নবম অধ্যায়
প্রশ্ন: চাঁদের আকার দেখে কি বুঝতে পারছ, এখন শুক্লপক্ষ নাকি কৃষ্ণপক্ষ? তোমার ধারণা নিচে লিখে রাখো, পরে মিলিয়ে দেখ।
উত্তর: আমাবস্যা থেকে পরের ১৫ দিন পর পূর্ণিমা। এই ১৫ দিন শুক্লপক্ষ। আবার পূর্ণিমা থেকে পরের ১৫ দিন পর অমাবস্যা। এই ১৫ দিন কৃষ্ণপক্ষ।
প্রশ্ন: চন্দ্রগ্রহণ কখন হয়?
উত্তর: পৃথিবী, চাঁদ আর সূর্যের মধ্যে একমাত্র সূর্যের নিজস্ব আলো আছে এবং সেই আলো চাঁদের পিঠে পড়ে প্রতিফলিত হয় বলেই আমরা পূর্ণিমার আলো দেখতে পাই। কাজেই যখনই পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে সূর্য আর চাঁদের মধ্যখানে চলে আসে, চাঁদের গায়ে পৃথিবীর ছায়া পড়ে, পৃথিবী থেকে আমরা দেখতে পাই চাঁদকে যেন একটা ঘন অন্ধকার গিলে নিচ্ছে, এই ঘটনাকে আমরা বলি চন্দ্রগ্রহণ। একইভাবে চাঁদ ঘুরতে ঘুরতে যদি কখনো পৃথিবী আর সূর্যের মধ্যখানে এসে পড়ে তখন তা সূর্যের আলোকে ঢেকে যায়। পৃথিবী থেকে সূর্যের ওপর আমরা এই ছায়ায় দেখি, আর এই ঘটনাকে বলি সূর্যগ্রহণ। চন্দ্রগ্রহণ হয় যখন চাঁদ আর সূর্যের মাঝখানে থাকে পৃথিবীর অবস্থা। পৃথিবী তার আলোর উৎস বন্ধ করে দেয়। এ পূর্ণিমা হয় পৃথিবীর যে পাশে সূর্য ঠিক তার উল্টো পাশে যখন চাঁদের অবস্থান থাকে। পূর্ণিমা চন্দ্রগ্রহণের সাথে সম্পর্কযুক্ত। চাঁদ প্রতি পূর্ণিমাতে পৃথিবীর পেছনে চলে আসে। আর তখন যদি চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করে তখন চন্দ্রগ্রহণ হয়।
প্রশ্ন: জোয়ার-ভাটা কেন হয়?
উত্তর: জোয়ার ভাটার মূল কারণ পৃথিবীর প্রতি চাঁদের আকর্ষণ। সূর্য পৃথিবী থেকে অনেক দূরে থাকার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সূর্যের আকর্ষণের পার্থক্য কম। কিন্তু চাঁদ তুলনামূলকভাবে পৃথিবীর অনেক কাছে, তাই পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে চাঁদের আকর্ষণের পার্থক্য অনেক বেশি। সে জন্য চাঁদ পৃথিবীর যে অংশের ঠিক উপরে থাকে, সেই জায়গার পানিকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে স্ফীত করে তোলে এবং আমরা সেটাকে বলি জোয়ার। আবার একই সময়ে চাঁদের অবস্থানের একেবারে বিপরীত দিকে পানির ওপর বল সবচেয়ে কম, সেখানে বিপরীত দিকে বল কাজ করছে কল্পনা করা যায়, তাই সেখানেও উল্টো দিকে পানি স্ফীত হয়ে জোয়ার হয়। একই সময়ে দুই পাশে পানির স্তর স্ফীত করার জন্য যে অংশের পানির স্তর নেমে যায় তাকে ভাটা বলে। জোয়ারের মতো সেই স্থানের একেবারে উল্টোদিকেও একইসঙ্গে ভাটা হয়।
প্রশ্ন: চন্দ্রগ্রহণ ঘটলেই কি পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে তা দেখা যাবে?
