বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
  ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ
দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

ঘ. শিবু ও দিপু দেখে ঢাকা নগর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। ঢাকা শহরের পরিবেশ দৃষ্টে তাদের মনে এ ধারণা জন্মে। এ প্রেক্ষাপটে অপরিকল্পিত নগরায়ণের উদ্ভূত নানা পরিবেশগত সমস্যা উলেস্নখ করা যায়। ঢাকার অপরিকল্পিত নগরায়ণের প্রত্যক্ষ পরিবেশগত সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষি জমি কমে যাওয়া, খাবার পানি ও উপযুক্ত পয়ঃনিষ্কাশনের সংকট, বর্জ্য অপসারণ সমস্যা, পরিবহন ও যানজট সংকট, বাসস্থানের অভাব ও বস্তির সৃষ্টি, পানি, বায়ু, মাটি ও শব্দ দূষণ, খোলা জায়গা ও বিনোদন ব্যবস্থার অভাব। ঢাকা উর্বরা কৃষি জমির ওপর গড়ে ওঠায় আবাদি জমি হারিয়ে গেছে এবং পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বিভিন্ন কাজের জন্য একজন মানুষের গড়ে দৈনিক ৭ গ্যালন পানি প্রয়োজন, কিন্তু ঢাকাবাসী এর অর্ধেকও পায় না। ঢাকা শহরে দিনে গড়পড়তা ৯০০ টন বর্জ্য শহরের নিচু খোলা জায়গায় ফেলা হয়। এসব বর্জ্যরে তীব্র দুর্গন্ধ ও চোয়ানি ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠস্থ পানিকে দূষিত করে চলেছে। ক্রমবর্ধমান যানবাহন ঢাকা নগরে লক্ষণীয়। যানবাহনের ধোঁয়ার সঙ্গে অবাধে পলিনিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন, সিসা, অ্যাসবেসটস, পারদ, নিকেল, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি বিষাক্ত পদার্থ ভেসে বেড়ায়। যার কারণে হাঁপানি, সর্দি, কাশি ও অন্যান্য এলার্জিজনিত রোগের মাত্রা বেড়ে গেছে। গ্রাম থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষের আগমনে ঢাকা শহরে সৃষ্টি হচ্ছে বস্তি। যার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে দূষিত পরিবেশ এবং ক্রমান্বয়ে ব্যাপক এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে। ঢাকা শহরকে বাঁচাতে আমাদের আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

প্রশ্ন : নগর পরিকল্পনা ও নগর উন্নয়নের ওপর ডিগ্রিধারী জনাব আবুল কালাম মনে করেন ঢাকা শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সর্বোত্তম হলেও যথেষ্ট নয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, 'অপরিকল্পিত নগর সমস্যার নামান্তর।'

ক. বিশ্বের জনসংখ্যার কত শতাংশ শহরে বাস করে?

খ. 'শহুরে জীবনে অবসর নেই' ব্যাখ্যা কর।

গ. ঢাকা শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পর্কে জনাব আবুল কালামের ধারণা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উক্ত প্রেক্ষাপটে আবুল কালামের উক্তিটি পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

উত্তর :

ক. বিশ্বের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ লোক শহরে বাস করে।

খ. শহর জীবনে অবসর নেই। এখানে গতিময়তা খুব প্রবল। এখানে আয় দ্বারা সামাজিক মর্যাদা নির্ধারিত হয়ে থাকে। আয় উপার্জনের লক্ষ্যে শহর জীবনে গতি বেশি হয়। বিভিন্ন প্রকার পেশা গ্রহণের সুযোগ থাকায় শহরের মানুষ অনেক সময় পেশা পরিবর্তন করে উন্নততর সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে ব্রতী হয়। বিভিন্ন ধরনের পেশা ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে শহরের লোকেরা প্রায় অবসরহীন জীবনযাপন করে।

