উত্তর :
ক. বলপূর্বক অভিগমনের ফলে যে সকল ব্যক্তি কোনো স্থানে আগমন করে ও স্থায়ীভাবে আবাস স্থাপন করে তাদের বলে উদ্বাস্তু।
খ. কোনো দেশের জনসংখ্যা সংকোচন প্রধানত দুইভাবে কার্যকর করা বহির্গমন বৃদ্ধি। সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে কোনো দেশের জন্মহার স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ব্যাপক প্রচার ও জন্মনিয়ন্ত্রণের সামগ্রীসমূহ জনসাধারণের নিকট সহজলভ্য করা ছাড়াও এ বিষয়ে কয়েকটি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। যেমন : আইন করে বিবাহের বয়স বৃদ্ধি করা, সন্তান সংখ্যা সীমিত রাখার জন্য জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, গর্ভপাত আইনসঙ্গত করা ইত্যাদি।
গ. ফরহাদের অভিবাসন অবাধ অভিবাসনের অন্তর্ভুক্ত। ফরহাদ নিজ ইচ্ছায় নিজের দেশ ত্যাগ করে পছন্দমতো দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। এ ধরনের অভিবাসন হলো অবাধ অভিবাসন। গন্তব্যস্থলের টান বা আকর্ষণমূলক কারণে ফরহাদ যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসিত হয়েছে। যেসব কারণ এ ধরনের অভিবাসনে উৎসাহিত করে সেগুলো হলো :
১. আত্মীয় স্বজন ও নিজ গোষ্ঠীভুক্ত জনগণের নৈকট্য লাভ;
২. কর্মসংস্থান ও অধিকতর আর্থিক সুযোগ-সুবিধা;
৩. শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গৃহসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তাগত সুবিধা;
৪. বিশেষ দক্ষতার চাহিদা ও বাজারের সুবিধা;
৫. বিবাহ ও সম্পত্তি প্রাপ্তিমূলক ব্যক্তিগত সুবিধা।
উদ্দীপকের ফরহাদ ও এমনি কোনো এক বা একাধিক কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয় যা অবাধ অভিবাসনের অন্তর্ভুক্ত।
ঘ. অভিবাসনের স্বাভাবিক ফলাফল হচ্ছে জনসংখ্যার বণ্টন বা অবস্থানিক পরিবর্তন। অবস্থানগত পরিবর্তন ছাড়াও অভিবাসন একটি এলাকায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন বয়ে আনে। উদ্দীপকের ফরহাদের যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনও তাই অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে নিম্নরূপ ফলাফল বয়ে আনবে।
অর্থনৈতিক ফলাফল : অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্যই ফরহাদ অভিবাসনে আগ্রহী হয়। এতে উৎস ও গন্তব্যস্থলে ভূমি ও সম্পত্তির শরিকানা, মজুরির হার, বেকারত্ব, জীবনযাত্রার মান, বাণিজ্যিক লেনদেনের ভারসাম্য, অথনৈতিক উৎপাদন ও উন্নয়ন ধারা পরিবর্তন হতে পারে। ফরহাদ যেহেতু যথাযথ পদ্ধতি অবলম্বন করে সেখানে গেছে সেজন্য তার ঝামেলা অনেকটা কম হবে।
সামাজিক ফলাফল : অভিবাসনের ফলে সামাজিক আচার-আচরণের আদান-প্রদান হয়। সামাজিক অনেক রীতিনীতি ফরহাদের দ্বারা সেখানে স্থানান্তরিত হবে। সেখানকার জনগণের মধ্যে ভাব, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান হবে। ফলে উৎস ও গন্তব্যস্থলের সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটবে। অন্য দেশের সংস্কৃতির মধ্যে বসবাস করায় তার উৎস স্থলের সামাজিক বৈশিষ্ট্য ক্ষুণ্ন হবে।
৬. চাঁন মিয়ার নিমতলী গ্রামে ২০ বছর আগে লোকসংখ্যা ছিল ১,৭০০ জন। বর্তমানে এ গ্রামের লোকসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪,২০০ জন। তার গ্রামে এ বছর ২৮০ জন শিশু জন্মগ্রহণ করে এবং ৭০ জন মারা যায়। ইদানীং তার গ্রামে ফসলি জমিতে বসতবাড়ি তৈরি হচ্ছে। এছাড়া গ্রামে অভাব অনটনও বেড়ে যাচ্ছে।
ক. জনসংখ্যা বৃদ্ধি কী?
খ. অঞ্চলভেদে মরণশীলতার পার্থক্য ব্যাখ্যা কর।
গ. নিমতলী গ্রামটির জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার কত?
ঘ. ৪০ বছর পরে চাঁন মিয়ার গ্রামের অবস্থা কেমন হবে- বিশ্লেষণ কর।
উত্তর :
ক. যখন দেশের প্রাপ্ত সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা বেশি হয়, তাকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বলে।
খ. অঞ্চলভেদে মরণশীলতার পার্থক্য রয়েছে। অনুন্নত দেশগুলোতে মৃতু্যহার অনেক বেশি। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মৃতু্যহার কিছুটা কমে এসেছে এবং উন্নত দেশগুলোতে স্বাভাবিক মৃতু্যহার রয়েছে। আবার নারী-পুরুষের মৃতু্যহারের পার্থক্য দেখা যায়। সাধারণত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রজননশীল নারীদের মৃতু্যহার বেশি পরিলক্ষিত হয়। আবার অনুন্নত দেশগুলোতে শিশু মৃতু্যহার ও বেশি দেখা যায়।
গ. আমরা জানি, জন্ম-মৃত্য সংখ্যা থেকে স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নির্ণয়ের সূত্র হলো:
কোনো বছরে জন্মিত মোট সংখ্যা জ্জ কোনো বছরে মৃতু্য বরণকারী মোট সংখ্যা
বছরের মধ্যকালীন মোট জনসংখ্যা ক্ম ১০০
এখানে, নিমতলী গ্রামের জনসংখ্যা
জীবন্ত জন্মগ্রহণকারী শিশুসংখ্যা = ২৮০
মৃতু্যবরণকারী জনসংখ্যা = ৭০
বছরের মধ্যে সময়ের মোট জনসংখ্যা = ৪২০০
নিমতলী গ্রামের স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার =
২৮০ - ৭০
৪২০০ দ্ধ ১০০
= ২১০
৪২০০ দ্ধ ১০০
= ৫%
ঘ. ৪০ বছর পরে এ গ্রামের জনসংখ্যা আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। ২০ বছর আগে চাঁন মিয়ার গ্রামের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১৭০০ জন। আর বর্তমানে ৪২০০ জন। বর্তমান জনসংখ্যা আগের তিনগুণ। এ বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য নির্মাণ করতে হয়েছে বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট। এ জনসংখ্যাই গ্রামটির জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে এনেছে। গ্রামের ফসলি জমির পরিমাণ কমে গিয়েছে। বেড়েছে অভাব অনটন। নিমতলী গ্রামে জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ হার যদি অব্যাহত থাকে তবে ৪০ বছর পরে এ গ্রামের জনসংখ্যা আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এ সময় এ গ্রামের অবস্থা কী হবে সেটা চিন্তা করাও অকল্পনীয়। ধারণা করা যায় এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। ফসলি জমি থাকবে না বললেই চলে। ফলে খাদ্যের অভাবে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হতে পারে। অভাব-অনটনে প্রতিটি পরিবার জর্জরিত হবে। মারাত্মকভাবে বেড়ে যাবে চুরি, ডাকাতি,
রাহাজানি ইত্যাদির মতো ঘটনা। গ্রামটি হয়ে পড়বে বৃক্ষশূন্য। ফলে গ্রামের পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়বে। অবর্ণনীয় বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে গ্রামটিতে।