শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
  ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ
দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

সারণি-১ : বাংলাদেশের বিগত বছরগুলোর বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা :

উৎস : ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রতি বছর আমাদের বিশাল অঙ্কের অর্থের পণ্য অতিরিক্ত আমদানি করতে হচ্ছে। আমরা যেসব পণ্য আমদানি করি তার অধিকাংশই শিল্পজাত। অথচ কৃষিপ্রধান বাংলাদেশ এখন কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতেও সক্ষম নয়। আমাদের কৃষিপণ্যের রপ্তানির পরিমাণ বর্তমানে কমে গেছে। অন্যদিকে শিল্পজাত পণ্যের আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বলা যায়, আমাদের বাণিজ্য পুরোপুরি আমদানিনির্ভর।

প্রশ্ন : রফিক সাহেব তার ছোট ছেলেকে বললেন আমরা নানা কাজে অকাজে সম্পদ অপচয় করি। 'শোনো, বিনা প্রয়োজনে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখবে না। অযথা বৈদু্যতিক পাখা চালাবে না। সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার হলে অপচয় রোধ এবং সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।'

ক. সম্পদ সংরক্ষণের অর্থ কী?

খ. সম্পদ ব্যবহারের উত্তম ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি কেন?

গ. ছেলেকে দেওয়া রফিক সাহেবের উপদেশ সম্পদের অপচয় কীভাবে রোধ করে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. কৃষি জমির ক্ষেত্রে রফিক সাহেবের নির্দেশনা কীরূপ হতো বলে তুমি মনে কর। মতামত দাও।

উত্তর :

ক. সম্পদ সংরক্ষণের অর্থ প্রাকৃতিক সম্পদের এমন ব্যবহার যাতে ওই সম্পদ যথাসম্ভব অধিকসংখ্যক লোকের দীর্ঘ সময়ব্যাপী সর্বাধিক মঙ্গল নিশ্চিত করতে সহায়ক হয়।

খ. সম্পদ ব্যবহারের উত্তম ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। উত্তম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নবায়নযোগ্য সম্পদের বৃদ্ধি সম্ভবপর। অনবায়নযোগ্য সম্পদের স্থলে নবায়নযোগ্য সম্পদ ব্যবহার করা যায়। ফলে অনবায়নযোগ্য সম্পদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসের হাত থেকে আমরা এগুলো রক্ষা করতে পারি। নবায়নযোগ্য সম্পদ ব্যবহার পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। এ ছাড়া উত্তম ব্যবস্থাপনার দ্বারা বিভিন্ন ব্যবহৃত বস্তুকে রিসাইক্লিং করে পুনরায় সম্পদরূপে ব্যবহার করা যায়। এতে সম্পদের অপচয় কম হয়।

গ. সম্পদ অপচয় রোধ করতে রফিক সাহেব ছেলেকে উপদেশ দেন, গ্যাসের চুলা অপ্রয়োজনে না জ্বালাতে এবং বৈদু্যতিক বাতি বন্ধ রাখতে। অর্থাৎ তিনি অনবায়নযোগ্য শক্তিকে কম ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করার দিকে লক্ষ রাখেন। কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেলভিত্তিক বিদু্যৎ উৎপাদন হ্রাস করে আমাদেরও নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। বৈদু্যতিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম যেমন বাতি, পাখা, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি ব্যবহার করার সময় ছাড়া অন্য সময় এগুলো 'অফ' করে রাখতে উপদেশ দেন। দৈনন্দিন রান্নার কাজে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয় রোধ করার জন্য রান্নার সময় ছাড়া বাকি সময় চুলা বন্ধ রাখতে বলেন। দিয়াশলাইয়ের কাঠি বাঁচানোর জন্য চুলা জ্বালিয়ে রাখ নিষেধ করেন। এভাবে রফিক সাহেবের উপদেশ সম্পদ অপচয় রোধে সহায়ক।

