দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
গ. দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এনজিওতে কর্মরত রফিক সাহেবের উপলব্ধি হয় যে, ভূপ্রকৃতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা বসতি স্থাপনের অন্তরায়। অর্থাৎ বসতি স্থাপনের নিয়ামক হিসেবে তিনি ভূপ্রকৃতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উপলব্ধি করেন। কোনো স্থানে বসতি গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ভূপ্রকৃতি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনবসতি গড়ে ওঠার পেছনে ভূপ্রকৃতি ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। সমতল ভূমিতে কৃষিকাজ সহজে করা যায়। কিন্তু পাহাড়ি এলাকার ভূমি অসমতল হওয়ায় কৃষিকাজ করা তেমন সম্ভব হয় না। যাতায়াত সুবিধার কারণে মূলত কৃষি জমির নিকট জনবসতি তৈরি হয়। এ কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসতির ঘনত্ব সমতল ভূমির তুলনায় কম। উদ্দীপকে রফিক সাহেব এমনই এক এলাকায় কর্মরত। প্রাচীনকাল থেকে যাতায়াত ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে বসতি গড়ে উঠেছে। যেমন : নদী তীরবর্তী স্থানে নৌ চলাচলের এবং সমতল ভূমিতে যাতায়াতের সুবিধা থাকায় এরূপ স্থানে পুঞ্জীভূত বসতি গড়ে উঠেছে। ঘ. আমি মনে করি উক্ত নিয়মকদ্বয় তথা ভূপ্রকৃতি ও যোগাযোগ ছাড়াও বসতি স্থাপনের আরও নিয়ামক রয়েছে। যেমন : পানীয় জলের সহজলভ্যতা : জীবন ধারণের জন্য মানুষের প্রথম ও প্রধান চাহিদা হলো বিশুদ্ধ পানীয় জল। এজন্যই নির্দিষ্ট জলপ্রাপ্যতার স্থানে মানুষ বসতি গড়ে তোলে। মরুময় এবং উপমরুময় অঞ্চলে ঝরনা অথবা প্রাকৃতিক কূপের চারদিকে মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে বসতি স্থাপন করে। পানীয় জলের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা এই সমস্ত বসতিকে আর্দ্র অঞ্চলের বসতি বলে। মাটি : মাটির উর্বরা শক্তির উপর নির্ভর করে বসতি স্থাপন করা হয়। উর্বর মাটিতে পুঞ্জীভূত জনবসতি গড়ে ওঠে, কিন্তু মাটি অনুর্বর হলে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে ওঠে। মাটির প্রভাবে জার্মানি, পোল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন প্রভৃতি দেশে বিক্ষিপ্ত জনবসতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিরক্ষা : প্রাচীনকালে প্রতিরক্ষার সুবিধার জন্যই মানুষ পুঞ্জীভূত বসতি স্থাপন করে। বহিরাগত শত্রম্নর আক্রমণ বা বন্যজন্তুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ একত্রে বসবাস করত। কারণ প্রাচীনকালে আত্মরক্ষার জন্য কোনো আধুনিক অস্ত্রের প্রচলন ছিল না। পশুচারণ : পশুচারণ এলাকায় সাধারণত ছড়ানো বসতি দেখা যায়। পশুচারণের জন্য বড় বড় এলাকার দরকার হয়। ফলে নিজেদের সুবিধার জন্য তারা বিক্ষিপ্তভাবে বসতি স্থাপন করে থাকে। প্রশ্ন : 'ঢ' শহরটি প্রাচীনকালে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র ছিল। পরবর্তীতে এ রাষ্ট্রের পতনের পর কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এর গতি স্তিমিত ছিল। বর্তমানে এ রাষ্ট্রটি একটি আধুনিক নগরী হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। ক. রৈখিক বসতি কী? খ. প্রাচীনকালে কোথায় নগরসভ্যতার বিকাশ ঘটে? গ. 'ঢ' নগরীর সাথে আধুনিক নগর বসতির বৈশিষ্ট্য তুলনা কর। ঘ. 'ঢ' নগরের পতনের পর শিল্পবিপস্নবের পূর্ব পর্যন্ত নগরায়ণের ক্রমবিকাশ আলোচনা কর। উত্তর : ক. যে বসতিতে বাড়িগুলো একই সরলরেখায় গড়ে ওঠে তাকে রৈখিক বসতি বলে। খ. প্রাচীনকালে নগরের উৎপত্তি ঘটে মূলত অর্থনৈতিক কারণে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্রাচীন মিসরের নগরসমূহ রাজশক্তি বা পুরোহিত শক্তির কেন্দ্ররূপে বিকশিত হয়েছিল। নীলনদের অববাহিকায় মেমফিস, থেবস (৩০০০ খ্রিষ্টপূর্ব), সিন্ধু অববাহিকায় মহেঞ্জদাড়ো, হরাপ্পা (২৫০০ খ্রিষ্টপূর্ব) প্রভৃতি নগরের উৎপত্তি ঘটে। এগুলো নগর সভ্যতার সূতিকাগার। প্রাচীনকালে রোম ছিল সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী নগরী। গ. 'ঢ' নগরীটি হলো রোম শহর। প্রাচীনকালে রোম নগরী ছিল সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী নগর রাষ্ট্র। উদ্দীপকে তা উলিস্নখিত হয়েছে। প্রাচীন 'ঢ' নগরী তথা রোম নগরীতে প্রতিরক্ষার জন্য দুর্গ গড়ে তোলা হতো। নগরের কেন্দ্রস্থলে প্রশাসনিক ভবন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। আধুনিক নগর বসতিতে প্রাচীর ও দুর্গ প্রতিরক্ষামূলক নগর ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটে। প্রাচীন রোম নগরে শাসনকার্যের সাথে জড়িত শ্রেণি পুরোহিতদের প্রাধান্য ছিল। নগর কেন্দ্রের নিকটস্থ প্রশস্ত রাজপথ এলাকায় উচ্চ শ্রেণির আবাসিক এলাকা ছিল। নগর প্রাচীরের বাইরে নিম্ন আয়ের লোকজন বসবাস করত। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক নগর আকার ও আয়তনে ব্যাপকতা লাভ করেছে। এখানে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যাপকহারে প্রসার লাভ করেছে। অভ্যন্তরীণ পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বিস্তৃতি ও আধুনিকায়ন ঘটেছে। প্রশাসনিক কার্যকলাপ ও ধর্মীয় কর্মকান্ড থাকলেও তা গণতান্ত্রিক ও প্রজাতান্ত্রিক, শাসকদের কুক্ষিগত নয়। এছাড়া বর্তমান নগরে প্রাচীন 'ঢ' তথা রোম নগরের মতো শ্রেণিবিভাজন নয় বরং ব্যাপক শ্রম বিভাজন দেখা যায়। ঘ. 'ঢ' নগরটি হলো প্রাচীন রোম নগর। প্রাচীনকালে রোম ছিল সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী নগরী। রোমের পতনের কারণে কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত নগর প্রবৃদ্ধির গতি স্তিমিত ছিল। ইতিহাসে এ সময়টি 'অন্ধকার যুগ' নামে খ্যাত। অষ্টম শতাব্দী থেকে মুসলমানদের রাজ্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আরম্ভ করে ভারতীয় উপমহাদেশ পর্যন্ত নতুন নতুন শহর ও নগর গড়ে উঠতে থাকে। মুসলমানদের শাসন ইউরোপে স্পেন পর্যন্ত প্রসার লাভ করে এবং টলিডো, কর্ডোভা ও সেভিল শিক্ষা ও সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ পাদপীঠে পরিণত হয়। ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে ইউরোপীয়গণ বাণিজ্য, বসতি, উপনিবেশ ও সাম্রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়লে মোম্বাসা, দারেসসালাম, মালাক্কা, গোয়া, কলকাতা, সায়গন, জাকার্তা, বালটিমোর, ফিলাডেলফিয়া, বোস্টন, কুইবেক ও মন্ট্রিয়াল প্রভৃতি শহর ও নগর গড়ে ওঠে। শিল্প বিপস্নবের পর নগরায়ণে নতুন মাত্রা ও গতি পায়। পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়