দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
চতুর্থ অধ্যায় নদী : উঁচু পর্বত, মালভূমি বা উঁচু কোনো স্থান থেকে বৃষ্টি, প্রস্রবণ, হিমবাহ বা বরফ গলা পানির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্রোতধারার মিলিত প্রবাহ যখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে নির্দিষ্ট খাতে প্রবাহিত হয়ে সমভূমি বা নিম্নভূমির ওপর দিয়ে কোনো বিশাল জলাশায় বা হ্রদ অথবা সমুদ্রের সঙ্গে মিলিত হয়, তাকে নদী বলে। দোয়াব : প্রবহমান দুটি নদীর মধ্যবর্তী ভূমিকে দোয়াব বলে। নদীসঙ্গম : দুই বা ততোধিক নদীর মিলনস্থলকে নদীসঙ্গম বলে। উপনদী : পর্বত বা হ্রদ থেকে যেসব ছোট নদী উৎপন্ন হয়ে কোনো বড় নদীতে পতিত হয় তাকে সেই বড় নদীর উপনদী বলে। বাংলাদেশের তিস্তা ও করতোয়া হলো যমুনা নদীর উপনদী। শাখানদী : মূল নদী থেকে যেসব নদী বের হয় তাকে শাখানদী বলে। বাংলাদেশের কুমার ও গড়াই হলো পদ্মা নদীর শাখানদী। নদী উপত্যকা : যে খাতের মধ্য দিয়ে নদী প্রবাহিত হয় সে খাতকে উক্ত নদীর উপত্যকা বলে। নদীগর্ভ :নদী উপত্যকার তলদেশকে নদীগর্ভ বলে। নদী অববাহিকা : উৎপত্তি স্থান থেকে শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে যে বিস্তীর্ণ অঞ্চল দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে সমুদ্র বা হ্রদে পতিত হয় সেই সমগ্র অঞ্চলই নদীর অববাহিকা। পর্বত : ভূপৃষ্ঠের অতিউচ্চ, সুবিস্তৃত এবং খাঁড়া ঢালবিশিষ্ট শিলাস্তূপকে পর্বত বলে। উৎপত্তিগত বৈশিষ্ট্য ও গঠনপ্রকৃতির ভিত্তিতে পর্বত প্রধানত চার প্রকার। যথা : ১. ভঙ্গিল পর্বত; ২. আগ্নেয় পর্বত; ৩. চু্যতি-স্তূপ পর্বত ও ৪. ল্যাকোলিথ পর্বত। মালভূমি : পর্বত থেকে নিচু কিন্তু সমভূমি থেকে উঁচু খাঁড়া ঢালযুক্ত ঢেউ খেলানো বিস্তীর্ণ সমতল ভূমিকে মালভূমি বলে। অবস্থানের ভিত্তিতে মালভূমি তিন ধরনের। যথা : ১. পর্বত মধ্যবর্তী মালভূমি; ২. পাদদেশীয় মালভূমি এবং ৩. মহাদেশীয় মালভূমি। সমভূমি : সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অল্প উঁচু মৃদু ঢালবিশিষ্ট সুবিস্তৃত ভূমিকে সমভূমি বলে। উৎপত্তির ধরনের ভিত্তিতে সমভূমিকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা : ক্ষয়জাত সমভূমি ও সঞ্চয়জাত সমভূমি। -সৃষ্টির সময় পৃথিবী ছিল- উত্তপ্ত গ্যাসপিন্ড। -পৃথিবীর ভারী উপাদানগুলো- কেন্দ্রের দিকে জমা হয়। -পৃথিবীর হালকা উপাদানগুলো ভরের তারতম্য অনুসারে-নিচের থেকে উপরের স্তরে জমা হয়। -অশ্মমন্ডলের উপরের অংশ হলো- ভূত্বক। - ভূগর্ভের তিনটি স্তর হলো-অশ্মমন্ডল, গুরুমন্ডল ও কেন্দ্রমন্ডল। -ভূত্বকের পুরুত্ব- প্রায় ২০ কিলোমিটার। -গুরুমন্ডল মূলত- ব্যাস শিলায় গঠিত। -সমুদ্র তলদেশে ভূত্বকের গভীরতা প্রায়- ৫ কিলোমিটার। -মহাদেশীয় ভূত্বকের স্তরকে সিয়াল বলে, যা গঠিত- সিলিকন ও অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে। -কেন্দ্রমন্ডলের প্রধান উপাদান হলো- নিকেল ও লোহা। ভূত্বক গঠিত- শিলা দ্বারা। -গঠনপ্রণালি অনুসারে শিলা তিন প্রকার যথা- আগ্নেয়শিলা, পাললিকশিলা, রূপান্তরিত শিলা। -আগ্নেয়শিলার অপর নাম- অস্তরীভূত শিলা, যাতে কোনো