গ. সারণিতে প্রদত্ত তথ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ও আমদানি ব্যয় দেখানো হয়েছে। স্তম্ভ লেখচিত্রে নিচে তা দেখানো হলো :
স্তম্ভচিত্র :বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ও আমদানি ব্যয়।
ঘ. সারণি থেকে দেখা যাচ্ছে আমাদের রপ্তানি আয়ের সঙ্গে আমদানি ব্যয়ে ঘাটতি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। রপ্তানি আয়ের এরূপ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা উচিত-
শিল্পজাত দ্রব্য উৎপাদন বৃদ্ধি : রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য দেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে কৃষিজাত এবং শিল্পজাত দ্রব্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে।
খাদ্যশস্য আমদানি হ্রাস : উচ্চ ফলনশীল ধান ও গমের প্রবর্তন, কৃষিতে বিনিয়োগ, উৎপাদন বৃদ্ধি, পতিত জমি কৃষির অন্তর্গতকরণ, একই জমিতে বছরে অধিক ফসল উৎপাদন প্রভৃতি প্রচেষ্টার মাধ্যমে খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে এবং আমদানি হ্রাসের প্রবণতা কমাতে হবে।
রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ : বর্তমানে প্রচলিত পণ্য রপ্তানির সাথে অপ্রচলিত পণ্য সংযোজনের মাধ্যমে রপ্তানিকৃত পণ্যের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করতে হবে।
বাণিজ্যিক এলাকার বিস্তৃতি : নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে বাণিজ্যিক এলাকার সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে।
পণ্যের মান উন্নয়ন : আমাদের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের মান উন্নত করলে বিশ্ববাজারে আমাদের পণ্যের চাহিদা ও বিক্রি বৃদ্ধি পাবে।
উৎপাদন ব্যয় হ্রাস : উন্নত ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন খরচ হ্রাস করা যায়। উৎপাদন ব্যয় হ্রাস হলে কম মূল্যে বিদেশে পণ্য রপ্তানি করা যায়। ফলে বিদেশে পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে এবং বাজার সম্প্রসারণ হবে। রপ্তানিই আনে সমৃদ্ধি। বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য কার্যকর ও যথাযথ পদক্ষেপ নিলে আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের ঘাটতি অনেকটাই হ্রাস করতে সক্ষম হবে।
প্রশ্ন : সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি ও আমদানির অনুপাতের ভিত্তিতে ঋণাত্মক বাণিজ্যিক ভারসাম্য বিদ্যমান।
ক. বাণিজ্যিক ভারসাম্য কী?
খ. বাণিজ্যিক ভারসাম্য কেন ঘটে?
গ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত দেশটিতে ঋণাত্মক বাণিজ্যিক ভারসাম্য বিদ্যমান কেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. অনুন্নত দেশসমূহে উদ্দীপকে উলিস্নখিত বাণিজ্য পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকে - এ বক্ত্যব্যের সাথে তুমি একমত কিনা? মতামত দাও।
উত্তর :
ক. কোনো দেশে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে যখন ভারসাম্য বিদ্যমান থাকে তখন তাকে বাণিজ্যিক ভারসাম্য বলে।
খ. আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান থাকলে তাকে বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা বলে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা বিদ্যমান। যখন কোনো দেশে রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হয়ে থাকে, তখন বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা ঘটে। আবার অর্থনৈতিক সংকটের কারণেও বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা ঘটে থাকে। এছাড়াও সম্পদের স্বল্পতার কারণে বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে।
গ. অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো উদ্দীপকে উলিস্নখিত বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ভারসাম্যও সমান নয়। অর্থাৎ আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান তথা দেশটিতে ঋণাত্মক বাণিজ্যিক ভারসাম্য বিদ্যমান। তবে এ ঋণাত্মক ভারসাম্য সার্বিকভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিবেচ্য। উদাহরণস্বরূপ চীন ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অসম বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান। কারণ এসব দেশ থেকে বাংলাদেশ রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি করে থাকে। এটাকে বাণিজ্য ঘাটতি বলে। অন্যদিকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে রপ্তানি বাণিজ্যে এগিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সাথেও বাণিজ্যে উদ্বৃত অবস্থানে রয়েছে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি ও আমদানির অনুপাতের ভিত্তিতে ঋণাত্মক বাণিজ্যিক ভারসাম্য বিদ্যমান।
ঘ. উদ্দীপকে ঋণাত্মক বাণিজ্য পরিস্থিতি বর্ণিত হয়েছে যা অনুন্নত দেশসমূহের বৈশিষ্ট্য। পৃথিবীর কোনো দেশই সকল সম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। বিভিন্ন দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রোটোকল মেনে তাদের জনগণের চাহিদা অনুসারে পণ্য আমদানি এবং উদ্বৃত্ত পণ্য অন্য দেশে রপ্তানি করে থাকে। এটাকে আমরা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বলে থাকি। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য সমান নয়। যখন রপ্তানির তুলনায় কোনো দেশে পণ্য আমদানি বেশি হয় তখনই বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। আর এ বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা মূলত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে লক্ষ করা যায়। মূলত অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর দেশের সাথে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসম বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। বিশেষ করে অনুন্নত দেশগুলোতে বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা প্রকট হয়ে ওঠে। কারণ, সেসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল বলে শিল্প স্থাপনের জন্য মূলধন জোগাড় করতে পারে না। অনুন্নত দেশগুলোতে সুষ্ঠু যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ করা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগ নীতি ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজমান থাকে না। এছাড়া বিরূপ আবহাওয়া ও পর্যাপ্ত সম্পদের অভাবও রয়েছে। সর্বোপরি প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক নিয়ামকসমূহের অভাব লক্ষ করা যায়। উন্নত দেশসমূহে এসব সমস্যা থাকে না, কিন্তু অনুন্নত দেশসমূহে উপরিউক্ত কারণে বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা বিদ্যমান থাকে।
প্রশ্ন : দোকানদার, কামার, শিক্ষক, কৃষক, ব্যবসায়ী, নার্স সবাই পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এসব জনসমষ্টির কার্যাবলি অর্থনৈতিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত।
ক. অর্থনৈতিক কার্যাবলি কী?
খ. প্রথম পর্যায়ের অর্থনৈতিক কার্যাবলি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের দ্বিতীয় পর্যায়ে জড়িত জনসমষ্টির কার্যাবলি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত তৃতীয় পর্যায়ে জড়িত জনসমষ্টির বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ কর।
উত্তর :
ক. পণ্যসামগ্রী ও সেবাকার্যের উৎপাদন, বিনিময় এবং ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যে কোনো মানবীয় আচরণের প্রকাশই অর্থনৈতিক কার্যাবলি।
খ. প্রথম পর্যায়ের অর্থনৈতিক কার্যাবলিতে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে সরাসরি কাজ করে। যেমন : কৃষিকার্যের ক্ষেত্রে মানুষ বীজ বপন করে, প্রকৃতি এই বীজকে অঙ্কুরিত করে শস্যে পরিণত করে। প্রকৃতির এই অবদান মানুষ পুরস্কারস্বরূপ গ্রহণ করে। পশু শিকার, মৎস্য শিকার, কাঠ চেরাই, পশুপালন, খনিজ উত্তোলন এবং কৃষিকার্য প্রথম পর্যায়ের অর্থনৈতিক কার্যাবলি। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ প্রথম পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত।
পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়