ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন
প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
হাবিবুর রহমান বাপ্পা, সহকারী শিক্ষক, শহীদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
রান্নাঘরেই ল্যাবরেটরি
প্রশ্ন : একটা পেরেক ৭ দিন পানিপূর্ণ বিকারে রেখে দিয়ে দেখো তো কি হয়। ৭ দিন পর পেরেকটি পর্যবেক্ষণ করার পর পেরেকের কী পরিবর্তন হয় তা লিখ।
উত্তর : পেরেকটিকে ৭ দিন পানিপূর্ণ বিকারে রেখে দিলে এর ওপর মরিচা পড়ার দৃশ্য দেখা যায়। ৭ দিন আগে পেরেকটি ছিল পরিষ্কার ও ঝকঝকে। এর উপর কোন দাগ ছিল না। কিন্তু ৭ দিন পানিতে থাকার ফলে এর সাথে বাতাসের অক্সিজেন ও পানির সাথে বিক্রিয়া করে পানিযুক্ত ফেরিক অক্সাইড তৈরি করে। মূলত এই পানিযুক্ত ফেরিক অক্সাইড হলো মরিচা। অর্থাৎ ৭ দিন পানিতে রাখার পর পেরেকের উপর মরিচা পড়ে লালচে রং ধারণ করেছে।
প্রশ্ন : তাপ দিলে যে কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয় আর তরল পদার্থ বায়বীয় পদার্থে পরিণত হয় সে তো তোমরা ইতোমধ্যেই জানো। কিন্তু সকল কঠিন পদার্থ কি একই তাপমাত্রায় গলতে শুরু করে? আবার সকল তরল কি একই তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় চলে যায়?
লক্ষ করো মোমের গলনাঙ্ক, পানির স্ফুটনাঙ্ক ও মোমের হিমাঙ্ক
উত্তর :
যে তাপমাত্রায় মোম গলেছে (গলনাঙ্ক) ৫৭ক্ক সেলসিয়াস
যে তাপমাত্রায় পানি ফুটেছে (স্ফুটনাঙ্ক ) ১০০ সেলসিয়াস
যে তাপমাত্রায় মোম জমেছে (হিমাঙ্ক) ৫৭ক্ক সেলসিয়াস।
প্রশ্ন :আমরা রান্নার কাজে এমন কোনো পাত্র যদি ব্যবহার করতাম যার গলনাঙ্ক কম তাহলে রান্না করা সম্ভব হতো কী না? ভেবে দেখো তো, ধাতব পাত্রে রান্না করা সুবিধাজনক কেন?
উত্তর : আমরা রান্নার কাজে ধাতব পাত্র ব্যবহার করি। কারণ ধাতব পাত্রের গলনাঙ্ক অনেক বেশি হওয়ায় এতে রান্না করতে সুবিধা হয়। এ ধরনের পাত্র দ্রম্নত ও বেশি তাপ পরিবহন করায় খাবারের উপাদানগুলো দ্রম্নত সিদ্ধ হয়। যদি কম গলনাঙ্কের পাত্র নিয়ে রান্না করা হতো, তাহলে সে পাত্র চুলায় আগুনের তাপে কিছুক্ষণ পরই গলতে শুরু করত। ফলে রান্না করা সম্ভব হতো না।
রাজার করার হাঁড়ি-পাতিল সাধারণত অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর তৈরি। এছাড়াও আয়রন ধাতুর সংকর স্টেইনলেস স্টিল পার রান্নার জন্য বহু ব্যবহৃত হয়। এসব ধাতব পাত্রে রান্না করার প্রধান কারণ এতে দ্রম্নত তাপ সম্প্রসারিত হয়ে খাদ্যদ্রব্য তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয় এবং এর কোনো বাসায়নিক খারাপ বিক্রিয়া নেই বললেই চলে। আবার এখানে যে বিষয়টির তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে পাত্রের তাপ পরিবহন ক্ষমতা বা পরিবাহকত্ব। রান্না করার সময় তাপকে পারের মাধ্যমে খাদ্যবস্তু/খাবারে নিতে হবে। এক্ষেত্রে যে পাত্র বেশি তাপ সরবরাহ করতে পারবে, সেটাই দ্রম্নত রান্না করতে সক্ষম হবে। সে হিসেবে আলুমিনিয়াম, স্টেইনলেস স্টিল ইত্যাদি ধাতু বা ধাতু সংকরের পাত্র তাপ পরিবাহক হিসেবে অনেকগুণ বেশি ভালো। এজন্যই ধাতব পাত্রে রান্না করা সুবিধাজনক।
প্রশ্ন : খোলা বা ঢাকনা ছাড়া হাঁড়ির তুলনায় বন্ধ হাঁড়িতে অথবা প্রেসার কুকারে দ্রম্নত রান্না কেন হয়?
উত্তর : খোলা বা ঢাকনা ছাড়া হাঁড়ির তুলনায় বহু হাঁড়িতে বা প্রেসার কুকারে রান্না দ্রম্নত হয়। কারণ-
বন্ধ হাঁড়িতে বা প্রেসার কুকারে রান্নার পদ্ধতি হলো তাপ ও চাপের সমন্বয়ে রানা দ্রম্নত সম্পন্ন করা। সাধারণত আমরা যখন খোলা বা ঢাকনা ছাড়া হাড়িতে রান্না করি তখন তাপ থাকলেও সেখানে চাপ থাকে না বললেই চলে। এছাড়া বাষ্প হয়ে সব কিছু সিদ্ধ হতেও সময় লাগে। কিন্তু প্রেসার কুকারে খাবার যতক্ষণ সিদ্ধ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এর ভেতরের চাপ সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। এরপর যখন চাপ অতিরিক্ত হয়ে যাবে তাপের কারণে তখনই খাবার দ্রম্নত রান্না হবে। এক্ষেত্রে তাপের ফলে ভিতরের থাকা পানি বাষ্পে পরিণত হয়। আর জানা আছে, তরল থেকে বাষ্পে পরিণত হলে আয়তন বৃদ্ধি পায়, অর্থাৎ চাপ বাড়ে। এখনাই তাপ এ চাপ একসাথে প্রেসার কুকারে ব্যবহারের কারণেই তাড়াতাড়ি রাখা হয়।
প্রশ্ন : কোনো খাবার বেশিক্ষণ গরম রাখতে তুমি ধাতব পাত্র ব্যবহার করবে নাকি মাটি অথবা পস্নাস্টিক?
উত্তর: আগের দিনে খাবার রান্না এবং সংরক্ষণের জন্য মাটির পাত্র ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে আমরা কাচ, অ্যালুমিনিয়াম কিংবা লোহার বানানো ধাতব পাত্র ব্যবহার করি। কারণ-
মাটির পাত্র তাপ প্রতিরোধী উচ্চ তাপে মাটির পাত্র রাখলে তা ভেঙে যায় না। মাটির পাত্রগুলো উচ্চতাপে পুড়িয়ে বানানো হয় বলে এটি অনেকটা তাপ পরিবাহী হয়ে উঠে। এছাড়া মাটির পাত্র তাপ প্রতিরোধী বলে পরিচিত। এজন্য এগুলো খাবারকে দীর্ঘ সময়ের জন্য গরম রাখতে পারে তবে বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত হটপট খাবারকে দীর্ঘ সময় ধরে রাখে। এ হটপটগুলোর বডি পস্নাস্টিকের, তবে ভেতরের অংশ স্টেইনলেস স্টিল তথা ধাতব সংকর দিয়ে তৈরি। দীর্ঘ সময় ধরে খাবার গরম রাখতে হটপটের জুড়ি নেই। আবার তরল খাবার গরম রাখতে ব্যবহার করি থার্মোফ্লাক্স। থার্মোফ্লাক্সের দেওয়াল কাচের তৈরি এবং মুখ কর্ক দিয়ে বন্ধ থাকে। তাই পরিবহন খুব কম হয়। কারণ কাচ ও কর্ক তাপ কুপরিবাহী।
অন্যদিকে, পস্নাস্টিক পাত্রে গরম খাবার রাখা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পস্নস্টিকের পারে থাকা রাসায়নিক পদার্থ খাবারের সে মিশে, খাবার থেকে শরীরের ভেতর প্রবেশ করে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হচ্ছে পুরনো সম্ভা, শক্ত পস্নাস্টিকের পাত্রে গরম খাবার রাখলে বিষাক্ত মনোমারগুলো পস্নাস্টিক থেকে বেরিযয় খাবারে মিশে যায়।
প্রশ্ন :পদার্থ কাকে বলে?
উত্তর : যা জায়গা দখল করে, যার ভর আছে, আকার ও আকৃতি আছে এবং বল প্রয়োগে বাধার সৃষ্টি করে তাকে পদার্থ বলে। যেমন- ইট, টেবিল, পানি, নাইট্রোজেন ইত্যাদি।
প্রশ্ন : ঘনত্ব কাকে বলে?
উত্তর : একক আয়তনে বস্তুর ভরকে ঘনত্ব বলে।
প্রশ্ন : সুপরিবাহী পদার্থ কাকে বলে?
উত্তর : যেসব পদার্থের মধ্য দিয়ে সহজেই তড়িৎ পরিবহন করে তাদের সুপরিবাহী পদার্থ বলে। যেমন- কপার, লোহা ইত্যাদি
প্রশ্ন :কপার তার কোনটির জন্য বিদু্যৎ সুপরিবাহী?
উত্তর : কপার তার মুক্ত ইলেকট্রনের জন্য বিদু্যৎ সুপরিবাহী।
প্রশ্ন :অপরিবাহী পদার্থ কাকে বলে?
উত্তর : যেসব পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ ও বিদু্যৎ সহজে পরিবহন করা যায় না সেগুলোকে অপরিবাহী পদার্থ বলে। যেমন- কাঠ পস্নাস্টিক ইত্যাদি।
প্রশ :অর্ধপরিবাহী পদার্থ কাকে বলে?
উত্তর : যেসব পদার্থের তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতা অপরিবাহীর চেয়ে বেশি কিন্তু পরিবাহীর তুলনায় কম এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে পদার্থের পরিবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় তাদেরকে অর্ধপরিবাহী পদার্থ বলে। যেমন- সিলিকন, জার্মেনিয়াম ইত্যাদি।
প্রশ্ন :ধাতু কাকে বলে?
উত্তর : যেসব পদার্থ সাধারণত তাপ ও বিদু্যৎ পরিবাহী, আঘাত করলে কনকন শব্দ হয়, পিটিয়ে পাত তৈরি করা যায়, চক চক করে সেসব উপাদানকে ধাতু বলে। যেমন- কপার, লোহা, পটাশিয়াম।
প্রশ্ন :অধাতু কাকে বলে?
উত্তর : যেসব পদার্থ সাধারণত তাপ ও বিদু্যৎ পরিবাহী নয়, আঘাত করলে তেমন শব্দ হয় না, পিটিয়ে পাত তৈরি করা যায় না সেসব পদার্থকে অধাতু বলে। যেমন- অক্সিজেন, কার্বন ইত্যাদি।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়