সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
  ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ
দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

ঘ. শাহেদের স্থাপিত শিল্পটি হচ্ছে পোশাক শিল্প। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পোশাক শিল্পের ভূমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১২ সালের জানুয়ারির প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পোশাক পণ্য রপ্তানি করে মোট রপ্তানি আয়ের শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ আসে। উদ্দীপকে দেখা যায়, শাহেদের স্থাপিত পোশাক শিল্পটিও রপ্তানিমুখী এবং তার পোশাকের বিদেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৫০ লাখ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পোশাক শিল্পের সাথে জড়িত। সস্তা শ্রম বাজার এবং সহজলভ্য শ্রমিক বিদ্যমান থাকায় বাংলাদেশে পোশাক শিল্প গড়ে উঠেছে যা দেশের অসংখ্য বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে যা দেশের বাণিজ্যে ভারসাম্য আনতে সহায়তা করে। সুতরাং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে পোশাক শিল্পের ভূমিকা অপরিসীম। শাহেদের স্থাপিত পোশাক শিল্পটিও অনুরূপ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

প্রশ্ন : জনাব আকমল পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করে। তার ছেলে ফয়সাল ব্যাংকার এবং মেয়ে লাবনী চিকিৎসক।

ক. অর্থনৈতিক কার্যাবলি কাকে বলে?

খ. আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বলতে কী বুঝায়? ব্যাখ্যা কর।

গ. জনাব আকমলের কার্যাবলিটি কোন পর্যায়ের অর্থনৈতিক কার্যাবলি? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. জনাব আকমলের অর্থনৈতিক কার্যাবলি এবং ফয়সাল, লাবনীর কার্যাবলি কি একই পর্যায়ভুক্ত? তুলনামূলক বিশ্লেষণ কর।

উত্তর :

ক. পণ্যসামগ্রী ও সেবাকার্যের উৎপাদন, বিনিময় এবং ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেকোনো মানবীয় আচরণের প্রকাশই অর্থনৈতিক কার্যাবলি।

খ. রপ্তানি ও আমদানি হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। স্বদেশের কোনো পণ্য যখন অন্য কোনো দেশে পাঠানো হয় তখন তাকে বলে রপ্তানি আর দেশের চাহিদা মিটানোর জন্য যখন অন্য দেশ থেকে স্বদেশে কোনো পণ্য সামগ্রী আনা হয় তখন তাকে বলে আমদানি। এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের পণ্যের এরূপ আদান-প্রদানকে বলা হয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য।

গ. উদ্দীপকে জনাব আকমলের পশুপালন প্রাথমিক পর্যায়ের অর্থনৈতিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত। জীবন ধারণের জন্য মানুূষ সরাসরি প্রকৃতির সাথে যেসব কাজে লিপ্ত হয় সেগুলোকে প্রাথমিক পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বলে। কৃষিকাজ, পশুপালন, খনিজ উত্তোলন, মৎস্য শিকার, কাঠ চেরাই, কৃষিকাজ ইত্যাদি প্রাথমিক পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। অনুন্নত দেশে এ কর্মকান্ডের পরিমাণ বেশি। উদ্দীপকে জনাব আকমল পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করে যা সরাসরি প্রকৃতির সাথে জড়িত। তাই তার পশুপালন প্রাথমিক পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের অন্তর্ভুক্ত।

ঘ. উদ্দীপকের জনাব আকমলের অর্থনৈতিক কার্যাবলি এবং ফয়সাল, লাবনীর কার্যাবলি আলাদা আলাদা পর্যায়ভুক্ত। জনাব আকমলের পশুপালন প্রাথমিক পর্যায়ের অর্থনৈতিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত। অপরদিকে ফয়সাল ও লাবনীর তৃতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত। তৃতীয় পর্যায়ের কার্যাবলিতে মানুষ উৎপাদন কার্য ব্যতীত অন্যান্য উপায়ে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যাবলি থেকে উৎপাদিত বস্তুসমূহের উপযোগিতা বৃদ্ধি করে এবং সেবাকার্য সম্পাদন করে। উদ্দীপকের ফয়সাল ও লাবনী সেবাকার্যের সাথে জড়িত। তারা পণ্য উৎপাদন বা রূপান্তরকরণ কার্যের সাথে জড়িত নয়। বরং ফয়সাল ব্যাংকার এবং

