দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
অষ্টম অধ্যায় গ. অ হলো যুক্তরাষ্ট্রের হনলুলু। এটি সমুদ্র সৈকত কেন্দ্রিক বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। ই হলো রাশিয়ার পিটার্সবার্গ। এটি সামরিক কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। কর্মক্লান্ত মানুষের ক্লান্তি দূর ও অবসর বিনোদনের জন্য সাধারণত শহর বা নগরের কোলাহলের বাইরে সমুদ্র সৈকত বা শৈল নিবাসে স্বাস্থ্য ও প্রমোদ কেন্দ্র গড়ে ওঠে। এমনই একটি শহর হলো যুক্তরাষ্ট্রের হনলুলু। স্বাস্থ্যনিবাস ও আমোদ প্রমোদকে কেন্দ্র করেই এ শহরটি বিস্তার লাভ করেছে। প্রতিরক্ষার প্রয়োজনে প্রতিটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে সামরিক ও নৌঘাঁটির দুর্গসমূহ গড়ে ওঠে। এসব স্থানকে আশ্রয় করে কালক্রমে নগর বিকাশ লাভ করে। রাশিয়ার পিটার্সবার্গ এই ধরনের একটি নগর। ঘ. ঈ, উ ও ঊ হলো যথাক্রমে ভারতের নয়াদিলিস্ন, মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া ও সৌদি আরবের মক্কা নগর। ভারতের নয়াদিলিস্ন হলো প্রশাসনিক নগর। মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া বাণিজ্যভিত্তিক নগর। আর সৌদি আরবের মক্কা সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপভিত্তিক নগর। সাধারণত মানুষের ক্রিয়াকলাপের প্রকৃতিভেদে নগর বসতিগুলো গড়ে ওঠে। এক্ষেত্রে জনসমষ্টির বৈশিষ্ট্য, মানুষের চালচলন, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি ক্ষেত্রে পার্থক্য দেখা দেয়। ঈ হলো ভারতের নয়াদিলিস্ন। ভারতের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মূল কেন্দ্র হলো এ শহর। শাসন ব্যবস্থার প্রয়োজনে এ শহরকে রাজধানীর রূপ দেওয়া হয় এবং এখানে পৌর বসতির প্রসার ঘটে। নগর কাঠামো গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় যেসব প্রভাবক ভূমিকা রাখে, সেগুলো এখানে বিদ্যমান। উ হলো মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া। পণ্য বিনিময়কে কেন্দ্র করে বাণিজ্যভিত্তিক এ নগরটি গড়ে উঠেছে। মহাদেশীয় স্থলপথকে কেন্দ্র করে পণ্য বিনিময়ের মিলনস্থল হিসেবে এ নগর গড়ে উঠেছে। নগর কাঠামো গড়ে ওঠার সকল প্রভাবক এখানে সক্রিয়। ঊ হলো সৌদি আরবের মক্কা। হযরত মুহম্মদ (সা:) -এর কর্মভূমিকে কেন্দ্র করে এ শহরটি বিকশিত হয়েছে। এটি একটি সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপভিত্তিক নগর। নগর কাঠামো গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় যেসব প্রভাবক ভূমিকা রাখে, এগুলো এ শহরে বিদ্যমান। প্রশ্ন: 'ঢ' স্থানের জমি উর্বর বলে কিছু পরিবার সেখানে বসতি গড়ে তুলেছে, যারা কৃষিকাজ করে। 'ণ' স্থানে একটি পরিবার মেষপালন করে জীবিকা নির্বাহ করে। 'ত' স্থানে রাস্তার কিনারার ধারে কয়েকটি পরিবার বসবাস করে। ক. যুক্তরাষ্ট্রের খামার বসতি কোন ধরনের বসতির উদাহরণ? খ. শহর বসতিতে পথঘাটের প্রাধান্য দেখা যায় কেন? গ. 'ঢ' ও 'ণ' স্থানের বসতির ধরন ব্যাখ্যা কর। ঘ. তুমি গ্রামে নদীর তীরে বাস কর। 'ঢ', 'ণ' ও 'ত'-এর নিরিখে তোমার বসতির বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ কর। উত্তর : ক. যুক্তরাষ্ট্রের খামার বসতি বিক্ষিপ্ত বসতির উদাহরণ। খ. শহরে বড় বড় অট্টালিকা গড়ে ওঠে। এছাড়া শহরে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, পার্ক ইত্যাদি গড়ে ওঠে। এসব জায়গায় প্রতিদিন অসংখ্য লোকজন চলাচল করে। এসব লোকের চলাচলে প্রয়োজন পড়ে অসংখ্য যানবাহনের। এছাড়াও শহরের অনেক লোকের নিজস্ব যানবাহন রয়েছে। প্রতিদিন অন্যান্য জেলা ও আশপাশের এলাকা থেকে বিভিন্ন কাজে বহু লোক শহরে ভিড় জমায়। তাই লোকজন এবং যানবাহন চলাচলের জন্য শহর বসতিতে পথঘাটের প্রাধান্য দেখা যায়। গ. 'ঢ' স্থানের জমি উর্বর বলে কৃষির ফলন ভালো হয়। তাই এখানে গোষ্ঠীবদ্ধ বা সংঘবদ্ধ বসতি গড়ে ওঠে। এসব বসতির লোকজন কৃষিকাজের সাথে জড়িত। উদ্দীপকে তা নির্দেশিত হয়েছে। এরূপ বসতিতে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ির দূরত্ব কম। সামাজিক বন্ধন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্যই বাসগৃহগুলোর মধ্যে পরস্পরের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে নিজস্ব প্রয়োজনে এবং নিরাপত্তার জন্য তারা একত্রে বসবাস করে। ভূপ্রকৃতি, উর্বর মাটি ও জলের উৎসের ওপর নির্ভর করে এ ধরনের বসতি গড়ে ওঠে। অন্যদিকে 'ণ' স্থানে যে ধরনের বসতি গড়ে উঠেছে তা হলো বিক্ষিপ্ত বসতি। এ ধরনের বসতিতে একটি পরিবার অন্য পরিবার থেকে বহুদূরে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করে। এগুলো অতি ক্ষুদ্র পরিবারভুক্ত বসতি। অধিবাসীদের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা বিরাজ করে। এ ধরনের বসতি বন্ধুর ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলে গড়ে ওঠে। অস্ট্রেলিয়ার মেষপালন কেন্দ্র এ ধরনের বসতির উদাহরণ। উদ্দীপকে এর ইঙ্গিত রয়েছে। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা কষ্টসাধ্য। এ ধরনের বসতি গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ জলাভাব, জলাভূমি ও বিল অঞ্চল, ক্ষয়িত ভূমিভাগ, বনভূমি, অনুর্বর মাটি ইত্যাদি। ঘ. 'ঢ' স্থানের বসতির ধরন হলো গোষ্ঠীবদ্ধ বা সংঘবদ্ধ বসতি, 'ণ' স্থানের বসতির ধরন হলো বিক্ষিপ্ত বসতি। 'ত' স্থানের বসতির ধরন হলো রৈখিক বসতি যা রাস্তার কিনারে গড়ে উঠেছে। আমি গ্রামে নদীর তীরে বাস করি। আমাদের গ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী জীবিকা অর্জনের জন্য প্রথম পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বিশেষত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। গ্রামে প্রচুর কৃষি জমি আছে। এখানে বেশ কয়েকটি পরিবার একত্রিত হয়ে বাস করছে। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ির দূরত্ব কম ও বাসগৃহগুলো প্রায় ক্ষেত্রেই একত্রে সন্নিবেশিত হয়েছে এবং বাড়িগুলো রৈখিক আকৃতিকে নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অর্থাৎ এখানে বসতির 'ত' ধরন রয়েছে। সামাজিক বন্ধন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য আমাদের গ্রামে বাসগৃহগুলোর মধ্যে পরস্পরের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। পানীয়জলের ঘাটতি গ্রামে নেই। গ্রামের মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে এবং নিরাপত্তার জন্য একত্রে বসবাস করছে। গ্রামের বাড়িগুলোর সাথে যোগাযোগের জন্য রাস্তা গড়ে উঠছে। এ ধরনের বসতি হলো গোষ্ঠীবদ্ধ বা সংঘবদ্ধ বসতি যা 'ঢ' বসতি নির্দেশ করে। সুতরাং এ কথা বলা যায় আমি 'ঢ' ধরনের বসতিতে বাস করছি যার আকৃতি 'ত' বসতির। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়