ঘ. উদ্দীপকে রফিক সাহেব সম্পদের অপচয় রোধ ও সঠিক ব্যবহারের নির্দেশনা দেন। সুতরাং কৃষি জমির ক্ষেত্রেও তার নির্দেশনা হবে জ্ঞানমূলক। যেমন- অকৃষি অঞ্চলে বনায়নের মাধ্যমে মৃত্তিকা সংরক্ষণ করা যায়; কৃষি জমিতে পর্যাপ্ত জৈব সার যোগ করে মাটির সংযুতির উন্নয়ন করা যায়; কৃষি মৃত্তিকা রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন রকমের মৃত্তিকা সংরক্ষণ পদ্ধতির ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন সোপান চাষ, শস্য আবর্তন; কৃষি জমিতে অজৈব সারের প্রয়োগ সীমিত রাখতে হবে। এগুলোর ব্যবহারে প্রাথমিকভাবে ফলন বাড়লেও পরবর্তীতে অধিক সারের প্রয়োগে জমির ক্ষতি সাধিত হয়। তাই আমাদের ভূমি রক্ষায় সচেতন হতে হবে এবং এতে ভূমি ক্ষয়রোধ সম্ভব হবে। উদ্দীপকের রফিক সাহেবও এরূপ নির্দেশনাই দেবেন।

প্রশ্ন : ডেইরি ফার্ম, চামড়া শিল্প, বেকারি কারখানা, তৈরি পোশাক শিল্প, কাগজ শিল্প, লোহা ও ইস্পাত শিল্প বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় এসব শিল্পের অবদান অপরিসীম।

ক. উন্নয়নশীল দেশের অধিকাংশ মানুষ কী কী অর্থনৈতিক কাজে নিয়োজিত আছে?

খ. আমাদের দেশের শ্রমিকরা অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে পড়ে কেন?

গ. শিল্পের আকার অনুসারে উদ্দীপকের শিল্পগুলো ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উন্নত বিশ্বের জীবনযাত্রার মান উচ্চ হওয়ার কারণ উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

উত্তর :

ক. উন্নয়নশীল দেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকার্য, মৎস্য শিকার, পশুপালন, কাঠ আহরণ ইত্যাদি প্রথম পর্যায়ের অর্থনৈতিক কাজে নিয়োজিত আছে।

খ. আমাদের দেশে তাপমাত্রার তীব্রতার কারণে শ্রমিকরা অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আমাদের দেশ গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশের অন্তর্ভুক্ত। গ্রীষ্মকাল দীর্ঘ সময় ধরে বিরাজ করে। তাপমাত্রা অনেক সময় ৩৮ক্ক সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে। এ অধিক তাপমাত্রার কারণে আমাদের দেশে কলকারখানা গড়ে তোলা কঠিন। কারখানার শ্রমিকরা অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

গ. শিল্পের আকার অনুসারে শিল্পকে- ১. ক্ষুদ্র শিল্প, ২. মাঝারি শিল্প ও ৩. বৃহৎ শিল্প এ তিন ভাগে ভাগ করা যায়। উদ্দীপকের শিল্পগুলোর মধ্যে ডেইরি ফার্ম ও বেকারি কারখানা ক্ষুদ্র শিল্পের অন্তর্গত। এ ধরনের শিল্পগুলো গ্রাম ও শহর এলাকায় ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠে। এসব শিল্পে কম শ্রমিক ও স্বল্প মূলধনের প্রয়োজন হয়। কম কাঁচামালে স্বল্প উৎপাদন এসব শিল্পের বৈশিষ্ট্য। চামড়া শিল্প ও তৈরি পোশাক শিল্প মাঝারি শিল্পের অন্তর্গত। এসব শিল্প সাধারণত শতাধিক শ্রমিকের সমন্বয়ে গঠিত হয়। কাগজ শিল্প এবং লোহা ও ইস্পাত শিল্প বৃহৎ শিল্পের অন্তর্গত। এসব শিল্পের জন্য ব্যাপক অবকাঠামো, প্রচুর শ্রমিক ও বিশাল মূলধনের প্রয়োজন হয়। শহরের কাছাকাছি স্থানে সাধারণত এ ধরনের শিল্প গড়ে ওঠে।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে