দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

প্রকাশ | ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
প্রশ্ন: সুবর্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে ক্লাস নিচ্ছিলেন শিক্ষক মো. আব্দুল করিম। তিনি বললেন, 'বিচিত্র এই পৃথিবীর ভূমিরূপও বিচিত্র। কোথাও সমভূমি, কোথাও মালভূমি আবার কোথাও পর্বত। বাংলাদেশ হলো পলির দেশ।' ক. খাঁড়ি কাকে বলে? খ. পাদদেশীয় মালভূমি বলতে কী বোঝায়? গ. শিক্ষকের উলিস্নখিত বিচিত্র ভূমিরূপ সৃষ্টির পেছনে কী কারণ নিহিত আছে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. বাংলাদেশ সম্পর্কে শিক্ষকের উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর। উত্তর: ক. নদীর অধিক বিস্তৃত মোহনাকে খাঁড়ি বলে। খ. উচ্চ পর্বত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে এর পাদদেশে তলানি জমে যে মালভূমি সৃষ্টি হয় তাকে পাদদেশীয় মালভূমি বলে। পর্বতের গা হতে বৃষ্টি, হিমবাহ কিংবা নদী দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত তলানি পর্বতের পাদদেশে এই মালভূমি সৃষ্টি করে। উত্তর আমেরিকার কলোরাডো এবং দক্ষিণ আমেরিকার পাতাগোনিয়া পাদদেশীয় মালভূমি। গ. পৃথিবীর ভূমিরূপ বিচিত্র। এ বৈচিত্র্যময়তা মূলত তিনটি প্রধান ভূমিরূপের সৃষ্টি। তা হলো- পর্বত, মালভূমি এবং সমভূমি। শিক্ষক উদ্দীপকে এরূপই উলেস্নখ করেছেন। বিভিন্ন ভূমিরূপ গঠনকারী শক্তির প্রভাবে ভূগর্ভে সর্বদা নানারূপ পরিবর্তন হচ্ছে। আগ্নেয়গিরির অগ্নু্যৎপাত, ভূকম্পন, পৃথিবীর অভ্যন্তরের সংকোচন, ভূগর্ভের তাপ ও অন্যান্য প্রচন্ড শক্তির ফলে ভূপৃষ্ঠে হঠাৎ এরূপ ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটে। এসব হঠাৎ সৃষ্ট ভূমিরূপ আবার বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক শক্তি যেমন সূর্যতাপ, বায়ু, বৃষ্টি, নদী প্রভৃতি দ্বারা খুব ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে নতুন ভূমিরূপে পরিণত হয়। এতে সূর্যতাপ, বায়ু, বৃষ্টি, নদী প্রভৃতি শক্তি খুব ধীরে ধীরে ভূত্বকের ক্ষয়সাধন করে থাকে। ফলে ভূত্বকের উপরিস্থিত শিলা ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়। এই শিলা অপসারিত হয়, আবার নতুন করে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়। এভাবে পর্যায়ক্রমে প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে ভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে। সুতরাং শিক্ষকের উলিস্নখিত পৃথিবীর বিচিত্র ভূমিরূপ সৃষ্টির পেছনে আকস্মিক পরিবর্তন ও ধীর পরিবর্তন ভূমিকা রাখে। ঘ. 'বাংলাদেশ পলির দেশ' শিক্ষকের এ উক্তির যথার্থতা বিশ্লেষণে বাংলাদেশের পলল দ্বারা গঠিত ভূমির বিবরণ প্রদান করা হলো। পাদদেশীয় পলল সমভূমি : অনেক সময় পাহাড়িয়া নদী পাদদেশে পলি সঞ্চয় করতে করতে একটা সময় পাহাড়ের পাদদেশে নতুন বিশাল সমভূমি গড়ে তোলে। এ ধরনের সমভূমিকে পাদদেশীয় পলল সমভূমি বলে। বাংলাদেশের তিস্তা, আত্রাই, করতোয়া সংলগ্ন রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অধিকাংশ স্থানই পলল সমভূমি নামে পরিচিত। এসব নদী উত্তরের হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়ে সহজেই পাহাড় থেকে পলল বহন করে এ অঞ্চলে সঞ্চয় করে পললভূমি গঠন করেছে। চিত্র : পাদদেশীয় পলল সমভূমি পস্নাবণ সমভূমি : বর্ষাকালে বিশেষ করে পানি বৃদ্ধির কারণে নদীর উভয়কূল পস্নাবিত হলে তখন তাকে পস্নাবণ বা বন্যা বলা হয়। বন্যা শেষে নদীর দু'পাশের ভূমিতে খুব পুরু স্তর কাদা, পলি দেখতে পাওয়া যায়। এভাবে অনেকদিন পলি জমতে জমতে যে বিস্তৃত সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে পস্নাবণ সমভূমি বলে। সমভূমি বলা হলেও এর কোথাও কোথাও সামান্য উঁচু নিচু দেখা যায়। চিত্র : পস্নাবণ সমভূমি কয়েকটি জেলা ব্যতীত মোটামুটি সমগ্র বাংলাদেশই পদ্মা, মেঘনা, যমুনা প্রভৃতি নদী বিধৌত পস্নাবণ সমভূমি। প্রশ্ন: নিমু চাকমা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় বাস করে। উচ্চ শিক্ষার জন্য সে যুক্তরাষ্ট্রে আসে। সেখানকার পার্বত্য অঞ্চলে বেড়াতে গিয়ে সে এমন একটি পর্বত দেখে যেটি মোচাকৃতি। যেটির গঠন তার এলাকার পর্বত থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ক. মালভূমি কাকে বলে? খ. পলল পাখা কীভাবে সৃষ্টি হয়? গ. নিমু চাকমার দেখা দুই স্থানের পর্বতগুলোর গঠনগত যে পার্থক্য রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর। ঘ. নিমু চাকমার এলাকার পর্বতটি যে জাতীয় শিলা দ্বারা গঠিত তার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ কর। উত্তর: ক. পর্বত থেকে নিচু কিন্তু সমভূমি থেকে উঁচু বিস্তীর্ণ সমতল ভূমিকে মালভূমি বলে। খ. পলল পাখা এক ধরনের সঞ্চয়জাত সমভূমি। পার্বত্য প্রবাহে খাঁড়া ঢালবিশিষ্ট অঞ্চল হতে নদী যখন হঠাৎ সমভূমিতে পতিত হয়, তখন পাহাড়ের পাদদেশে পলিমাটি সঞ্চিত হয়ে কোণ বা হাত পাখার ন্যায় নতুন ভূখন্ডের সৃষ্টি হয়। এরূপ পললভূমিকে পলল পাখা বলা হয়। গ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত বর্ণনা অনুযায়ী নিমু চাকমার দেখা পর্বত হলো যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সেন্ট হেলেনস, যা আগ্নেয় পর্বত শ্রেণির এবং তার এলাকায় অবস্থিত পর্বত হলো বান্দরবানের তাজিওডং যা ভঙ্গিল পর্বত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এ দুটি স্থানের পর্বতগুলোর মধ্যকার গঠনগত পার্থক্য ব্যাখ্যা করা হলো : ১. সাধারণত ভাঁজ খেয়ে যে পর্বত গঠিত হয় তাকে ভঙ্গিল পর্বত বলে। অন্যদিকে আগ্নেয় পদার্থ সঞ্চিত হয়ে যে পর্বত গঠিত হয় তাকে আগ্নেয় পর্বত বলে। ২. ভঙ্গিল পর্বতের শিলাগুলো স্তরে স্তরে সজ্জিত থাকে কিন্তু আগ্নেয় পর্বতে অবস্থিত শিলাসমূহে এরূপ কোনো স্তর লক্ষ করা যায়। ৩. ভঙ্গিল পর্বতের মধ্যে সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবাশ্ম দেখা যায় অন্যদিকে আগ্নেয় পর্বত ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত লাভা, ছাই, ধাতু প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে গঠিত হয়। ৪. দীর্ঘ চু্যতিরেখা ভঙ্গিল পর্বতে লক্ষ করা যায় তবে আগ্নেয় পর্বতে এরূপ চু্যতিরেখা চোখে পড়ে না। ৫. ভঙ্গিল পর্বতের প্রধান বৈশিষ্ট্য ভাঁজ অন্যদিকে আগ্নেয় পর্বতসমূহ সাধারণত মোচাকৃতির হয়ে থাকে। ঘ. নিমু চাকমার বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায়। সেখানে অবস্থিত পর্বতটি তাজিওডং যা ভঙ্গিল পর্বতের অন্তর্ভুক্ত এবং তা হিমালয় সৃষ্টির