গ. ঢাকা শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পর্কে উদ্দীপকের জনাব আবুল কালাম মনে করেন তা সর্বোত্তম হলেও যথেষ্ট নয়। ঢাকা শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সর্বোত্তম বিবেচিত হলেও ময়লা আবর্জনার ভারে আজ বুড়িগঙ্গা বিপর্যস্ত এবং ওয়াসা এ নদীর পানি চাদনীঘাট থেকে আহরণ করে পরিশোধন ও বিতরণ করে থাকে। এক্ষেত্রে মেঘনা ও যমুনা নদীর পানির ব্যবহার জরুরি। ঢাকা শহরে দিনে গড়পড়তা ৯০০ টন বর্জ্য শহরের নিচু খোলা জায়গায় ফেলা হয়। এসব বর্জ্যরে তীব্র দুর্গন্ধ ও চোয়ানি ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠস্থ পানিকে দূষিত করে থাকে। অনেক বস্তি এলাকার লোকজন এসব পানি ব্যবহার করে থাকে, যার কারণে চর্ম রোগসহ কলেরা, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে।

ঘ. উক্ত প্রেক্ষাপট তথা ঢাকা শহরের অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে আবুল কালামের উক্তি- 'অপরিকল্পিত নগর, সমস্যার নামান্তর।' উক্তিটি যথার্থ। নগরায়ণ সঠিকভাবে না হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার উদ্ভব হয়। অপরিকল্পিত নগরায়ণে কৃষি জমির ওপর চাপ পড়ে। অনেক সময় ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠস্থ পানি দূষিত হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত লোকজনের আগমনে বস্তি এলাকার সৃষ্টি হয়। অনেক বস্তি এলাকার লোকজন দূষিত পানি পানে বাধ্য হয়। যার কারণে চর্মরোগসহ কলেরা, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। যানবাহনের ধোঁয়ার সঙ্গে বায়ুমন্ডলে পলিনিউক্লিয়ার, হাইড্রোকার্বন, সিসা, অ্যাসবেসটস, পারদ, নিকেল, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি বিষাক্ত পদার্থ ভেসে বেড়ায়। যার কারণে হাঁপানি, সর্দি, কাশি ও অন্যান্য এলার্জিজনিত রোগের মাত্রা বেড়ে যায়। অপরিকল্পিত নগরায়ণ বাসস্থানের তীব্র সংকট সৃষ্টি করে। ব্যাপক এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ে। রাস্তাঘাট, শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন ব্যবস্থা, সহজলভ্য জ্বালানি, হাটবাজার ইত্যাদি নগরায়ণের আবশ্যকীয় উপাদান। অপরিকল্পিতভাবে নগর গড়ে উঠলে এসবের ব্যবস্থা করা দুরূহ হয়ে পড়ে। এছাড়া এর ফলে পরিবেশের ব্যাপক অবক্ষয় ঘটে। সুতরাং জনাব আবুল কালামের মতো বলা যায়, অপরিকল্পিত নগর সমস্যায় পরিপূর্ণ।

প্রশ্ন :

যুক্তরাষ্ট্রের হনলুলু (অ)

রাশিয়ার পিটার্সবার্গ (ই)

ভারতের নয়াদিলিস্ন (ঈ)

মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া (উ)

সৌদি আরবের মক্কা (ঊ)

ক. কী কারণে সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপভিত্তিক নগরের পত্তন দেখা যায়?

খ. নগরায়ণ কী কী সম্পর্কযুক্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত?

গ. অ ও ই নগরের শ্রেণিবিন্যাসের কোন পর্যায়ে পড়ে ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ঈ, উ ও ঊ গড়ে ওঠার কারণ বর্ণনা কর।

উত্তর :

ক. ধর্মীয় বা শিক্ষাবিস্তারের কারণে সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপভিত্তিক নগরের পত্তন দেখা যায়।

খ. নগরায়ণ দুটি সম্পর্কযুক্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত :

১. গ্রামীণ এলাকা থেকে পৌর এলাকায় মানুষের আগমন এবং এর ফলে গ্রামীণ এলাকা অপেক্ষা পৌর এলাকায় বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত বৃদ্ধি পাওয়া;

২. নগরের সঙ্গে জড়িত সংস্কৃতির কতিপয় ধরনসহ গ্রামীণ এলাকায় পৌর প্রভাবের বিস্তার এবং এই প্রভাব প্রসার লাভ করার ফলে অতিমাত্রায় নগরায়িত সমাজে গ্রামীণ ও পৌর জনসংখ্যার মধ্যে সাংস্কৃতিক পার্থক্য হ্রাস পায়।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে