শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
  ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

গ. বিধান ও হিমেলের দেখা ভূমিরূপটি হলো আগ্নেয় বা সঞ্চয়জাত পর্বত। ভূত্বকের ফাটল বা ছিদ্রপথের মাধ্যমে ভূঅভ্যন্তরে গলিত লাভা, ধূম্র, ভস্ম ইত্যাদি প্রবলবেগে ভূপৃষ্ঠে এসে উপনীত হয় এবং ফাটল বা ছিদ্রপথের চারদিকে সঞ্চিত হয়ে পর্বতের ন্যায় অবস্থান করে। একে সঞ্চয়জাত পর্বত বলে। এ ধরনের পর্বত সাধারণত মোচাকৃতির হয়ে থাকে। উদ্দীপকের বিধান ও হিমেল ঘুরতে গিয়ে এরূপ মোচাকৃতির পর্বত দেখে। আগ্নেয়গিরির অগ্নু্যৎপাত থেকে এ পর্বতের সৃষ্টি হয় বলে একে আগ্নেয় পর্বত বলে। ইতালির ভিসুভিয়াস, কেনিয়ার কিলিমানজারো, জাপানের ফুজিয়ামা এবং ফিলিপাইনের পিনাটুবো এ জাতীয় পর্বত।

ঘ. বিধানের বাড়ি বান্দরবানে এবং হিমেলের বাড়ি খুলনায়। বান্দরবানের ভূমির গঠন বৈশিষ্ট্যের সাথে খুলনা অঞ্চলের ভূমির গঠন বৈশিষ্ট্যের যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। বিধানের বাড়ি বাংলাদেশের বান্দরবানে, যা হিমালয় পর্বত উত্থিত হওয়ার সময় সৃষ্টি হয়েছে বলে ভঙ্গিল পর্বতের অন্তর্ভুক্ত। কোমল শিলায় ভাঁজ পড়ে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়। এ পর্বতের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ভাঁজ, সমুদ্র তলদেশের বিস্তারিত অবনমিত স্থানে দীর্ঘকাল ধরে বিপুল পরিমাণ পলি জমা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে ভূআলোড়ন বা ভূমিকম্পের ফলে এবং পার্শ্ববর্তী সুদৃঢ় ভূমিখন্ডের প্রবল পার্শ্বচাপের কারণে ঊর্ধ্ব ও অধঃভাঁজের সৃষ্টির মাধ্যমে ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হয়। এভাবে বান্দরবান জেলাও গঠিত হয়েছে। হিমেলের বাড়ি খুলনায় যা বদ্বীপ সমভূমির অন্তর্গত। বদ্বীপ সমভূমি নদী সঞ্চয়ের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় বলে এটিকে সঞ্চয়জাত সমভূমিও বলা যায়। নদী মোহনার কাছাকাছি এলে স্রোতের বেগ একেবারেই কমে যায়। এতে বালি ও কাদা তলানিরূপে সঞ্চিত হয়। নদীর স্রোতের টান যদি কোনো সাগরে এসে পতিত হয় তাহলে ওই সমস্ত বালি, কাদা নদীর মুখে জমে নদীমুখ প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে এর স্তর সাগরের পানির উচ্চতার উপরে উঠে যায়। তখন নদী বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে এই চরাভূমিকে বেষ্টন করে সাগরে পতিত হয়। আর এই ত্রিকোণাকার নতুন সমতলভূমিতে বদ্বীপ সমভূমির সৃষ্টি হয়। সুতরাং, বিধান ও হিমেলের বাড়ি তথা বান্দরবান ও খুলনার ভূমির গঠন বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র।

প্রশ্ন: সামিন টেলিভিশনে শিক্ষামূলক একটি অনুষ্ঠান দেখছিল। সেখানে দেখাচ্ছিল ভূপৃষ্ঠের একটি স্থানে ফাটল দিয়ে গলিত পদার্থ, ভস্ম বের হচ্ছে। সামিনের বাবা তাকে বললেন, এটি একটি আকস্মিক পরিবর্তন প্রক্রিয়া এবং এর ফলে ভূপৃষ্ঠের বেশিরভাগ পরিবর্তন হয়।

ক. শিলা কাকে বলে?

খ. খনিজ কী? ব্যাখ্যা কর।

গ. সামিনের দেখা আকস্মিক পরিবর্তন প্রক্রিয়ার ফলাফল বিশ্লেষণ কর।

ঘ. ভূপৃষ্ঠের উপর উক্ত আকস্মিক পরিবর্তন প্রক্রিয়ার ফলাফল বিশ্লেষণ কর।

উত্তর:

ক. ভূত্বক যেসব উপাদান দ্বারা গঠিত তাদের সাধারণ নাম শিলা।

খ. দুই বা ততোধিক মৌলিক উপাদান প্রাকৃতিক উপায়ে মিলিত হয়ে যে যৌগ গঠন করে তাই খনিজ। খনিজ হলো একটি প্রাকৃতিক অজৈব পদার্থ, যার সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক গঠন এবং ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম রয়েছে। খনিজ দুই বা ততোধিক মৌলের সমম্বয়ে গঠিত হলেও কিছু কিছু খনিজ

একটিমাত্র মৌল দ্বারাও গঠিত হতে পারে। যেমন : হীরা, সোনা, তামা, রুপা, পারদ ও গন্ধক। খনিজ সমসত্ত্ব অজৈব পদার্থ, কঠিন ও স্ফটিকাকার হয়। এর নির্দিষ্ট রাসায়নিক সংকেত আছে।

গ. সামিনের দেখা আকস্মিক পরিবর্তন প্রক্রিয়াটি হচ্ছে অগ্নু্যৎপাত। অগ্নু্যৎপাতের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের দুর্বল অংশের ফাটল বা সুড়ঙ্গ দিয়ে ভূগর্ভের উষ্ণ বায়ু, গলিত শিলা, ধাতু, ভস্ম, জলীয়বাষ্প, উত্তপ্ত পাথরখন্ড, কাদা, ছাই প্রভৃতি প্রবলবেগে ঊর্ধ্বে উৎক্ষিপ্ত হয়। সামিন টেলিভিশনে তাই দেখছিল। অগ্নু্যৎপাত নানা কারণে ঘটে থাকে। যেমন- ১. ভূত্বকের দুর্বল স্থান বা ফাটল দিয়ে ভূঅভ্যন্তরের গলিত ম্যাগমা, ভস্ম, ধাতু প্রবলবেগে বের হয়ে অগ্নু্যৎপাত ঘটায়। ২. যখন ভূপৃষ্ঠের চাপ কমে যায় তখন ভূগর্ভের শিলাসমূহ স্থিতিস্থাপক অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় পরিণত হয়। এতে শিলার আয়তন বৃদ্ধি পায়। ফলে তরল পদার্থ দুর্বল স্থান ভেদ করে প্রবল বেগে উৎক্ষিপ্ত হয়ে অগ্নু্যৎপাতের সৃষ্টি করে। ৩. কখনো কখনো ভূত্বকের ফাটল দিয়ে নদীনালা, খালবিল এবং সমুদ্রের পানি ভূগর্ভে প্রবেশ করলে প্রচন্ড উত্তাপে বাষ্পীভূত হয়। ফলে আয়তন বৃদ্ধি পেয়ে ভূত্বক ফাটিয়ে দেয়। তখন ওই ফাটলের ভিতর দিয়ে পানি, বাষ্প, তপ্ত শিলা প্রভৃতি নির্গত হয়ে অগ্নু্যৎপাত ঘটায়। ৪. ভূগর্ভে নানা রাসায়নিক ক্রিয়া ও বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রভাবে প্রচুর তাপ বৃদ্ধি পেয়ে গ্যাসের সৃষ্টি হয়। এতে ভূঅভ্যন্তরের চাপ বৃদ্ধি পায় এবং অগ্নু্যৎপাত ঘটায়। ৫. ভূআন্দোলনের সময় পার্শ্বচাপে ভূত্বকের দুর্বল অংশ ভেদ করে এ উত্তপ্ত তরল লাভা উপরে উত্থিত হয়। এভাবে ভূআন্দোলনের ফলেও অগ্নু্যৎপাত হয়।

ঘ. ভূপৃষ্ঠের উপর উক্ত আকস্মিক পরিবর্তন প্রক্রিয়া তথা অগ্নু্যৎপাতের প্রভাব ব্যাপক। আগ্নেয়গিরির অগ্নু্যৎপাতের ফলে ভূপৃষ্ঠের অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়। যেমন : ১. অনেক সময় আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত পদার্থ চারদিকে সঞ্চিত হয়ে মালভূমির সৃষ্টি করে। ২. সমুদ্র তলদেশেও অনেক আগ্নেয়গিরি আছে। এ থেকে নির্গত লাভা সঞ্চিত হয়ে দ্বীপের সৃষ্টি হয়। ৩. আগ্নেয়গিরির অগ্নু্যৎপাতের ফলে ভূপৃষ্ঠের কোনো অংশ ধসে গভীর গহ্বরের সৃষ্টি হয়। ৪. মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে পানি জমে আগ্নেয় হ্রদের সৃষ্টি হয়। ৫. আগ্নেয়গিরির নির্গত লাভা, শিলা দ্রব্য প্রভৃতি দীর্ঘকাল ধরে একটা স্থানে সঞ্চিত হয়ে পর্বতের সৃষ্টি করে। এ ধরনের পর্বতকে আগ্নেয় পর্বত বলে। ৬. অনেক সময় আগ্নেয়গিরির লাভা সঞ্চিত হতে হতে বিস্তৃত এলাকা নিম্ন সমভূমিতে পরিণত হয়।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে