নবম অধ্যায়
সম্পদ ও অর্থনৈতিক কার্যাবলি
সম্পদ : বস্তুর কার্যকারিতাই সম্পদ, যা কিছু নির্দিষ্ট প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং সামাজিক অবস্থায় ব্যবহার করা যায় তাই সম্পদ।
সম্পদের শ্রেণিবিন্যাস : সম্পদকে প্রাথমিকভাবে তিন ভাগে ভাগ করা যায়-
\হ১. প্রাকৃতিক সম্পদ,
২. মানব সম্পদ ও
৩. অর্থনৈতিক সম্পদ।
প্রাকৃতিক সম্পদকে আবার নবায়নযোগ্য, অনবায়নযোগ্য ও অন্যান্য এ তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
সম্পদ সংরক্ষণ : সম্পদ সংরক্ষণের অর্থ প্রাকৃতিক সম্পদের এমন ব্যবহার, যাতে ওই সম্পদ যথাসম্ভব অধিকসংখ্যক লোকের দীর্ঘ সময়ব্যাপী সর্বাধিক মঙ্গল নিশ্চিত করতে সহায়ক হয়। সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সম্পদ ব্যবহারের উত্তম ব্যবস্থাপনা জরুরি।
অর্থনৈতিক কার্যাবলি : পণ্য সামগ্রী ও সেবাকার্যের উৎপাদন, বিনিময় এবং ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যে কোনো মানবীয় আচরণের প্রকাশই অর্থনৈতিক কার্যাবলি। অর্থনৈতিক কার্যাবলি তিনভাগে বিভক্ত। যথা : প্রথম পর্যায়, দ্বিতীয় পর্যায় ও তৃতীয় পর্যায়।
অনুন্নত, উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের অর্থনৈতিক কার্যাবলি :সমগ্র পৃথিবীকে অর্থনৈতিক সামর্থ্যেরে ওপর উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত এই তিনভাগে ভাগ করা যায়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, চীন, ইতালি, জার্মান, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের শতকরা ৮০ ভাগের উপরে মানুষ দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছে। অপরদিকে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশসমূহের শতকরা ৫০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষ প্রথম পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। বাংলাদেশ, মায়ানমার, ভুটান, নেপাল, কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, জাম্বিয়া ইত্যাদি দেশ এ পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। এসব দেশে শিক্ষার হার, জীবনযাত্রার মান ও মাথা পিছু আয় উন্নত দেশের তুলনায় অনেক কম।
শিল্প গড়ে ওঠার নিয়ামক : প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক নিয়ামকের ওপর ভিত্তি করে শিল্প গড়ে ওঠে।
প্রাকৃতিক নিয়ামকগুলো হলো :-
১. জলবায়ু,
২. শক্তি সম্পদের সান্নিধ্য ও
৩. কাঁচামালের সান্নিধ্য।
অর্থনৈতিক নিয়ামকগুলো হলো :-
১. মূলধন,
২. শ্রমিক সরবরাহ,
৩. বাজারের সান্নিধ্য,
৪. সুষ্ঠু যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা,
৫. আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার,
৬. সরকারি বিনিয়োগ নীতি,
৭. স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা ইত্যাদি।
শিল্পের শ্রেণিবিন্যাস : খনিজ, কৃষিজ, প্রাণিজ ও বনজ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির ওপর ভিত্তি করে শিল্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : ১. ক্ষুদ্র শিল্প, ২. মাঝারি শিল্প ও ৩. বৃহৎ শিল্প।
আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য : পৃথিবীর কোনো দেশই সকল সম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। বিভিন্ন দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রটোকল মেনে তাদের জনগণের চাহিদা অনুসারে পণ্য আমদানি এবং উদ্বৃত্ত পণ্য অন্য দেশে রপ্তানি করে থাকে। এটিকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বলে। যেমন : জাপান লৌহ ও ইস্পাতের তৈরি ভারী যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, মোটরগাড়ি, জাহাজ ও বিভিন্ন শিল্পদ্রব্য রপ্তানি করে থাকে এবং এদেশ বিভিন্ন দেশ থেকে আকরিক লোহা ও কয়লা আমদানি করে থাকে।
বাণিজ্যিক ভারসাম্য ও উন্নয়নের সম্পর্ক : পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য সমান নয়। অর্থাৎ আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। বিশ্বের যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক সামর্থ্যরে ওপর আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য এবং সেই সঙ্গে উন্নয়ন সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর দেশের সাথে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসম বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিরাজ করে। তবে উন্নয়ন সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে অসম বাণিজ্যিক সম্পর্কের ব্যবধান কমতে পারে।
\হযা কিছু নির্দিষ্ট প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং সামাজিক অবস্থায় ব্যবহার করা যায় তাই সম্পদ।
\হসম্পদকে ভাগ করা যায়- প্রাকৃতিক সম্পদ, মানব সম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্পদে।
অনবায়নযোগ্য সম্পদ- খুব ধীর গতিতে সৃষ্টি হয়।
নবায়নযোগ্য সম্পদ- পুনঃসংগঠনশীল কিন্তু সময়ের ব্যবধানে পরিবর্তনশীল।
সংরক্ষণ ধারণার অপর নাম-জীবনাচরণ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, সম্পদ অসীম নয়- সসীম।
কৃষি মৃত্তিকা রক্ষা করার জন্য সোপান চাষ, শস্য আবর্তন পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
বনায়নের মাধ্যমে মৃত্তিকাকে সংরক্ষণ করা যায়- অকৃষি অঞ্চলে-
পানি শক্তিকে- জলবিদু্যৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়।
সম্পদ সংরক্ষণের জন্য জরুরি সম্পদের ব্যবহার হ্রাস, সম্পদের পুনব্যবহার ও সম্পদের পুননবায়ন।
অর্থনৈতিক সামর্থের উপর বিশ্বকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা -উন্নত, অনুন্নত ও উন্নয়নশীল।
অর্থনৈতিক কার্যাবলি তিন ভাগে বিভক্ত- প্রথম পর্যায়, দ্বিতীয় পর্যায় ও তৃতীয় পর্যায়।
পশু শিকার, মৎস্য শিকার, কাঠ চেরাই, পশুপালন, খনিজ উত্তোলন এবং কৃষিকার্য প্রথম পর্যায়ের অর্থনৈতিক কার্যাবলি।
অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশসমূহের শতকরা ৫০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষ- প্রথম পর্যায়ের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত।
উন্নত বিশ্বের শতকরা ৮০ ভাগের উপরে মানুষ- দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত।
প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক নিয়ামকের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে- শিল্প।
খুলনার নিউজপ্রিন্ট কারখানা গড়ে ওঠেছে- সুন্দরবনের সুন্দরী কাঠের উপর নির্ভর করে।
শিল্পস্থাপনে- মূলধনের প্রভাব বিশেষ উলেস্নখযোগ্য।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়