স্তর নেই। -আগ্নেয়শিলা দুই ভাগে বিভক্ত। যথা- বহিঃজ আগ্নেয় শিলা ও অন্তঃজ আগ্নেয়শিলা। -পাললিক শিলা ভূপৃষ্ঠের মোট আয়তনের শতকরা ু ৫ ভাগ। -পাললিক শিলা গঠিত হয়- জৈবিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায়। -পাললিক শিলা দেখা যায়- উদ্ভিদ ও জীবজন্তুর জীবাশ্মে। -রূপান্তরিতি শিলা হলো- প্রচন্ড চাপ, উত্তাপ ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে আগ্নেয় ও পাললিক শিলার রূপান্তরিত রূপ। -চুনাপাথর, বেলেপাথর রূপান্তরিত হয়ে যথাক্রমে- মার্বেল কোয়ার্টজাইটে পরিণত হয়। -রূপান্তরিত শিলায়- জীবাশ্ম দেখা যায় না। -ভূপ্রক্রিয়া হলো- প্রাকৃতিকভাবে ভূমিরূপের সাধিত পরিবর্তন। -ভূপৃষ্ঠের ধীর পরিবর্তন ২টি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়, যথা- নগ্নীভবন ও অবক্ষেপণ। -ভূপৃষ্ঠের বেশিরভাগ পরিবর্তন হয়ে থাকে- ভূআলোড়নের মাধ্যমে। -ভূমিকম্প হলো- ভূত্বকের তাপে বিকিরণের ফলে ভূত্বক সংকুচিত হয়ে ফাটল ও ভাঁজ সৃষ্টির ফলাফল। -সাধারণত কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়- ভূকম্পন। -পামীর মালভূমিতে বিশাল ভূপাত হওয়ার ফলে তুরস্কে ভূমিকম্প হয়েছিল-১৯১১ সালে। -সাধারণত কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়-ভূকম্পন। -১৭৮৭ সালে আসামে ভূমিকম্পের ফলে- ব্রহ্মপুত্র নদ তার গতিপথ পরিবর্তন করে যমুনা নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়। -সুনামি একটি জাপানি শব্দ যার অর্থ হলো- পোতাশ্রয়ের ঢেউ। -২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে সুনামি ফলে-১৪টি দেশে মারাত্মক দুর্যোগ তৈরি হয়। প্রশ্ন: বিধান ও হিমেল কর্মসংস্থানের উদ্দেশে ইতালি গেলেন। একদিন বিকেলে তারা ঘুরতে গিয়ে দেখতে পান একটি স্থানের ভূমি খাঁড়া ঢালবিশিষ্ট এবং দেখতে অনেকটা মোচাকৃতির। কথা প্রসঙ্গে তারা জানতে পারেন বিধানের বাড়ি বাংলাদেশের বান্দরবানে এবং হিমেলের বাড়ি খুলনায়। ক. নদী উপত্যকা কাকে বলে? খ. ঊর্ধ্বগতিতে নদী উপত্যকা 'ভি' আকৃতির হয় কেন? ব্যাখ্যা কর। গ. বিধান ও হিমেলের দেখা ভূমিরূপটির ভূপ্রাকৃতিক গঠন বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর। ঘ. তাদের উভয়ের বাড়ি যে অঞ্চলে অবস্থিত সেই অঞ্চল দুটির ভূমির গঠন বৈশিষ্ট্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ কর। উত্তর: ক. যে খাতের মধ্য দিয়ে নদী প্রবাহিত হয় সে খাতকে উক্ত নদীর উপত্যকা বলে। খ. ঊর্ধ্বগতিতে সর্বদা ক্ষয়সাধন কাজ চলে বলে নদী উপত্যকা 'ভি' আকৃতির হয়। ঊর্ধ্বগতি অবস্থায় নদীর স্রোতের বেগ প্রবল হওয়ার কারণে নদী বড় বড় শিলাখন্ডকে বহন করে নিচের দিকে অগ্রসর হয়। পর্বতগুলো কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত হলেও মাঝেমধ্যে নরম শিলাও থাকে। নদী খাতে পার্শ্ব অপেক্ষা নিম্নদিকের শিলা বেশি কোমল বলে পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় বেশি হয়। এভাবে ক্রমশ ক্ষয়ের ফলে নদী উপত্যকা অনেকটা ইংরেজি 'ঠ' আকৃতির হয়। তাই একে 'ভি' আকৃতির উপত্যকা বলে। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়