নদীবহুল দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের পরিবহণ ব্যবস্থায় নৌপথ ও নদীবন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশের প্রায় সব বড় শহর ও বাণিজ্যকেন্দ্রই গড়ে উঠেছে নদীবন্দরকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৫০টি নদীবন্দর রয়েছে। ১৯৬০ সালে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, বরিশাল, চাঁদপুর ও টঙ্গী- এই ছয়টি নদীবন্দর প্রতিষ্ঠা করা হয়। সর্বশেষ নদীবন্দর হিসেবে সিলেটের 'ভোলাগঞ্জ নদীবন্দর' স্থান করে নিয়েছে।
ঢাকা বন্দর
ঢাকা বন্দর বাংলাদেশের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর ঢাকার পাশে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর অবস্থিত প্রধান নৌবন্দর। বন্দরটি শহরের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত। যাত্রী যাতায়াতের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের ব্যস্ততম বন্দর। বাংলাদেশের বেশিরভাগ জেলায় বন্দরটির পরিষেবা রয়েছে। ২০১৩ সালে সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনা করতে শহর থেকে ২০ কিলোমিটার (১২ মাইল) দূরে একটি ধারক টার্মিনাল খোলা হয়েছে। বরিশাল, চাঁদপুর এবং নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি ঢাকা বন্দরে ২০১৩-১৪ সালে ৫৩ মিলিয়ন টন কার্গো এবং ২২ মিলিয়ন যাত্রী পরিচালিত হয়েছিল।
সদরঘাট
সদরঘাট বাংলাদেশের ঢাকা শহরের একটি নদীবন্দর, যাকে ঘিরে উনিশ শতকে একটি ব্যবসায়িক জনপদ গড়ে ওঠে। এই নদীবন্দরটি বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। একবিংশ শতকের শুরুতেও এটির গুরুত্ব অক্ষুণ্ন রয়েছে। এর সন্নিহিত এলাকা পুরান ঢাকা নামে প্রসিদ্ধ। এর অতি নিকটে রয়েছে পুস্তক প্রকাশনার ঘাঁটি বাংলাবাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বলধা গার্ডেন এবং আহসান মঞ্জিল। সর্বোপরি, বিভিন্ন নদী পরিবাহিত পণ্য, বিশেষ করে মাছ ও ফলের সুবিশাল সব আড়ত। সারাদেশ, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকা শহরের নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিকেন্দ্র এই সদরঘাট। অসংখ্য লঞ্চ ঘাটে ভিড় করে আছে।
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে সর্বমোট ৪৫টি রুটে নৌযান চলাচল করে। এই নদীবন্দর থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের এলাকাগুলো যেমন- পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠী, মাদারীপুর, চাঁদপুর, খুলনা, হাতিয়া, বাগেরহাট প্রভৃতি গন্তব্যে লঞ্চ ও স্টিমার ছেড়ে যায়।
নারায়ণগঞ্জ বন্দর
নারায়ণগঞ্জ বন্দর হলো নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি নদীবন্দর। এটি বাংলাদেশের অন্যতম নদীবন্দর। এই বন্দরকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিকাশ ঘটেছে। বর্তমানে এই বন্দর দ্বারা প্রধানত যাত্রী পরিবহণ করা হয়। এই বন্দর থেকে যাত্রীবাহী জাহাজ বা লঞ্চগুলো ঢাকা সদরঘাট, কাঁচপুর বন্দর ও বরিশাল-এর মধ্যে চলাচল করে।
এই বন্দরটি প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন। এই বন্দর দ্বারা অতীতে দেশের বিভিন্ন নদীবন্দরে পণ্য চলাচল করত। এই বন্দরের দ্বারা পাট পাঠানো হতো কলকাতায়। দেশ ভাগের পর এই বন্দরের দ্বারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাট আনা হতো নারায়ণগঞ্জের পাটকলগুলোতে।