ধাতু ও অধাতু
আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে সেগুলো কিছু মৌলিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। এই মৌলিক পদার্থগুলোর সবগুলোকেই ধাতু অথবা অধাতুতে ভাগ করা যায়। সুতরাং ধাতু এবং অধাতু সম্পর্কে জানা এবং এগুলোর মধ্যে পার্থক্য করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন তোমরা ধাতু এবং অধাতুর কিছু ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারবে।
ধাতুসমূহের ভৌতধর্ম
ধাতুগুলো সাধারণত উচ্চ ঘনত্বের, চকচকে এবং তাপ ও বিদু্যৎ সুপরিবাহী হয়ে থাকে। পারদ ব্যতিক্রমী তরল পদার্থ, অন্য সকল ধাতু কঠিন পদার্থ। সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম নরম এবং চাকু দিয়ে কাটা যায়, এছাড়া অন্য সকল ধাতু শক্ত। ধাতু ঘাতসহ এবং নমনীয় বলে সেগুলোকে চাপ দিয়ে পাত কিংবা টেনে লম্বা তারে পরিণত করা যায়। সোনা, রূপা, তামা কিংবা অ্যালুমিনিয়াম কয়েকটি পরিচিত ধাতুর উদাহরণ।
অধাতুসমূহের ভৌতধর্ম
অধাতুগুলো ধাতুর মতো ভৌতধর্ম প্রদর্শন করে না।
যেমন- এগুলো চকচক করে না, সাধারণত তাপ ও বিদু্যৎ অপরিবাহী এবং ভঙ্গুর বলে ঘাতসহ প্রসারণশীল নয় তাই চাপ দিয়ে পাত কিংবা টেনে লম্বা তার তৈরি করা যায় না। এগুলোর ঘনত্ব কম এবং নাইট্রোজেন বা অক্সিজেনের মতো অনেক অধাতু সাধারণ তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় পাওয়া যায়। কার্বন কয়লা আমাদের পরিচিত একটি অধাতু।
ধাতুর বিভিন্ন ধর্ম ও তার পরীক্ষা
চকচকে ভাব
কাজ : আলুমিনিয়ামের পাত্র, পস্নাস্টিকের তেল কাঠের খেল এবং ইস্পাতের কেন নাও। এগুলোকে সূর্যালোকে রেখে দাও। তারপর লক্ষ করে দেখো কোনগুলো চকচক করে এবং কোনগুলো করে না।
তাপ পরিবাহিতা
তাপ পরিবাহিতা বলতে কোনো পদার্থের মধ্য দিয়ে অথবা সংস্পর্শে থাকা দুটি ভিন্ন বস্তুর মধ্যে তাপের আদান-প্রদান ঘটাকে বোঝায়। তাপ সব সময় বেশি তাপমাত্রা থেকে কম তাপমাত্রায় পরিবাহিত হয়। এই পরিবহণের জন্য যদি সুপরিবাহী পদার্থ ব্যবহার করা হয়, তাহলে তাপ তাড়াতাড়ি প্রবাহিত হবে। যদি তাপ অপরিবাহী পদার্থ ব্যবহার করা হয়, তাহলে তাপের প্রবাহ হবে ধীরে ধীরে। অধাতুর তুলনায় ধাতুগুলো সাধারণত তাপ সুপরিবাহী, সেজন্য সেগুলো তাপ পরিবহণে খুবই কার্যকর।
তাপ পরিবাহী হিসেবে ধাতুর ব্যবহার
ক), রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, সোলার প্যানেল এগুলোতে তাপের পরিবহণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই ধরনের যন্ত্রে নানা ধরনের তাপ সুপরিবাহী ধাতু ব্যবহার করা হয়।
খ) ইলেকট্রনিক্স, প্রকৌশলে, ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা যন্ত্র, গৃহস্থালির যন্ত্রপাতি এ ধরনের শিল্প এবং বিশেষ করে নির্মাণশিল্পে ধাতু ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
