মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী

হাবিবুর রহমান বাপ্পা, সহকারী শিক্ষক, শহীদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
  ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী
ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী

মানব শরীর

সকল প্রাইমেট জাতীয় প্রাণীদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। আর তা হচ্ছে এদের শরীরের মেরুদন্ডের উপস্থিতি। আমাদের পিঠের মাঝ বরাবর যে খন্ড খন্ড হাড়ের উপস্থিতি আমরা হাত দিলেই অনুভব করতে পারি এটিই আমাদের মেরুদন্ড, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ংঢ়রহব।

আমাদের শরীরের দিকে তাকালে আমরা চোখ, কান, নাক, মাথা, শরীরের ত্বক বা চামড়া, নখ ইত্যাদি দেখতে পাই। এছাড়া আমাদের শরীরের ভেতরে রয়েছে আমাদের হৃৎপিন্ড (যবধৎঃ), যকৃত (ষরাবৎ). (ষঁহমং), (শরফহবু), অগ্নাশয় (ঢ়ধহপৎবধং) ইত্যাদি। এগুলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ। আমাদের পরিচিত অন্যান্য প্রাণী, যেমন- হাঁস, মুরগি, গরু এদেরও কিন্তু এসব অঙ্গ রয়েছে।

আমাদের নখ আমরা খালি চোখেই দেখতে পাই। হাত-পায়ের নখ বড় হলে আমরা কেটে ফেলি। এই নখকে যদি আমরা ক্রমাগত ছোট ছোট টুকরো করে কাটতে থাকি, তবে একপর্যায়ে এসব টুকরোকে আর খালি চোখে দেখা যাবে না। তখন অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে এগুলো দেখতে হবে। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে আমরা শেষ পর্যন্ত নখের কোষ দেখতে পাব। আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি কোষ হচ্ছে আমাদের। গঠন ও কাজের একক। মানুষের মতো জটিল গঠনের জীবের জন্য কোটি কোটি কোষ দরকার। এসব কোষ একে অপরের সঙ্গে মিলে শেষ পর্যন্ত আমাদের মতো মানুষের গঠন তৈরি করে।

আণুবীক্ষণিক কোষ থেকে শুরু করে খালি চোখে দেখতে পাওয়া মানব শরীরের এই গঠনের বিষয়গুলো বিজ্ঞানীরা নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে আলোচনা করেন।

কোষ (পবষষ) = টিসু্য বা কলা (ঃরংংঁব) অঙ্গ (ড়ৎমধহ) >তন্ত্র (ংুংঃবস)

কোষ হচ্ছে গঠনের এই ধাপের সবচেয়ে নিচের কিংবা বলা যেতে পারে সবচেয়ে সরল একক। আর তন্ত্র বা সিস্টেম হচ্ছে এই গঠনের সবচেয়ে ওপরের ধাপ। আমরা নিচে এই বিষয়গুলো সম্বন্ধে আলোচনা করব।

কোষ : একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরে মোট কত কোষ থাকে? এটি নিয়ে বিজ্ঞানীদের ভেতরে অনেক দিনের প্রশ্ন ছিল। তথ্য অনুযায়ী এই সংখ্যা প্রায় ৩০-৪০ ট্রিলিয়ন (৩০০০০০০-৪০০০০০০ কোটি)। এই কোটি কোটি কোষ মানব শরীরের বৃদ্ধি, বিপাক, উদ্দীপনা এবং প্রজননে ভূমিকা রাখে।

কলা বা টিসু্য : মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের কোষ রয়েছে। এদেরকে চারটি মৌলিক শ্রেণিতে বিভক্ত করা যেতে পারে। এই চার ধরনের কোষ, তাদের চারপাশের উপাদানের সঙ্গে মিলে যে বিশেষ গাঠনিক একক তৈরি করে এদেরকে বলা হয় টিসু্য বা কলা। চার শ্রেণির কোষের উপর ভিত্তি করে মানব শরীরের টিসু্যগুলো চারটি ধরনে ভাগ করা যায়।

ধরন -১ : এই ধরনের কলা বা টিসু্য আমাদের শরীরের বাইরের আবরণ এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গ ও শরীরের গহ্বরগুলোর বাইরের স্তরটিকে ঢেকে রাখে। এদেরকে বলা হয় বহিরাবরণীয় কলা বা এপিথেলিয়াল টিসু্য (বঢ়রঃযবষরধষ :রংংঁব)।

ধরন-২ : এ ধরনের টিসু্য সংকোচন ও প্রসারণ করতে সক্ষম এবং শরীরের পেশি গঠন করে। এদেরকে বলা হয় পেশি কলা বা মাসল টিসু্য (সঁংপষব :রংংঁব)।

ধরন-৩ : এ ধরনের টিসু্য আমাদের শরীরের সংবেদনশীলতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্নায়ুতন্ত্র তৈরি করে। এদেরকে বলা হয় স্নায়ুকলা বা নার্ভ টিসু্য (হবৎাব :রংংঁব)।

ধরন-৪ : এই টিসু্যগুলো দূরবর্তী কোষগুলোকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংযুক্ত করে, এবং শরীরের কাঠামোকে একত্রিত করে। এদেরকে বলা হয় সংযোজক কলা বা কানেক্টিভ টিসু্য (পড়হহবপঃরাব ঞরংংঁব)।

অঙ্গ (ঙৎমধহ)

উপরে উলিস্নখিত চার ধরনের টিসু্য বা কলা মিলে মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ তৈরি করে। এক একটি অঙ্গ হচ্ছে একাধিক টিসু্যর সমন্বয়ে তৈরি, যা একটি স্বতন্ত্র গাঠনিক এবং কার্যকরী একক তৈরি করে। মানব শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ আছে। এসব অঙ্গ আমাদের বৃদ্ধি ও বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- হৃৎপিন্ড, যকৃৎ, ফুসফুস, বৃক্ক ইত্যাদি হচ্ছে আমাদের শরীরের এক একটি অঙ্গ।

মানব শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ হলো আমাদের ত্বক (ংশরহ)

তন্ত্র (ঝুংঃবস)

আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কিন্তু আলাদা আলাদা বা বিছিন্নভাবে কাজ করে না। বরং এদের কোনো কোনোটি একসঙ্গে মিলে আমাদের শরীরে একই ধরনের কাজ করে। কাজের ভিত্তিতে এই অঙ্গগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রতিটি ভাগকে বলা হয় একটি সিস্টেম বা তন্ত্র। যেমন আমাদের হৃৎপিন্ড হচ্ছে এমন একটি অঙ্গ যার গঠনে উপরে উলিস্নখিত চার ধরনের টিসু্যই অংশগ্রহণ করে। এই অঙ্গটির কাজ হচ্ছে, আমাদের সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালনে ভূমিকা রাখা। তবে রক্ত সঞ্চালনের এই কাজটি হৃৎপিন্ড একা করতে পারে না। এই কাজের জন্য এটিকে রক্তনালিগুলোর সমন্বয়ে গঠিত একটি সমন্বিত ব্যবস্থা বা সিস্টেমের মাধ্যমে কাজ করতে হয়। এই পুরো সিস্টেমকে বলা হয় রক্ত সংবহনতন্ত্র। এভাবে আমাদের শরীরের নানা অঙ্গ যেগুলোর নাম আমরা জানি, যেমন কিডনি, লিভার, ফুসফুস, চোখ, নাক এবং অন্যান্য অঙ্গসমূহ সেগুলোও কাজের জন্য অন্য অঙ্গ এবং টিসু্যর ওপর নির্ভর করে।

নিচে আমরা মানব শরীরের প্রধান তন্ত্রগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয় জানবো।

ত্বকতন্ত্র (ওহঃবমঁসবহঃধৎু ংুংঃবস) : অনেক সময় খেলতে গিয়ে বা ছোটখাটো দুর্ঘটনায় হাত- পায়ের চামড়া কেটে গিয়ে রক্তপাত হয়। আমাদের পুরো শরীরের ওপরে এই যে চামড়া বা ত্বকের আবরণ, তা বাইরের জগতের সঙ্গে আমাদের শরীরের একটা আবরণ বা প্রতিরক্ষা দেওয়াল তৈরি করে। এবং আমাদের শরীরকে সুরক্ষিত রাখে। আমাদের শরীরের এই ত্বক দ্বারা গঠিত তন্ত্র হচ্ছে তুরতম্ভ। ক্ষতিকর অণুজীব (গরপৎড়ড়ৎমধহরংসং) এবং রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা আক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে ত্বকতন্ত্র।

পেশি ও কঙ্কালতন্ত্র : আমরা যখন হাটিঁ কিংবা একটি গস্নাসে করে পানি পান করি, তখন আমাদের শরীরের হাড় এবং তার সংশ্লিষ্ট মাংসপেশি এই কাজগুলোর ভার সহ্য করে এবং প্রয়োজনীয় সঞ্চালন শক্তি দেয়। আমাদের শরীরের হাড় বা কঙ্কাল এবং তার সাথের মাংসপেশি মিলে যে তন্ত্র তৈরি করে তাকে পেশি কঙ্কালতন্ত্র বলে। মানুষের শরীরের কঙ্কালতন্ত্র প্রায় ২০৬ টি হাড় নিয়ে গঠিত। পেশিতন্ত্র কঙ্কালতন্ত্রের সাথে মিশে শরীরকে চলাচলে সাহায্য করে এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো রক্ষা করে।

পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে