গ. ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থীরা যে যন্ত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সেটি হলো জিপিএস। জিপিএস তার রিসিভার দিয়ে ভূউপগ্রহ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। এ তথ্য সংগ্রহের জন্য জিপিএস-এর মোটামুটি মেঘমুক্ত পরিষ্কার আকাশের প্রয়োজন হয়। তখন জিপিএস যন্ত্রটি সঠিকভাবে কাজ করে। কোনো কোনো সময় উঁচু খাড়া পাহাড়, উঁচু ইমারত থাকলে তখন জিপিএস দ্বারা সেই স্থানের অবস্থান নির্ণয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এবং এতে বেশি সময় লাগে। প্রযুক্তির নব নব আবিষ্কারের মধ্যে ভূগোলবিদদের জন্য জিপিএস অত্যন্ত মূল্যবান যন্ত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। যে কোনো দুর্যোগে জিপিএস'র মাধ্যমে অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ জেনে ঐ স্থানে সাহায্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। জিপিএসের সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। তা হলো এর মূল্য বেশি তাই সহজলভ্য নয়, বেশির ভাগ জনগণ এর সাথে পরিচিত নয়, অধিকাংশ লোক এটি চালাতে পারে না। এছাড়া রয়েছে সনাতনী পদ্ধতি না ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা।
ঘ. ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভূউপগ্রহ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে যে ব্যবস্থার সাহায্যে তথ্যটি সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে তা হলো জিআইএস। এটি কম্পিউটারের মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ ব্যবস্থা, যার মধ্য দিয়ে ভৌগোলিক তথ্যগুলোর সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্থানিক ও পারিস্পরিক সমস্যা চি?িহ্নতকরণ, মানচিত্রায়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা করে থাকে। এই জিআইএসের ব্যবহার শুরু হয়েছে বেশি দিন হয়নি। ১৯৬৪ সালে কানাডায় সর্বপ্রথম এই কৌশলের ব্যবহার আরম্ভ হয়। ১৯৮০ সালের দিকে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। বর্তমানে ভূমি ব্যবস্থাপনা, প্রাকৃতিক সম্পদ উন্নয়ন, পানি গবেষণা, নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা, জনসংখ্যা বিশ্লেষণ, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বিশ্লেষণ প্রভৃতি বহুবিধ কাজে জিআইএস ব্যবহার হচ্ছে। জিআইএসের মাধ্যমে একটি মানচিত্রের মধ্যে অনেক ধরনের উপাত্ত উপস্থাপন ঘটিয়ে সেই উপাত্তগুলোকে মানচিত্রের মধ্যে বিশ্লেষণ করে মানচিত্রটির উপযোগিতা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যেমন : একটি মানচিত্রের মধ্যে পানি ব্যবস্থাপনা, টপোগ্রাফি, ভূমি ব্যবহার, যোগাযোগ, মৃত্তিকা, রাস্তা এই সবগুলো জিনিস দেখিয়ে তার মধ্য দিয়ে সেসব নির্দিষ্ট অঞ্চলের পুরো চিত্র সম্বন্ধে জানা সম্ভব।
চতুর্থ অধ্যায়
পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক গঠন
অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংক্ষেপে জেনে রাখি
ভূত্বক : ভূপৃষ্ঠে যে শিলার কঠিন বহিরাবরণ দেখা যায় তাই ভূত্বক। ভূত্বক অশ্বমন্ডলের উপরিভাগ। ভূত্বকের পুরুত্ব গড়ে ২০ কিলোমিটার। ভূত্বক বিভিন্ন প্রকার শিলা ও খনিজ উপাদানে গঠিত।
অশ্মমন্ডল : সাধারণভাবে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ থেকে ভূঅভ্যন্তরের দিকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত লঘু ধাতুর সংমিশ্রণে গঠিত মন্ডলটিকে অশ্মমন্ডল বলে। গুরুমন্ডল : অশ্মমন্ডলের নিচে প্রায় ২,৮৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত মূলত ব্যাসল্ট শিলা দিয়ে গঠিত পুরুমন্ডলকে গুরুমন্ডল বলে।
কেন্দ্রমন্ডল : গুরুমন্ডলের নিচ থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত মন্ডলটিকে কেন্দ্রমন্ডল বলে। এ স্তর প্রায় ৩,৪৮৬ কিলোমিটার পুরু।
শিলা : ভূত্বক নানা জাতীয় পদার্থ দ্বারা গঠিত। এদের মধ্যে পাথর, নুড়ি, কাঁকর, বালি, কাদা প্রধান। ভূত্বক যেসব উপাদান দ্বারা গঠিত তাদের সাধারণ নাম শিলা। খনিজ : কতকগুলো মৌলিক উপাদান প্রাকৃতিক উপায়ে মিলিত হয়ে যে যৌগ গঠন করে তাই খনিজ। খনিজ হলো প্রাকৃতিক অজৈব পদার্থ, যার সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক গঠন এবং ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম রয়েছে।
আগ্নেয় শিলা : পৃথিবীর আদিম অবস্থা থেকে যে শিলা শীতল ও ঘনীভূত হয়ে কঠিন আকার ধারণ করেছে তাদের আগ্নেয় শিলা বলে। যেমন : গ্রানাইট, ব্যাসল্ট ইত্যাদি। পাললিক শিলা : পলি সঞ্চিত হয়ে যে শিলা গঠিত হয় তাকে পাললিক শিলা বলে। এ শিলায় পলি সাধারণত স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়। বেলেপাথর, কয়লা, চুনাপাথর, কাদাপাথর, কেওলিন পাললিক শিলার উদাহরণ।
রূপান্তরিত শিলা : আগ্নেয় ও পাললিক শিলা যখন প্রচন্ড চাপ, উত্তাপ এবং রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে রূপ পরিবর্তন করে নতুন রূপ ধারণ করে তাকে রূপান্তরিত শিলা বলে। ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন : ভূপৃষ্ঠ বিভিন্ন শিলা দ্বারা গঠিত, যা পরিবর্তনশীল। ভূগর্ভ যতই ঠান্ডা হচ্ছে সেখানকার পদার্থের আয়তন ততই হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে ভূগর্ভে সবসময় একটা আলোড়ন চলছে। এই আলোড়নের ফলে সবসময় ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন হচ্ছে।
ভূমিকম্প : প্রাকৃতিক কারণবশত পৃথিবীর কঠিন ভূত্বকের কোনো কোনো অংশ সময়ে সময়ে ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে। এই কম্পনকে ভূমিকম্প বলে।
আগ্নেয়গিরি : ভূপৃষ্ঠের দুর্বল ফাটল বা সুড়ঙ্গ দিয়ে ভূগর্ভস্থ ধূম, গ্যাস, লাভা, ধূলি, ভস্ম, উত্তপ্ত পাথর খন্ড, কাদা এবং বিবিধ তরল বা কঠিন ধাতব পদার্থ নির্গত হয়ে ফাটল বা ছিদ্র মুখের চারদিকে জমাট বেঁধে উঁচু মোচাকৃতি যে পর্বতের সৃষ্টি করে তাকে আগ্নেয়গিরি বলে।
সুনামি : 'সুনামি' জাপানি শব্দ, যার অর্থ 'পোতাশ্রয়ের ঢেউ'। কখনো কখনো সমুদ্রতলে ভূমিকম্প অনুভূত হলে সমুদ্রের উপরের পানিতলে প্রচন্ড ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। এই প্রচন্ড ঢেউগুলো উপকূলে পৌঁছে ব্যাপক জানমালের ক্ষতিসাধন করে। এই জাতীয় সামুদ্রিক ঢেউকে সুনামি বলে।
বিচূর্ণীভবন ও ক্ষয়ীভবন : শিলারাশির চূর্ণবিচূর্ণ ও বিশ্লিষ্ট হওয়ার প্রক্রিয়াকে বিচূর্ণীভবন বলে। সাধারণত প্রাকৃতিক কারণে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়, অপসারিত হয় না। বায়ুপ্রবাহ, নদীস্রোত ও হিমবাহ দ্বারা চূর্ণবিচূর্ণ শিলা অন্য স্থানে বাহিত হয়। এ প্রণালিকে ক্ষয়ীভবন বলে।
নগ্নীভবন : বিচূর্ণীভবনের সময় শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়। পরে ক্ষয়ীভবন দ্বারা ঐ শিলা অপসারিত হলে নিচে অবিকৃত শিলাগুলো নগ্ন হয়ে পড়ে। এরূপ কার্যকে নগ্নীভবন বলে।
অবক্ষেপণ : বায়ুপ্রবাহ, নদীস্রোত, হিমবাহ প্রভৃতি শক্তির প্রভাবে নানা স্থান থেকে ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাগুলো যে প্রক্রিয়ায় কোনো এক স্থানে এসে জমা হয়ে নতুন ভূমিরূপের সৃষ্টি করে তাকে অবক্ষেপণ বা সঞ্চয় বলে।