দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

প্রকাশ | ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
গ উদ্দীপকে মৃদুলদের বাসা কাঁপছিল এবং আশপাশে সবাই ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরে চলে আসে। সুতরাং উক্ত ঘটনাটি হলো ভূমিকম্প। বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত ভূমিকম্পের যেসব অপ্রধান কারণ নির্ণয় করেছেন তা হলো : ১. শিলাচু্যতি বা শিলাতে ভাঁজের সৃষ্টি : কোনো কারণে ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে বড় ধরনের শিলাচু্যতি ঘটলে বা শিলাতে ভাঁজের সৃষ্টি হলে ভূমিকম্প হয়। ২. তাপবিকিরণ : ভূত্বক তাপ বিকিরণ করে সংকুচিত হলে ফাটল ও ভাঁজের সৃষ্টি হয়ে ভূমিকম্প হয়। ৩. ভূগর্ভস্থ বাষ্প : পৃথিবীর অভ্যন্তরে অত্যধিক তাপের কারণে বাষ্পের সৃষ্টি হয়। এই বাষ্প ভূত্বকের নিম্নভাগে ধাক্কা দেওয়ার ফলে প্রচন্ড ভূকম্পন অনুভূত হয়। ৪. ভূগর্ভস্থ চাপের বৃদ্ধি বা হ্রাস : অনেক সময় ভূগর্ভে হঠাৎ চাপের হ্রাস বা বৃদ্ধি হলে তার প্রভাবে ভূমিকম্প হয়। ৫. হিমবাহের প্রভাব : হঠাৎ করে হিমবাহ পর্বত গাত্র থেকে নিচে পতিত হলে ভূপৃষ্ঠ কেঁপে ওঠে এবং ভূমিকম্প হয়। ঘ. উক্ত ঘটনা তথা ভূমিকম্পের ফলে ভূপৃষ্ঠের অনেক ধরনের পরিবর্তন ঘটে এবং ধ্বংসলীলা সাধিত হয়। ঘরবাড়ি, সহায়সম্পদ ও যাতায়াত ব্যবস্থা ধ্বংস হয়। যেমন- ১. ভূমিকম্পের ফলে ভূত্বকের মধ্যে অসংখ্য ভাঁজ, ফাটল বা ধসের সৃষ্টি হয়। নদীর গতিপথ পাল্টে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৭৮৭ সালে আসামে যে ভূমিকম্প হয় তাতে পুরাতন ব্র?হ্মপুত্র নদের তলদেশ কিছুটা উঁচু হয়ে যায়। ফলে নদীটি তার গতিপথ পাল্টে বর্তমানে যমুনা নদী দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। ২. ভূমিকম্পের ফলে অনেক সময় সমুদ্রতল উপরে উত্থিত হয়, পাহাড়-পর্বত বা দ্বীপের সৃষ্টি করে। আবার কোথাও স্থলভাগের অনেক স্থান সমুদ্রতলে ডুবে যায়। ১৮৯৯ সালে ভারতের কচ্ছ উপসাগরের উপকূলে প্রায় ৫,০০০ বর্গকিলোমিটার স্থান সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হয়। ৩. ভূমিকম্পের ফলে অনেক সময় নদীর গতি পরিবর্তিত হয় বা কখনো কখনো বন্ধ হয়ে যায়। কখনো কখনো নদী শুকিয়ে যায়। আবার সময় সময় উচ্চভূমি অবনমিত হয়ে জলাশয়ের সৃষ্টি হয়। ১৯৫০ সালে আসামের ভূমিকম্পে দিবং নদীর গতি পরিবর্তিত হয়ে যায়। ৪. ভূমিকম্পের ফলে হঠাৎ করে সমুদ্র উপকূল সংলগ্ন এলাকা জলোচ্ছ্বাসে পস্নাবিত হয়। সুতরাং ভূপৃষ্ঠের আকস্মিক রদবদল করে ভূমিকম্প সুদূরপ্রসারী ফলাফল বয়ে আনে। প্রশ্ন: ভূমিকম্পের ফলে ভূপৃষ্ঠের অনেক ধরনের পরিবর্তন ঘটে এবং বহু ধ্বংসলীলা সাধিত হয়। এতে জীবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। ভূমিকম্পের ফলে অতীতে ব্র??হ্মপুত্র নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে তা যমুনা নদীতে রূপ নিয়েছে। ক. নদী উপত্যকা কী? খ. ক্ষয়জাত সমভূমি ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের ঘটনা ঢাকা মহানগরীতে ঘটলে পরিবেশের কী পরিবর্তন ঘটবে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. উক্ত নদীর গতিপথ পরিবর্তনে নদী তীরবর্তী এলাকার জনজীবনে কী প্রভাব পড়ে চিহ্নিত কর। উত্তর: ক. যে খাতের মধ্য দিয়ে নদী প্রবাহিত হয় সে খাতকে উক্ত নদীর উপত্যকা বলে। খ. বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি যেমন- নদীপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ এবং হিমবাহের ক্ষয়ক্রিয়ার ফলে কোনো উচ্চভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ক্ষয়জাত সমভূমির সৃষ্টি হয়। অ্যাপালেশিয়ান পাদদেশীয় সমভূমি, ইউরোপের ফিনল্যান্ড ও সাইবেরিয়া সমভূমি এ ধরনের ক্ষয়জাত সমভূমি। বাংলাদেশের মধুপুরের চত্বর ও বরেন্দ্রভূমি দুটি ক্ষয়জাত সমভূমির উদাহরণ। গ. উদ্দীপকে ভূমিকম্পের কথা বলা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে ভূমিকম্প হলে পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে ঢাকার ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে ফাটলের সৃষ্টি হতে পারে। কোনো কোনো স্থানে শিলাচু্যতির ফলে বড় বড় দালান মাটির নিচে দেবে যেতে পারে। ঢাকার নিকটবর্তী ও গুরুত্বপূর্ণ নদী বুড়িগঙ্গার গতিপথ পরিবর্তিত বা গতিপথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সমভূমি অঞ্চল দেবে গিয়ে সেখানে পানি জমা হয়ে হ্রদের সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া ঢাকা শহরের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, রেলপথ, সেতু প্রভৃতি ধ্বংস হবে এবং ব্যাপক প্রাণহানি ঘটবে। রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বেঁচে থাকা মানুষদের সহযোগিতা করা কষ্টসাধ্য হবে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কল কারখানার প্রায় সবই ঢাকায় অবস্থিত। এগুলো ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি বাতাসের মাধ্যমে পরিবেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। ঘ. উক্ত নদীটি হলো ব্র?হ্মপুত্র। ১৭৮৭ সালে ভূমিকম্পে আসামের পুরাতন ব্র?হ্মপুত্রের তলদেশ কিছুটা উঁচু হয়ে যায়। ফলে নদীটি বাংলাদেশের অংশে গতিপথ পাল্টে যমুনা নদী দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। ফলে ব্র?হ্মপুত্র নদী তীরবর্তী এলাকায় জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। ব্র?হ্মপুত্র নদীর গতিপথ পরিবর্তনে নদী তীরবর্তী অগণিত মানুষ, জীবজন্তু মৃতু্যমুখে পতিত হয়। ঘরবাড়ি, ধনসম্পদ ও যাতায়াত ব্যবস্থা বিনষ্ট হয়। যেসব মানুষের জীবিকা নদীকেন্দ্রিক ছিল তা বন্ধ হয়ে যায়। মৎস্য সম্পদে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। আশপাশের পরিবেশে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক গঠন অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংক্ষেপে জেনে রাখি ভূত্বক : ভূপৃষ্ঠে যে শিলার কঠিন বহিরাবরণ দেখা যায় তাই ভূত্বক। ভূত্বক অশ্বমন্ডলের উপরিভাগ। ভূত্বকের পুরুত্ব গড়ে ২০ কিলোমিটার। ভূত্বক বিভিন্ন প্রকার শিলা ও খনিজ উপাদানে গঠিত। অশ্মমন্ডল : সাধারণভাবে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ থেকে ভূঅভ্যন্তরের দিকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত লঘু ধাতুর সংমিশ্রণে গঠিত মন্ডলটিকে অশ্মমন্ডল বলে। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়