ধাতু ও অধাতুর বিদু্যৎ পরিবাহিতা
প্রায় সব ধাতুই বিদু্যৎ পরিবাহী হলেও সেগুলোর পরিবহণ ক্ষমতা আলাদা। উদাহরণ দেওয়ার জন্য বলা যায়, রূপা সবচেয়ে ভালো বিদু্যৎ পরিবাহী পদার্থ এবং তামা ও অ্যালুমিনিয়ামও যথেষ্ট ভালো মানের পরিবাহী। তবে রূপার মূল্য খুব বেশি হওয়ায় বৈদু্যতিক তার হিসেবে সেটি ব্যবহৃত হয় না, তার পরিবর্তে তামা ও অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহৃত হয়।
কাজ : আমরা খুব সহজেই বিভিন্ন পদার্থের বিদু্যৎ পরিবাহিতা পরীক্ষা করতে পারি। সেটি করার জন্য তোমার দরকার হবে একটি ব্যাটারি কিছু তামার তার এবং একটি ভায়োক। (তুমি ইচ্ছা করলে ডায়োডের বদলে একটি ৬ লাইটের বারও ব্যবহার করতে পারো, কিন্তু আজকাল নানা রংরোর ভায়োত খুবই সহজে পাওয়া যায়।। এবারে ছবিতে দেখানো উপায়ে তুমি সার্কিট তৈরি করে ডায়োডটি ব্যাটারির সঙ্গে সংযুক্ত করে সেটি জ্বালাও। তুমি দেখবে ভায়োডের ভেতর দিনে শুধু একদিকে বিদু্যৎ প্রবাহিত হয় বলে ব্যাটারির এর দিকে সংযুক্ত করলে ডায়োডটি জ্বলবে, অন্যদিকে সংযুক্ত করলে ফুলবে না।
যেহেতু তামা বৈদু্যতিক পরিবাহী, তাই এটি ব্যাটারির বিদু্যৎকে ভায়োজের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত করতে পারে এবং এই কারণে ভারোত জ্বলে উঠে। যদি তামার তারটি বৈদু্যতিক পরিবাহী না হতো তাহলে এটি বিদু্যৎ সঞ্চালন করতে পারত না এবং ডায়োড জ্বলে উঠে।
বলপ্রয়োগে ধাতুর পরিবর্তন
তোমরা নিশ্চয়ই তোমাদের স্কুলের ঘন্টার ঢং ঢং শব্দ শুনেছ। স্কুলের ধাতব ঘণ্টার জায়গায় যদি একটা পস্নাস্টিক কিংবা কাঠের ঘণ্টা ঝোলানো হতো তাহলে নিশ্চয়ই তুমি চমৎকার ঢং ঢং ঘণ্টা শুনতে পেতে না।
আঘাত করা হলে এই বিশেষ ঢং ঢং বা ঝন ঝন শব্দ তৈরি করা ধাতুর একটি ধর্ম। ধাতুকে আঘাত করে পাত তৈরি করা যায়। তুমি শুনে নিশ্চয়ই অবাক হয়ে যাবে যে এক সেন্টিমিটার ঘন কিউবের এক টুকরা সোনাকে একটা ফুটবল মাঠের সমান অতি সূক্ষ্ম পাতে বিস্তৃত করা যায়। তোমাদের রান্নাঘরে গিয়ে পুরনো অ্যালুমিনিয়ামের ডেকচি কিংবা কেতলি পরীক্ষা করে দেখলে দেখবে এটি নানা জায়গায় তোবড়ানো এবং এবড়ো থেবড়ো। তার কারণ ব্যবহারের সময় আঘাত পেয়ে এর আকারের পরিবর্তন হয়েছে। ধাতুর জন্য এটি খুবই সাধারণ একটি প্রক্রিয়া। ধাতু না হয়ে যদি ডেকচি কিংবা কেতলি কাচ অথবা চিনামাটির তৈরি হতো তাহলে এটি ঘটত না। তোমরা কি তোমাদের চারপাশে যা দেখো তার ভেতর থেকে আঘাত পেয়ে অথবা বল প্রয়োগ করে ধাতুর আকার পরিবর্তনের আরও কিছু উদাহরণ বের করতে পারবে?
\হহ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়