উত্তর: চন্দ্রগ্রহণ ঘটলেই পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে দেখা যাবে না। কারণ চন্দ্রগ্রহণ কেবল পূর্ণিমায় হয় কিন্তু সব পূর্ণিমায় হয় না। আবার, পৃথিবীর সব জায়গায় একই সময় পূর্ণিমা হয় না।
দশম অধ্যায়
দেহঘড়ির কলকব্জা
প্রথম ও দ্বিতীয় সেশন
প্রথমেই বাইরে থেকে সাদা চোখে তোমার নিজ শরীরের কোন কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখতে পাও সেগুলো একটু মনে করে দেখ। খেয়াল করলে দেখবে, এসব অংশই আমাদের কোনো না কোনো কাজে লাগে, যেমন- চোখ দিয়ে আমরা দেখি, কান দিয়ে আমরা শুনি। এরকমভাবে বাহ্যিক অন্যান্য অংশ আমাদের কী কাজে লাগে সেটা একটু ভালো করে চিন্তা করো। চিন্তা করে যা পেলে তা লিখে রাখো-
উত্তর :
মাথা : এটি আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের কেন্দ্রীয় অঙ্গ। আমাদের চিন্তাভাবনা থেকে শুরু করে হাঁটা চলা দৃশ্যমান অদৃশ্যমান সব কার্যকলাপ মাথা দ্বারা পরিচালিত হয়।
চোখ : চোখ দিয়ে আমরা চারপাশের বিভিন্ন বস্তু দেখি, সিনেমা দেখি, বই পড়া, কার্টুন দেখি,কষ্ট পেলে কান্না করি ইত্যাদি।
কান: কান নিয়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের শব্দ শুনি, গান শুনি, কথা শুনি, পড়া শুনি ইত্যাদি।
নাক : এর সাহায্যে আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস কার্যক্রম চালাই। এছাড়াও নাক দিয়ে আমরা বিভিন্ন পদার্থের ঘ্রাণ নিয়ে থাকি। যেমন- ফুলের সুগন্ধ খাবারের গন্ধ, পারফিউমের গন্ধ ইত্যাদি।
হাত: হাত দ্বারা আমরা বিভিন্ন ধরনের কাজ করি। যেমন- লেখা, খাবার খাওয়া, কাপড় কাচা ইত্যাদি।
পা :পা দ্বারা হাটা, দাঁড়ানো, দৌড়ানো, ফুটবল খেলা, স্কুলে যাওয়া ইত্যাদি কাজ করে থাকি।
মুখ : মুখ দিয়ে খাবার গ্রহণ করি, মুখ গহ্বরের ভেতরের জিহবা দ্বারা আমরা বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্বাদ বুঝতে পারি, কথা বলি ইত্যাদি।
নখ :এটা শুধু সৌন্দর্য নয়। এটা আমাদের প্রতিরক্ষার বড় অংশ। এটা যদি না থাকতো হাত দ্বারা কাজ করা কঠিন হয়ে যেত এবং রক্তক্ষরণ হতো।
ত্বক : এটি আমাদের শরীরে প্রতিরক্ষা দেওয়াল তৈরি করে। ক্ষতিকর অণুজীব এবং রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা আক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
শরীরের ভেতরের কথা আসা যাক। যেমন ধরো- আমাদের হাত বা পা তো বাইরে থেকেই দেখা যায়, কিন্তু আমাদের মাথার ভেতরে থাকা যে মহাপূর্ণ মস্তিষ্ক, সেটা কি আমরা বাইরে থেকে দেখতে পাই। এরকম আমাদের শরীরের আরও অনেক অঙ্গই তো আছে যেগুলো বাইরে থেকে আমরা দেখি না, সেগুলো ঠিক কাজ না করলে আমরা অচল হয়ে পড়ব। আগের মতোই এবার শরীরের ভেতরের যেসব অঙ্গের কথা মনে পড়ে, সেগুলো লিখে রাখো-
উত্তর :
হৃদপিন্ড :এটি আমাদের সারাদেহে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পরিবহন করে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডসমৃদ্ধ তন্ত্রকে ফুসফুসের মাধ্যমে বাইরে বের করে দেয়।
ফুসফুস :ফুসফুসের মাধ্যমে আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস পরিচালনা করি।
হাড় বা কঙ্কাল : এটি আমাদেরকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে, হাটতে ও চলাফেরা করতে সাহায্য করে। এছাড়া আমাদের শরীরের সকল অভ্যন্তরীণ অঙ্গকে সুরক্ষিত রাখে।
মস্তিষ্ক : মস্তিষ্কের কাজ হলো স্নায়ুতন্তু ও মেরুরজ্জুর মধ্যে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে আমাদের অনুভূতি আর সাড়া দেওয়ার তাড়না সৃষ্টি করা।
পাকস্থলী : এটি আমাদের গ্রহণ করা খাদ্যকে ব্যবহারযোগ্য পুষ্টি উপাদানে ভেঙে দেয়, যা পরে আমাদের শরীরে শোষিত হয়।
বৃক্ক বা কিডনি : বৃক্ক মূত্র উৎপাদন এবং রক্ত থেকে ক্ষতিকর নাইট্রোজেন যৌগ ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ মুত্রের মাধ্যমে বাইরে অপসারণ করাই বৃক্কের প্রধান কাজ।
\হপরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়