মানব বসতি প্রশ্ন : তাসিন তার ফুফুর বাড়ি শিবপুর গ্রামে বেড়াতে যায়। সে দেখল এখানকার বাড়িগুলো নদীর ধার ঘেঁষে প্রায় এক লাইনে গড়ে উঠেছে। অথচ তার নিজ বাসস্থলে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি অনেক দূরে অবস্থিত এবং সেখানকার ভূপ্রকৃতিও বন্ধুর। ক. প্রাচীনকালে কোন সুবিধার জন্য মানুষ পুঞ্জীভূত বসত স্থাপন করে। খ. নগর বসতি কী? ব্যাখ্যা কর। গ. তাসিনের ফুফুদের গ্রামে যে ধরনের বসতি গড়ে উঠেছে তার কারণ ব্যাখ্যা কর। ঘ. তাসিনের নিজ বাসস্থলের বসতিগুলো গড়ে ওঠার পিছনে শুধুমাত্র ভূপ্রকৃতির বন্ধুরতাই কি দায়ী- যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর। উত্তর : ক. প্রাচীনকালে প্রতিরক্ষার সুবিধার জন্য মানুষ পুঞ্জীভূত বসত স্থাপন করে। খ. যে বসতি অঞ্চলে অধিকাংশ অধিবাসী প্রত্যক্ষ ভূমি ব্যবহার ব্যতীত অন্যান্য অকৃষিকার্য যেমন- গ্রামীণ অধিবাসীদের উৎপাদিত দ্রব্যাদির শিল্পজাতকরণ, পরিবহণ, ক্রয়-বিক্রয়, প্রশাসন, শিক্ষা-সংক্রান্ত কার্য প্রভৃতি পেশায় নিয়োজিত থাকে, তাকে নগর বসতি বলে। বাহ্যিক দিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যায়, শহরে অনেক রাস্তাঘাট ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশাল বিশাল আকাশচুম্বী অট্টালিকা (ঝশুংপৎধঢ়ঢ়বৎ) রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, নার্সিংহোম, আমোদ-প্রমোদের জন্য বহুপ্রকার সংস্থা, পার্ক ইত্যাদি থাকে। গ. তাসিনের ফুফুদের গ্রামে রৈখিক বসতি গড়ে উঠেছে। অবস্থানের প্রেক্ষিতে ও বাসগৃহসমূহের পরস্পরের ব্যবধানের ভিত্তিতে গ্রামীণ বসতিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে রৈখিক বসতি অন্যতম। রৈখিক বসতিতে বাড়িগুলো একই সরলরেখায় গড়ে ওঠে। প্রধানত প্রাকৃতিক এবং কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক কারণ এ ধরনের বসতি গড়ে উঠতে সাহায্য করে। নদীর প্রাকৃতিক বাঁধ, নদীর কিনারা, রাস্তার কিনারা প্রভৃতি স্থানে এই ধরনের বসতি গড়ে ওঠে। উদ্দীপকে তাসিনের ফুফুর বাড়ি শিবপুর গ্রামে নদীর ধার ঘেঁষে এক লাইনে রৈখিক বসতি গড়ে ওঠে। এই অবস্থায় গড়ে ওঠা পুঞ্জীভূত রৈখিক ধরনের বসতিগুলোর মধ্যে কিছুটা ফাঁকা থাকে। এই ফাঁকা স্থানটুকু ব্যবহৃত হয় খামার হিসেবে। বন্যামুক্ত সমস্ত উচ্চভূমি এই ধরনের বসতির জন্য সুবিধাজনক। ঘ. তাসিনের নিজ বাসস্থানের বসতিগুলো বিক্ষিপ্ত বসতির উদাহরণ, যা গড়ে ওঠার পিছনে শুধু ভূপ্রকৃতির বন্ধুরতাই দায়ী নয়। বিক্ষিপ্ত বসতি : এ ধরনের বসতিতে একটি পরিবার অন্যান্য পরিবার থেকে ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় বসবাস করে। চিত্র : বিক্ষিপ্ত বসতি কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রের খামার বসতি ও অস্ট্রেলিয়ার মেষপালন কেন্দ্র এ ধরনের বসতির উদাহরণ। কখনো কখনো দুটি বা তিনটি পরিবার একত্রে বসবাস করে। তবে এ ক্ষেত্রেও এদের অতি ক্ষুদ্র বসতি অপর ক্ষুদ্র বসতি থেকে দূরে অবস্থান করে। বিক্ষিপ্ত বসতির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ক. দুটি বাসগৃহ বা বসতির মধ্যে যথেষ্ট ব্যবধান। খ. অতি ক্ষুদ্র পরিবারভুক্ত বসতি। গ. অধিবাসীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা। এসব বৈশিষ্ট্যের নিরিখে বলা যায়, বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে