা প্রায় ৭০০। পদ্মা, ব্র?হ্মপুত্র, যমুনা, মেঘনা ও কর্ণফুলী বাংলাদেশের প্রধান নদনদী। পদ্মা : বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম নদী পদ্মা। এটি হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে রাজশাহী অঞ্চলের দক্ষিণে কুষ্টিয়ার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ব্রহ্মপুত্র : এ নদ হিমালয় পর্বতের কৈলাশ শৃঙ্গের নিকটে মানস সরোবর থেকে উৎপন্ন হয়েছে এবং কুড়িগ্রাম জেলার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যমুনা : এ নদী ময়মনসিংহ জেলার দেওয়ানগঞ্জের কাছে ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে দৌলতদিয়ার কাছে পদ্মার সাথে মিলিত হয়েছে। মেঘনা : আসামের বরাক নদী নাগা-মণিপুর অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশে সিলেট জেলায় প্রবেশ করেছে। কর্ণফুলী : আসামের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রায় ২৭৪ কিলোমিটার দীর্ঘ কর্ণফুলী নদী রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। নদী ও জলাশয় ভরাটের কারণ, প্রভাব ও প্রতিরোধ : বাংলাদেশের বহুবিধ প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে নদী ও জলাশয় ভরে যাচ্ছে যার ফলে দ্রম্নত নদী ও জলাশয়গুলো মরে যাচ্ছে। বন্যা দেখা যাচ্ছে, শুষ্ক মৌসুমে সেচ ব্যবস্থা ও মাছ চাষ ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থা প্রতিরোধের জন্য নদী ও জলাশয়গুলো ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। দখলীয় নদী ও জলাশয় উদ্ধার করতে হবে। মৌসুমি বায়ু : মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। জুন মাসের প্রারম্ভে বঙ্গোপসাগর থেকে আগত উষ্ণ ও আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় বাধাপ্রাপ্ত হলে বৃষ্টিপাত হয়। \হদক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বাধীন রাষ্ট্র- বাংলাদেশ। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এ দেশের মধ্যভাগ দিয়ে অতিক্রম করেছে- কর্কটক্রান্তি রেখা। বাংলাদেশ- ২০ক্ক৩৪র্ থেকে ২৬ক্ক৩৮র্ উত্তর অক্ষরেখার মধ্যে অবস্থিত। বাংলাদেশ- ৮৮ক্ক০১র্ থেকে ৯২ক্ক৪১র্ পূর্ব দ্রাঘিমারেখার মধ্যে অবস্থিত। বাংলাদেশে বৈচিত্র্যতা আনয়ন করেছে- ভূপ্রকৃতি, নদনদী ও বঙ্গোপসাগরের অবস্থান। ১ নটিক্যাল মাইল ু ১.৮৫২ কিলোমিটার। বাংলাদেশের টেরিটোরিয়াল সমুদ্রসীমা- ১২ নটিক্যাল মাইল। বাংলাদেশের উপকূলীয় ভূখন্ড- সমুদ্রে ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে যার ভৌগোলিক নাম মহীসোপান। ১৪ই মার্চ ২০১২ সালে বাংলাদেশ মিয়ানমার মামলার রায়ের ফলে বাংলাদেশ এক লক্ষ বর্গ কি.মি-এর বেশি জলসীমা পায়। বাংলাদেশের নদী অঞ্চলের আয়তন- ৯,৪০৫ বর্গকিলোমিটার। দেশের কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পরিবহন ব্যবস্থার ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে- ভূপ্রকৃতি। টারশিয়ারি যুগে হিমালয় পর্বত উত্থিত হয়েছে যা- বেলেপাথর, শেল ও কর্দম দ্বারা গঠিত। উত্তর-পশ্চিমাংশের বরেন্দ্রভূমি, মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এবং কুমিলস্না জেলার লালমাই পাহাড়- পস্নাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহের অন্তর্গত। টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ এবং পস্নাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহ ছাড়া- সমগ্র বাংলাদেশ নদীবিধৌত এক বিস্তীর্ণ সমভূমি। বছরের পর বছর বন্যার সঙ্গে পলিবাহিত মাটি সঞ্চিত হয়ে- সাম্প্রতিককালের পস্নাবণ সমভূমি গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ- পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ বদ্বীপ। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ তাজিনডং যার উচ্চতা- ১,২৩১ মিটার। বাংলাদেশের পস্নাবণ সমভূমির আয়তন প্রায়- ১,২৪,২৬৬ বর্গকিলোমিটার। খুলনা ও পটুয়াখালী অঞ্চল এবং বরগুনা জেলার কিয়দাংশ নিয়ে গঠিত- সমভূমি। প্রশ্ন: একদল শিক্ষার্থী দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে শিক্ষা ভ্রমণে যায়। সেখানে তারা দেখতে পায় একটি নদীর স্রোতকে কাজে লাগিয়ে এক ধরনের শক্তি উৎপন্ন করা হচ্ছে। ক. ধলেশ্বরী কোন নদীর শাখানদী? খ. কালবৈশাখী ঝড় কীভাবে সংঘটিত হয়? গ. শিক্ষার্থীদের দেখা নদীটির গতিপথ বর্ণনা কর। ঘ. বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উক্ত নদীটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়