দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
ঘ. কাজল বাস করে শহরে অর্থাৎ সে নগরে বসতিতে বাস করে। যে বসতি অঞ্চলে অধিকাংশ অধিবাসী প্রত্যক্ষ ভূমি ব্যবহার ব্যতীত অন্যান্য অকৃষিকার্য যেমন : গ্রামীণ অধিবাসীদের উৎপাদিত দ্রব্যাদির শিল্পজাতকরণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, প্রশাসন, শিক্ষা-সংক্রান্ত কার্য প্রভৃতি পেশায় নিয়োজিত থাকে, তাকে নগর বসতি বলে। বাহ্যিক দিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যায়, শহরে অনেক রাস্তাঘাট ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশাল বিশাল আকাশচুম্বী অট্টালিকা (ঝশুংপৎধঢ়ঢ়বৎ) রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, নার্সিংহোম, আমোদ-প্রমোদের জন্য বহুপ্রকার সংস্থা, পার্ক ইত্যাদি থাকে। বড় বড় শহরের বিভিন্ন অংশে নানা ধরনের কর্মকান্ড চলে। যেমন- উদ্দীপকের কাজল শহরে একটি আধুনিক বাড়ি নির্মাণ করেছে। প্রশ্ন : এইচএসসি পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির উদ্দেশ্যে ইমরুল ঢাকায় রওনা হলো। ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে সে দেখতে পেল রেললাইন ঘেঁষে অসংখ্য ছোট ছোট বস্তি গড়ে উঠেছে, যেখানে জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত নিম্ন। কিন্তু ঢাকায় কিছুদিন থাকার পর, এর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেখে ইমরুল এ শহরে থেকে যেতে উৎসাহী হলো। ক. গ্রামীণ বসতি কী ধরনের হতে পারে? খ. শহুরে বসতির অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যাখ্যা কর। গ. ইমরুল কেন ঢাকায় থেকে যেতে উৎসাহী হলো? ঘ. ইমরুল রেললাইন ঘেঁষে যা দেখল তা গড়ে ওঠার কারণ ও প্রভাব বিশ্লেষণ কর। উত্তর : ক. গ্রামীণ বসতি বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত ও গোষ্ঠীবদ্ধ এর যে কোনোটি হতে পারে। খ. শহুরে বসতির অধিবাসীরা অকৃষিকার্য পেশায় নিয়োজিত থাকে। এর মধ্যে আছে গ্রামীণ অধিবাসীদের উৎপাদিত দ্রব্যাদির শিল্পজাতকরণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও শহুরে বসতির অধিবাসীরা বিভিন্ন সেবা কর্মসম্পর্কিত অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথেও নিয়োজিত; যেমন- প্রশাসন, শিক্ষা সংক্রান্ত কার্য ইত্যাদি। গ. ইমরুল বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কারণে ঢাকা শহরে থেকে যেতে উৎসাহী হলো। এ শহরে যেসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা হলো : উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা : ঢাকা শহরে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত। ফলে বিভিন্ন স্থানের সাথে যোগাযোগ করা সহজ। এখান থেকে অন্য শহরে যাতায়াতও অনেক সহজ। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও সহজলভ্য পানীয় : গ্রাম অপেক্ষা ঢাকা শহরে বিশুদ্ধ পানীয়জলের সহজলভ্যতা আছে। ওয়াসা থেকে এখানে পানি সরবরাহ করা হয়। এছাড়া পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রাম অপেক্ষা উন্নত। শিক্ষা ও চিকিৎসা : ঢাকা শহরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গ্রামীণ বসতি অপেক্ষা অধিক সুযোগ-সুবিধা দেয়। এখানে অনেক হাসপাতাল, নার্সিং হোম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানকার চিকিৎসাসেবা হাতের নাগালের মধ্যে থাকে। চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোও গ্রাম অপেক্ষা অনেক বেশি কাছাকাছি থাকে। বিনোদন কেন্দ্র : ঢাকা শহরের লোকদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন আমোদ-প্রমোদ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এছাড়াও আছে পার্ক, সিনেমা হল ইত্যাদি যা গ্রামে অনুপস্থিত। উপরিউক্ত সুযোগ সুবিধার কারণে ইমরুল ঢাকায় থাকতে উৎসাহী হলো। ঘ. ইমরুল কমলাপুর রেললাইন ঘেঁষে যে বসতিগুলো দেখল তা হলো বস্তি। ঢাকা শহরে যত্রতত্র বস্তি গড়ে উঠেছে। ঢাকা শহরে লোকসংখ্যা যত বাড়ছে, বসতির ওপর চাপও তত বাড়ছে। গ্রাম অপেক্ষা ঢাকা শহরে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন মানুষকে এ শহরের প্রতি আকর্ষণ করে তুলছে। ফলে শহরে ধারণক্ষমতা অপেক্ষা অধিক লোক আসায় বস্তি গড়ে উঠেছে। গ্রামীণ এলাকায় আবাদি জমি কমে যাওয়ায় এবং কৃষিকাজের প্রতি লোকদের অনীহা থেকে গ্রাম কর্মসংস্থানের অভাব দেখা দেয়। গ্রাম থেকে দরিদ্র মানুষ শহরে ছুটে আসে। শহরের মধ্যে তারা স্থান না পেয়ে বস্তিতে আশ্রয় নেয়। এসব কারণে ঢাকা শহরে বস্তি গড়ে উঠছে। এসব বস্তি শহরে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ঢাকা শহরে যত্রতত্র বস্তি গড়ে ওঠায় শহরের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। যথাযথ পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা, যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা, অতিরিক্ত লোকের জন্য পানীয় জলের সরবরাহ না থাকায় বস্তিতে এসব মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সম্পদের ওপর। বস্তিগুলোতে নানা রকম অসামাজিক কার্যকলাপ যেমন মাদক সেবনের প্রবণতা দেখা যায়। এছাড়াও বস্তি এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেখা যায়। প্রশ্ন : রফিক সাহেব একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা। তিনি তার প্রতিষ্ঠানের কাজে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এক প্রত্যন্ত এলাকায় আছেন। এ এলাকার বসতি দেখে তার উপলব্ধি হয় যে, ভূপ্রকৃতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা বসতি স্থাপনের অন্তরায়। ক. পুঞ্জীভূত বসতি কাকে বলে? খ. প্রাচীনকালে কেন পুঞ্জীভূত বসতি স্থাপিত হয়েছিল? গ. বসতি স্থাপনের যে নিয়ামক দুইটি রফিক সাহেবের উপলব্ধিতে আসে তা ব্যাখ্যা কর। ঘ. তুমি কি মনে কর উক্ত নিয়ামকদ্বয় ছাড়াও বসতি স্থাপনের আরও নিয়ামক রয়েছে? বিশ্লেষণ কর। উত্তর : ক. কোনো এক স্থানে বেশ কয়েকটি পরিবার একত্রিত হয়ে বসবাস করাকে পুঞ্জীভূত বসতি বলে। খ. প্রাচীনকালে প্রতিরক্ষার সুবিধার জন্যই মানুষ পুঞ্জীভূত বসতি স্থাপন করে। বহিরাগত শত্রম্নর আক্রমণ বা বন্যজন্তুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ একত্রে বসবাস করত। কারণ প্রাচীনকালে আত্মরক্ষার জন্য কোনো আধুনিক অস্ত্রের প্রচলন ছিল না। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়