ওঠার পেছনে কতগুলো প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক কারণ কাজ করে। পৃথিবীর অধিকাংশ বিক্ষিপ্ত বসতি বন্ধুর ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলে গড়ে উঠেছে। বন্ধুর ভূপ্রকৃতিতে যেমন কৃষিকাজের জন্য সমতলভূমি পাওয়া যায় না, তেমনি এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলাও কষ্টসাধ্য। বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ জলাভাব, জলাভূমি ও বিল অঞ্চল, ক্ষয়িত ভূমিভাগ, বনভূমি, অনুর্বর মাটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিক্ষিপ্ত বসতির জন্ম দেয়। সুতরাং বিক্ষিপ্ত ধরনের বসতি গড়ে ওঠার পিছনে শুধু ভূপ্রকৃতির বন্ধুরতাই দায়ী নয়। প্রশ্ন :কাজল ও সজল দুই ভাই। কাজল শহরে চাকরি করে। আর সজল গ্রামে বাস করে। সে কৃষি কাজের সাথে জড়িত। সম্প্রতি কাজল শহরে একটি আধুনিক বাড়ি নির্মাণ করেছে। সজল গ্রামে মাটির বাড়িতে বাস করে। ক. মানব বসতি কী? খ. গ্রামীণ বসতির অধিবাসীরা কী কী পেশার সাথে সম্পৃক্ত? গ. সজল ও কাজলের বসবাসরত স্থানের ধরন ও কর্মকান্ডের মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা কর। ঘ. কাজল যে বসতিতে বাস করে সেখানকার বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর। উত্তর: ক. কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে মানুষ একত্রিত হয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করলে তাকে মানব বসতি বলে। খ. গ্রামীণ বসতির অধিবাসীরা প্রাথমিক উৎপাদন অর্থাৎ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া গ্রামীণ বসতিতে কৃষি ছাড়াও অন্যান্য প্রাথমিক উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী দেখা যায়। যেমন : মাছ ধরা, মাটির জিনিস তৈরি করা, লোহাজাত সামগ্রী উৎপাদন করা ইত্যাদি। গ্রামের একই পেশার মানুষ একত্রে বসবাস করে এক একটি পাড়া বা গ্রাম গড়ে তোলে। যেমন জীবিকার প্রধান উৎস অনুসারে জেলে গ্রাম, মৃৎশিল্পের কুমারপাড়া, লৌহজাত দ্রব্য তৈরির কামারপাড়া ইত্যাদি। অর্থাৎ গ্রামে, কৃষক, কামার, কুমার, জেলে ইত্যাদি পেশার লোক দেখা যায়। গ. কাজল বাস করে শহরে আর সজল বাস করে গ্রামে। উভয়ের বসতির মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। সজলের বসতি অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী প্রথম পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বিশেষত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কাজলের বসতি অঞ্চলে অধিকাংশ অধিবাসী প্রত্যক্ষ ভূমি ব্যবহার ব্যতীত অন্যান্য অকৃষিকার্য পেশায় নিয়োজিত। গ্রামীণ বসতিতে গ্রামবাসীরা খোলা জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করেন। গ্রামের স্থাপনাগুলো সাধারণত মাটি ও কাঠের তৈরি। নগর বসতিতে লোকজন স্বল্প জায়গায় বাড়ি করেন। শহরের স্থাপনাগুলো সাধারণত ইট, সিমেন্টের তৈরি। গ্রামীণবসতি বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত ও গোষ্ঠীবদ্ধ এর যে কোনোটি হতে পারে। জীবিকার প্রধান উৎস অনুসারে এ বসতিগুলোকে জেলে গ্রাম, কুমারপাড়া, কামারপাড়া ইত্যাদি নামে চিহ্নিত করা হয়। নগর বসতি প্রশাসনিক নগর, বাণিজ্যিক নগর, শিল্পভিত্তিক নগর ইত্যাদি নানা ধরনের হতে পারে। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়