প্রশ্ন : জলবায়ুর উপর মানবসৃষ্ট প্রভাব লিখ।
উত্তর : মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ডের ফলে পুরো পৃথিবীর জলবায়ুর উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। এই ক্ষতি হচ্ছে মূলত গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন, ওজোন স্তরের ক্ষয়, বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র কণা এবং গাছপালা কেটে বন পরিষ্কার করে ফেলার মাধ্যমে। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন : আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলতে কী বুঝ?
উত্তর : একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো স্থানের বায়ু সর্বোচ্চ যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে তার তুলনায় শতকরা কত পরিমাণ আছে তাই হলো আপেক্ষিক আর্দ্রতা। যদি কোথাও আপেক্ষিক আর্দ্রতা ১০০% বলা হয় তবে বুঝতে হবে সেই স্থানের বায়ুতে আর জলীয়বাষ্প যোগ হতে পারবে না। আর্দ্রতা বেশি হলে সেই স্থানে ভেজা বস্তু সহজে শুকানো যায় না।
প্রশ্ন :বায়ুচাপ কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে?
উত্তর : বায়ুচাপ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন- সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতার তারতম্য, বায়ুর উষ্ণতার তারতম্য, বায়ুতে জলীয়বাষ্পের তারতম্য, পৃথিবীর আবর্তন গতি ইত্যাদি।
প্রশ্ন :গ্রিন হাউস কী? অ্যাসিড বৃষ্টি কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তর : গ্রিন হাউস হলো কাচ বা অন্য স্বচ্ছ বস্তু দিয়ে নির্মিত ঘর। বিভিন্ন মানুষসৃষ্ট এবং প্রাকৃতিক উৎস হতে নির্গত সালফার ডাইঅক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড বাতাসে উপস্থিত জলীয়বাষ্প, অক্সিজেন এবং অন্যান্য রাসায়নিকের সাথে বিক্রিয়া করে সালফিউরিক এবং নাইট্রিক অ্যাসিড তৈরি হয়। তারপর তা পানি এবং অন্যান্য বস্তুর সাথে মিশ্রিত হয়ে ভূ-পৃষ্ঠে নেমে আসে। এভাবেই অ্যাসিড বৃষ্টি সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন : বায়ুর তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের নাম কী? আপেক্ষিক আর্দ্রতা কী?ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ কী কী?
উত্তর : বায়ুর তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের নাম হলো থার্মোমিটার। একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো স্থানের বায়ু সর্বোচ্চ যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে তার তুলনায় শতকরা কত পরিমাণ আছে তাহলো আপেক্ষিক আর্দ্রতা। বিভিন্ন দূষণকারী উপাদানের উপস্থিতির কারণে ওজোন স্তর ক্ষয়ে যাচ্ছে। যার ফলে ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশ করে জীবজগতের ক্ষতি করছে। ওজোন স্তর ক্ষয়ের জন্য বায়ু দূষণকারী উপাদানগুলো হচ্ছে ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, হাইড্রো ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ইত্যাদি।
অধ্যায়-৮
পদার্থের বৈশিষ্ট্য এবং এর বাহ্যিক প্রভাব
পদার্থের বৈশিষ্ট্যসমূহ
পদার্থ স্থান দখল করে ও তার ভর রয়েছে এবং প্রকৃতিতে পদার্থকে কঠিন, তরল এবং গ্যাসীয়্তএই তিনটি অবস্থায় পাওয়া যায়। পদার্থের এরকম তিনটি অবস্থা ছাড়াও তার আরও কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন-ঘনত্ব, দ্রাব্যতা, দৃঢ়তা, নমনীয়তা, তাপ ও বিদু্যৎ পরিবাহিতা, চৌম্বকত্ব ইত্যাদি।
ঘনত্ব
একক আয়তনে বস্তুর ভরকে ঘনত্ব বলে। ঘনত্ব বস্তুর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। বিভিন্ন পদার্থের ঘনত্ব বিভিন্ন রকম, কোনোটি বেশি কোনোটি কম। যেমন-লোহা, তামা, পিতল এরকম ধাতব পদার্থের ঘনত্ব বেশি, কাঠ বা পস্নাস্টিকের ঘনত্ব তার তুলনায় কম এবং বাতাসের ঘনত্ব সবচেয়ে কম।
দ্রাব্যতা
পদার্থের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো তার দ্রাব্যতা। লবণ পানিতে দ্রবীভূত হয় কিন্তু তেলে সহজে দ্রবীভূত হয় না। আবার নেইল পলিশ পানিতে দ্রবীভূত হয় না কিন্তু এসিটোনে খুব সহজে দ্রবীভূত হয়।
দৃঢ়তা ও নমনীয়তা
যখন তুমি বিভিন্ন বস্তুকে হাত দিয়ে চাপ দেবে তখন দেখতে পাবে সেগুলোর মধ্যে কিছু সহজেই সংকুচিত হয়ে আসছে এবং কিছু খুবই শক্ত, যেগুলোকে সহজে সংকুচিত করা যাচ্ছে না। এই সংকোচন ধর্মের মাধম্যেই আমরা বলি কোনো পদার্থ নরম, কোনোটি শক্ত, কোনোটি নমনীয়, কোনোটি আবার অনমনীয়।
তাপ ও বিদু্যৎ পরিবাহিতা
তাপ ও বিদু্যৎ পরিবহণ পদার্থের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম। যে সকল পদার্থে তাপ সহজে পরিবহণ করা যায় তাদেরকে তাপ পরিবাহী পদার্থ এবং যে সকল পদার্থে ভাগ সহজে পরিবহণ করা যায় না, তাদেরকে তাপ অপরিবাহী পদার্থ বলা হয়। একইভাবে যেসব পদার্থে বিদু্যৎ সহজে পরিবহণ করা যায় তাদেরকে বিদু্যৎ পরিবাহী পদার্থ এবং যে সকল পদার্থে বিদু্যৎ সহজে পরিবহণ করা যায় না সেগুলোকে বিদু্যৎ অপরিবাহী পদার্থ বলা হয়। সোনা, রূপা, তামা কিংবা অ্যালুমিনিয়াম একই সঙ্গে তাপ ও বিদু্যৎ পরিবাহী পদার্থের উদাহরণ।
চৌম্বকতা
তোমরা সবাই নিশ্চয়ই চুম্বক দেখেছ, না হয় ব্যবহার করেছ। কিছু কিছু পদার্থের চৌম্বকত্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেগুলো অন্য চৌম্বকীয় পদার্থকে আকর্ষণ কিংবা বিকর্ষণ করতে পারে। লোহা, নিকেল কিংবা কোবাল্ট হচ্ছে চৌম্বকীয় পদার্থের উদাহরণ।
বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে পদার্থ শনাক্তকরণ
যেহেতু বিভিন্ন পদার্থের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে তাই সেগুলো ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন পদার্থকে শনাক্ত করতে পারি। যেমন- কোনো পদার্থ চুম্বক দ্বারা আকর্ষিত হলে আমরা বলতে পারব সেটি নিশ্চয়ই একটি চৌম্বকীয় পদার্থ। যদি সেটি তাপ এবং বিদু্যৎ পরিবাহিত করে সেটি সম্ভবত একধরনের ধাতব পদার্থ। যদি নির্দিষ্ট কোনো ধরনের তরলে দ্রবীভূত হয়, তাহলেও আমরা পদার্থটি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারব। পদার্থের ঘনত্বও আমাদেরকে পদার্থ শনাক্ত করার ব্যাপারে সাহায্য করে।
পদার্থের বৈশিষ্ট্য জানার মাধ্যমে সঠিক কাজে সঠিক জিনিস ব্যবহার
-তুমি যদি বাড়িঘর বানাতে চাও তাহলে ইট, পাথর আর লোহার দরকার হয়;
-যদি নৌকা বানাতে চাও, তাহলে কাঠের প্রয়োজন হবে। -আবার আলুমিনিয়াম তাপ পরিবাহী এবং সহজলভ্য বলে রান্নার কাজে আলুমিনিয়ামের হাঁড়ি-পাতিল ব্যবহার করা হয়।
-বিদু্যৎ পরিবহণের জন্য আমরা বিদু্যৎ পরিবাহী তামার তার ব্যবহার করি।
-আবার বই ছাপানোর জন্য কাগজ কিংবা শিশুদের খেলনা তৈরি করার জন্য ব্যাপকভাবে হালকা কিন্তু টেকসই পস্নাস্টিক ব্যবহার করি।
এভাবে দেখা যায় প্রতিটি জিনিসেরই নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্য জানার মাধ্যমে তাদেরকে সঠিক কাজে ব্যবহার করা যায়।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়