সময় উত্থিত। সুতরাং নিমু চাকমার এলাকার পর্বতটি পাললিক শিলাদ্বারা গঠিত। পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রথমেই উলেস্নখ্য যে, এ শিলা স্তরীভূত তথা স্তরে স্তরে পলি জমে পাললিক শিলা গঠিত হয়। পাললিক শিলা বিচূর্ণীত কাঁকর, কাদা, বালি, ধুলায় গঠিত বলে তা নরম ও হালকা হয় এবং সহজেই বিভিন্ন ভূপ্রক্রিয়ার দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। আবার অনেক পাললিক শিলার মধ্যে নানাপ্রকার উদ্ভিদ ও জীবজন্তুর দেহাবশেষ বা জীবাশ্ম দেখা যায়। এছাড়া এ শিলায় ছিদ্র দেখা যায়। প্রশ্ন: পৃথিবীর সৃষ্টি সূর্য থেকে। সূর্যের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ কালক্রম তাপ বিকিরণ করে বর্তমান পৃথিবীর আকার ধারণ করেছে। পৃথিবীর ভূঅভ্যন্তর ভাগের তাপমাত্রা এখন পর্যন্ত সূর্যের তাপমাত্রার কাছাকাছি রয়েছে। কিন্তু এর বহিরাবরণ কালক্রমে শীতল ও কঠিন আকার ধারণ করেছে। ফলে ভূপৃষ্ঠ থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত গঠনগত ও উপাদানগুলোর মধ্যে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। ক. সিয়াল কাকে বলে? খ. ম্যাগমা ও লাভা বলতে কী বুঝ? গ. উদ্দীপকে নির্দেশিত পৃথিবীর গঠন কাঠামোর আড়াআড়ি চিত্র অঙ্কন কর। ঘ. উদ্দীপকের পৃথিবী সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় উপাদানগুলোর ভিন্নতার কারণ বিশ্লেষণ কর। উত্তর: ক. মহাদেশীয় ভূত্বকের হালকা স্তরকে সিয়াল বলে যা লিসিকন (ঝর) ও অ্যালুমিনিয়াম (অষ) দ্বারা গঠিত। খ. ভূঅভ্যন্তরের উত্তপ্ত গলিত পদার্থকে ম্যাগমা বলে। এ ম্যাগমা থেকে শিলার যাত্রা শুরু হয়ে তা আগ্নেয় শিলা, পলল, পাললিক শিলার মাধ্যমে রূপান্তরিত শিলায় পৌঁছে এবং আবার ম্যাগমায় পরিণত হয়। আগ্নেয়গিরির উদ্গীরণের ফলে অপেক্ষাকৃত ভারী গলিত পদার্থগুলো যখন জ্বালামুখ দিয়ে ধীরে ধীরে ভূপৃষ্ঠের ওপর নির্গত হয় এবং দ্রম্নত শীতল হয়ে কঠিন আকার ধারণ করে, তাকে লাভা বলে। গ. উদ্দীপকের ঘটনায় পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন কাঠামোর কথা বলা হয়েছে। এর আড়াআড়ি চিত্র অঙ্কন করে দেখাতে হবে। ঘ. উদ্দীপকের পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে বর্তমান কাঠামোর কথা বলা হয়েছে। সৃষ্টির সময় পৃথিবী ছিল একটি উত্তপ্ত গ্যাসপিন্ড। উত্তপ্ত অবস্থা থেকে এটি শীতল ও ঘনীভূত হয়। এই সময় পৃথিবীর বাইরের ভারী উপাদানগুলো এর কেন্দ্রের দিকে জমা হয়। আর হালকা উপাদানগুলো ভরের তারতম্য অনুসারে নিচ থেকে উপরে স্তরে স্তরে জমা হয়। ফলে পৃথিবীর উপরিভাগ থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত উপাদানগুলো ভিন্ন এবং মোটামুটি তিনটি স্তরে সজ্জিত। যথা : ভূত্বক, গুরুমন্ডল ও কেন্দ্রমন্ডল। ভূঅভ্যন্তরে সংঘটিত ভূকম্পন, তরঙ্গের গতি প্রকৃতি, মাধ্যাকর্ষণ ইত্যাদি দ্বারা জানা যায় পৃথিবীর উপরিভাগ থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের উপাদানগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়। সৃষ্টির পর থেকে ভারী থেকে হালকা উপাদানগুলো স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়েছে বলেই উপাদানগুলোতে ভিন্নতা রয়েছে। পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়