লাবনী চিকিৎসক হিসেবে নিজেদের মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে সেবাকার্য করছে যা তৃতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং জনাব আকমল এবং ফয়সাল ও লাবনীর অর্থনৈতিক কার্যাবলি ভিন্ন ভিন্ন।

প্রশ্ন : নিচের তালিকাটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

আমদানি বাণিজ্য : খাদ্যশস্য, ভোজ্যতেল, পেট্রোলিয়াম, সুতা, ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি।

রপ্তানি বাণিজ্য : তৈরি পোশাক, চিংড়ি, চামড়া, পাটজাতদ্রব্য ও চা।

ব্যয় : ৩৪.৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০১১-১২)

আয় : ২৪.৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০১১-১২)

ক. বাণিজ্য ঘাটতি কী?

খ. ক্ষুদ্র শিল্প বলতে কী বোঝ?

গ. উপরের ছকের ভারসাম্য রক্ষার সম্ভাব্য উপায়গুলো কী?

ঘ. বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রকৃতি ছকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

উত্তর :

ক. আমদানির তুলনায় রপ্তানি কম হলে তাকে বাণিজ্য ঘাটতি বলে।

খ. যে শিল্পে কম শ্রমিক ও স্বল্প মূলধনের প্রয়োজন হয় তাই ক্ষদ্র শিল্প। এ শিল্পে শ্রমিক ক্ষদ্র যন্ত্রপাতি ও উপকরণের সাহায্যে কাজ সম্পন্ন করে থাকে। কম কাঁচামালে স্বল্প উৎপাদন করা হয়। এই ধরনের শিল্পগুলো গ্রাম ও শহর এলাকায় ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠে, যেমন- তাঁত শিল্প, বেকারি কারখানা, ডেইরি ফার্ম প্রভৃতি।

গ. উপরে দেখানো হয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি। আমাদের দেশ থেকে পণ্য রপ্তানি হয় কম। আর আমদানি হয় বেশি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ভারসাম্য রক্ষায় উপায় গ্রহণ করা যেতে পারে। শিল্পায়নের মাধ্যমে আমদানির পরিমাণ কমাতে হবে। যেসব দ্রব্য আমরা আমদানি করি তার মধ্যে বেশ কয়েকটি পণ্য আমাদের দেশে উৎপাদন সম্ভব। এসব পণ্য উৎপাদন করে আমদানির পরিমাণ কমানো যেতে পারে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্যশস্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে আমাদের খাদ্যশস্য আমদানি করতে হবে না এবং এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। আমাদের দেশের শিল্পগুলো কৃষিনির্ভর। তাই কৃষির উৎপাদন বাড়িয়ে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। শিল্পোৎপাদন বাড়ানো গেলে আমদানি কমে যাবে। আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলোর উৎপাদন আরও বাড়ানো গেলে রপ্তানি আরও বৃদ্ধি পাবে এবং বাণিজ্যিক ভারসাম্য তৈরি হবে। উক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হলে আমাদের অসম বাণিজ্যিক ভারসাম্য কমে ধীরে ধীরে সাম্যাবস্থার দিকে আসবে।

ঘ. বিভিন্ন দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রোটোকল মেনে তাদের জনগণের চাহিদা অনুসারে পণ্য আমদানি এবং উদ্বৃত্ত পণ্য অন্য দেশে রপ্তানি করে থাকে। আর এটিকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বলে। আমাদের দেশ রপ্তানির তুলনায় আমদানি করে বেশি। এ কারণে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি বিরাজ করছে। আমাদের বাণিজ্যের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় আমাদের বাণিজ্য আমদানিনির্ভর। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি ও আমদানির অনুপাতের ভিত্তিতে ঋণাত্মক বাণিজ্যিক ভারসাম্য বিদ্যমান। (সারণি ১ দ্রষ্টব্য)।

পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে