মানব শরীর
শ্বসনতন্ত্র : আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়া বাঁচতে পারি না। আমাদের এই শ্বাস-প্রশ্বাসকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমাদের ফুসফুস ও তার সঙ্গে আরও কিছু অঙ্গ কাজ করছে। আমাদের শরীরের শ্বাস-প্রশ্বাসের পথ, ফুসফুস এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের পেশিগুলোর সমন্বয়ে গঠিত হয় শস্বনতন্ত্র। শস্বনতন্ত্র বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে, আর কার্বন ডাই অক্সাইডকে বাতাসে ফিরিয়ে দেয়। সংবহনতন্ত্র : আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের ভেতর যোগাযোগের জন্য রক্তের মাধ্যমে তৈরি হওয়া একটি কার্যকর পরিবহন ব্যবস্থা আছে। হৃৎপিন্ড শরীরের রক্ত সঞ্চালন করে, রক্তনালীর মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও কোষে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করে এবং সেসব জায়গায় সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থ পরিবহণ করে। এই হৃৎপিন্ড, রক্ত এবং রক্তনালীগুলোর সমন্বয়ে গঠিত হয় সংবহনতন্ত্র। শরীরের বিভিন্ন অংশে পুষ্টি উপাদান পৌছেঁ দেওয়া, বর্জ্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি আমাদের শরীরের তাপমাত্রা সবসময় যে একই থাকে তা নিয়ন্ত্রণ করে এই সংবহনতন্ত্র। পরিপাকতন্ত্র : আমরা সবাই ক্ষুধা পেলে খাবার খাই। এই খাবার কিন্তু সরাসরি আমাদের শরীরে কাজে লাগে না। খাবার থেকে শক্তি ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করে শরীরকে কাজের জন্য উপযোগী করে আমাদের পরিপাকতন্ত্র। মুখ, খাদ্যনালী, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদন্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত হয় পরিপাকতন্ত্র। এই তন্ত্র আমাদের গ্রহণ করা খাদ্যকে ব্যবহারযোগ্য পুষ্টি উপাদানে ভেঙ্গে দেয়, যা পরে আমাদের শরীরে শোষিত হয়। এই তন্ত্রের শেষ অংশ হচ্ছে মলদ্বার। যা আমাদের খাবারের অব্যবহারযোগ্য বা বর্জ্য অংশকে শরীর থেকে বের করে দেওয়ার পথ হিসেবে কাজ করে। রেচনতন্ত্র : আমাদের শরীর থেকে তরল বর্জ্য বা মূত্র যাতে শরীরের বাইরে বের হয়ে আসতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের রেচনতন্ত্র কাজ করে, যা মূলত আমাদের বৃক্ক, মূত্রনালি এবং মূত্রথলি ইত্যাদি অঙ্গ মিলে তৈরি হয়। মূত্র উৎপাদন বা এর মাধ্যমে রক্ত থেকে ক্ষতিকর নাইট্রোজেন যৌগ অন্যান্য বর্জ্য অপসারণ করে এই তন্ত্র। স্নায়ুতন্ত্র : আমরা যে চিন্তা করতে পারি, সিদ্ধান্ত নিতে পারি, কারও ডাকে সারা দিতে পারি, শীত- গরম উপলব্ধি করতে পারি তা সম্ভব হয় আমাদের স্নায়ুতন্রে কারণে। আমাদের মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের ভেতরে অবস্থানরত মেরুরজ্জু এবং আমাদের শরীরের নানাস্থানে ছড়িয়ে থাকা স্নায়ু সংযোগ মিলে তৈরি হয় আমাদের স্নায়ুতন্ত্র। গরম কোন জিনিস হাতে লেগে গেলে আমরা যখন হতি সরিয়ে নেয়, তখন আসলে কি ঘটে? জিনিসটা যে গরম সেই তথ্য হাতের ত্বকে থাকা স্নায়ুতন্ত্র মেরুদন্ডের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কে পৌছেঁ দেয়। মস্তিষ্কেও কাজ হলো সেসকল তথ্য বিশ্লেষণ করে আমাদেও অনুভূতি ও সাড়া দেওয়ার তাড়না সৃষ্টি করে। অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতন্ত্র (ঊহফড়পৎরহব ংুংঃবস) : আমাদের শরীরের বিভিন্ন কাজের জন্য শরীরের ভেতরের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে কিছু জৈব রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ হয়। এদের কোনোটি শরীরের একটি অংশে তৈরি হয়, কিন্তু তারপর শরীরের বিভিন্ন অংশে গিয়ে তাদের কাজ সম্পন্ন করে। এ ধরনের পদার্থকে বলা হয় হরমোন। এই হরমোনগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে থাকা গ্রন্থিতে তৈরি হয়, আর এই গ্রন্ত্রিগুলো মিলে তৈরি হয় অন্তঃক্ষরা গ্রন্ত্রিতন্ত্র। শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সমন্বয়ের জন্য এই তন্ত্র রাসায়নিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করে। প্রজননতন্ত্র (জবঢ়ৎড়ফঁপঃরাব ংুংঃবস) : অন্য সকল জীবের মতো মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধি এবং এর মাধ্যমে মানব প্রজাতির ধারাবাহিকতাকে নিশ্চিত করার জন্য আমাদের শরীরে রয়েছে প্রজননতন্ত্র। এই তন্ত্রের কিছু অংশ বাহ্যিক অঙ্গ হিসেবে দেখা যায় যা নারী-পুরুষের শরীরে আলাদা। বয়ঃসন্ধি সকল জীবের অন্যতম গুরত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার শারীরিক বৃদ্ধি এবং পরবর্তী বংশধর তৈরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। আমরা যখন মাঠে কোনো ফসলের বীজ বপন করি, তখন বীজগুলো থেকে অঙ্কুর গজায়, তারপর তারা ধীরে ধীরে বড় হয়। এক পর্যায়ে সেই গাছে আবার ফুল আসে, তাতে আবার নতুন বীজ তৈরি হয়। এভাবেই প্রকৃতিতে জীবসমূহ তাদের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নতুন প্রজন্ম তৈরির জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে। মানব প্রজাতির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্যি। আমরা চারপাশে তাকালে ছোট ছোট শিশু দেখতে পাই, তারপর তাদের তুলনায় বড় কিশোর বয়সিদের দেখি। আমাদের বাবা-মায়েরা পূর্ণ বয়স্ক মানুষ আবার আমাদের দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানিরা হয়তো আরেকটু বেশি বয়স্ক। এই যে নানান বয়সের মানুষ, তাদের শরীরের বৃদ্ধি কিন্ত ধাপে ধাপে হয়। আমাদের পরিবারে বা আত্মীয়স্বজনদের নতুন শিশু জন্ম নেওয়ার পরপরই কেবল আমরা তাদেরকে চোখের সামনে বড় হতে দেখি। কিন্তু মানব শিশু জন্মের এই প্রক্রিয়াটি কিন্তু শুরু হয় আরও অনেক আগে থেকে মায়ের পক্ষে। সেই বিষয়ে আমরা উপরের শ্রেণিতে আরও বিস্তারিত জানবো। জন্ম নেওয়ার পর শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি হতে হতে একপর্যায়ে তারা কৈশোরে উত্তীর্ণ হয়। এই যে তোমরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে, তোমরা কিন্তু এখন কৈশোরে আছ। একসময় তোমরাই শিশু ছিলে। তোমাদের শরীর ক্রমাগত বড় হচ্ছে। শরীরের এই বড় হওয়া কিন্তু কেবল আমাদের উচ্চতায় বড় হওয়া নয়, আমাদের শরীরের যত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে তারা সবাই কিন্তু বড় হচ্ছে। আমাদের বুকের ভেতরের তংপিও (রক্ত সংবহনতন্ত্রের অঙ্গ), মাথার ভেতরের মস্তিষ্ক (স্নায়ুতন্ত্রের অঙ্গ) কিংবা পেটের ভেতরের বৃক্ক বা কিডনি (রেচনতন্ত্রের অঙ্গ) ু এরা সবাই কিন্তু তোমাদের বেড়ে ওঠা শরীরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বড় হচ্ছে। বয়সের একটি নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছালে আমাদের শরীরের প্রজননতন্ত্রের দৃশ্যমান অঙ্গগুলোও কিন্তু বড় হতে থাকে। ছেলে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে এই অঙ্গগুলো তাদের আলাদা বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। একটু পরেই আমরা সেই পরিবর্তনগুলো সম্বন্ধে জানবো, কিন্তু তার আগে বলা দরকার, এই প্রজনন অঙ্গগুলো সম্বন্ধে আমাদের নতুন অনুভূতি তৈরি হয় কিন্তু আমাদের শরীরের ভেতরের বিভিন্ন পরিবর্তনের ফলে। একটু আগে তন্ত্রসমূহের আলোচনায় আমরা অন্তঃক্ষরা গ্রন্ত্রির সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। এসব গ্রন্ত্রি থেকে এক ধরনের বিশেষ রাসয়নিক সংকেতবাহী পদার্থ নিঃসরণ হয় যাদেরকে আমরা সাধারণ নামে 'হরমোন' হিসেবে জানি। \হপরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়