শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
  ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

অধ্যায়-মানচিত্র পঠন ও ব্যবহার

প্রশ্ন : উপজাতিদের সমাজ ব্যবস্থা জানার জন্য রাশেদ, মনি ও কাঞ্চন পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি মানচিত্র পর্যবেক্ষণ করছিল। মনি বলল, খুলনা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব কত? রাশেদ বলল, 'মানচিত্রের নিচে অনুপাতের সাহায্যে একটি স্কেল অঙ্কন করা হয়েছে। এর সাহায্যে দূরত্ব মাপা যায়।' কাঞ্চন মানচিত্রের স্কেল থেকে দূরত্ব বের করল।

ক. স্কেল অনুসারে মানচিত্রকে কী কী ভাগে ভাগ করা হয়?

খ. ক্যাডাস্ট্রাল বা মৌজা মানচিত্র কী? ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত মানচিত্রে যে স্কেলের কথা উলেস্নখ করা হয়েছে তা আলোচনা কর।

ঘ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত মানচিত্রটির শ্রেণিবিভাগ করে প্রতিটি বিভাগের বর্ণনা দাও।

উত্তর :

ক. স্কেল অনুসারে মানচিত্রকে ১. বৃহৎ স্কেলের মানচিত্র ও ২. ক্ষুদ্র স্কেলের মানচিত্র এ দুইভাগে ভাগ করা হয়।

খ. ক্যাডাস্ট্রাল শব্দটি এসেছে ফ্রেঞ্চ শব্দ ক্যাডাস্ট্রে (ঈধফধংঃৎব) থেকে, যার অর্থ হচ্ছে রেজিস্ট্রিকৃত নিজের সম্পত্তি। এই মানচিত্র তৈরি করা হয় সাধারণত কোনো রেজিস্ট্রিকৃত ভূমি অথবা বিল্ডিয়ের মালিকানার সীমানা চিহ্নিত করার জন্য। এই মানচিত্রের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে আমাদের গ্রামের মানচিত্রগুলো। এই মানচিত্রে নিখুঁতভাবে সীমানা দেওয়া থাকে।

গ. উদ্দীপকের মানচিত্রে যে স্কেলের কথা উলেস্নখ করা হয়েছে তা হলো প্রতিভূ অনুপাত। বিভিন্ন দেশের দূরত্ব পরিমাপের জন্য স্বতন্ত্র একক ব্যবহার করা হয়। এরূপ এক দেশের এককের মাধ্যমে মানচিত্রে স্কেল প্রকাশ হলে ভাষাগত কারণে তা অন্য দেশের লোকের কাছে বোধগম্য হবে না। এ অসুবিধা দূর করার জন্য প্রতিভূ অনুপাত পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে। ইংরেজিতে একে জবঢ়ৎবংবহঃধঃরাব ঋৎধপঃরড়হ বা সংক্ষেপে জ. ঋ. এবং বাংলায় সংক্ষেপে প্র. অ. বলে। ভগ্নাংশের আকারে দেওয়া স্কেলটির লব রাশি মানচিত্রের দূরত্ব এবং হর রাশি একই এককে ভূমির দূরত্ব প্রকাশ করে। উদাহরণস্বরূপ ১ সেন্টিমিটারে ১ মিটার বর্ণনায় প্রকাশিত স্কেলটিকে প্রতিভূ অনুপাতে প্রকাশ করতে হলে মিটারটিকে সেন্টিমিটারে আনতে হবে এবং উভয় সংখ্যার মধ্যে অনুপাত চিহ্ন ( : ) দিতে হবে। ১ মিটার = ১০০ সেন্টিমিটার। সুতরাং লব রাশি ১ এবং হর রাশি ১০০। এক্ষেত্রে স্কেলটি ১ : ১০০ বা ১/১০০। অর্থাৎ এর অর্থ মানচিত্রের দূরত্ব যখন ১ সেন্টিমিটার তখন ভূমির দূরত্ব ১০০ সেন্টিমিটার।

ঘ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত মানচিত্রটি ছিল একটি সাংস্কৃতিক মানচিত্র। বিভিন্ন স্থানের অর্থনৈতিক অবস্থা, বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্রের সীমা, ঐতিহাসিক কোনো স্থান বা স্থাপত্য, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের সমাজ ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে যে মানচিত্র তৈরি হয় তাকে সাংস্কৃতিক মানচিত্র বলে। উদ্দীপকে রাশেদ, মণি ও কাঞ্চন উপজাতিদের সমাজ ব্যবস্থা জানার জন্য মানচিত্র পর্যবেক্ষণ করছিল। অর্থাৎ তারা সাংস্কৃতিক মানচিত্র পর্যবেক্ষণ করছিল। সাংস্কৃতিক মানচিত্রকে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-

১. রাজনৈতিক মানচিত্র : বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্রের সীমা দেখিয়ে এই মানচিত্র তৈরি করা হয়। এর মধ্যে কোনো দেশ বা রাষ্ট্রের রাজধানী ও গুরুত্বপূর্ণ শহরও দেখানো হয়।

২. ঐতিহাসিক মানচিত্র : ঐতিহাসিক কোনো স্থান বা স্থাপত্যকে নিয়ে যেসব মানচিত্র তৈরি করা হয় তাকে ঐতিহাসিক মানচিত্র বলে।

৩. সামাজিক মানচিত্র : পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের সমাজ ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে মানচিত্রগুলো তৈরি করা হয়। বিশেষ করে যারা সামাজিক প্রথা ও বৈষম্য, জনসংখ্যা এসব নিয়ে গবেষণা করেন তারা এ মানচিত্র ব্যবহার করেন।

প্রশ্ন : ভূগোল শিক্ষক জনাব রফিউস সামস শ্রেণিকক্ষের দেয়ালে একটি মানচিত্র স্থাপন করেন। এই মানচিত্রে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান, পর্যটন কেন্দ্র ইত্যাদি চিহ্নিত করা ছিল।

ক. ভূগোল শিক্ষার্থীদের কাছে অপরিহার্য উপাদান কোনটি?

খ. এটলাস মানচিত্র বলতে কী বোঝায়?

গ. জনাব রফিউস সামস শ্রেণিকক্ষে ব্যবহারের জন্য কী মানচিত্র ব্যবহার করেছিলেন? এর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।

ঘ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত মানচিত্রে তথ্য উপস্থাপনের নিয়মাবলি আলোচনা কর।

উত্তর :

ক. ভূগোল শিক্ষার্থীদের কাছে অপরিহার্য উপাদান হলো মানচিত্র।

খ. মানচিত্রের সমষ্টিকে এটলাস বলে। এই মানচিত্রকে সাধারণত খুব ছোট স্কেলে করা হয়। এটি প্রাকৃতিক, জলবায়ুগত এবং অর্থনৈতিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করে তৈরি করা হয়। বেশির ভাগ মানচিত্রে রং দিয়ে বৈশিষ্ট্য বোঝানো হয়। শুধু পাহাড়ের চূড়া, গুরুত্বপূর্ণ নদী এবং রেলওয়ের প্রধান রাস্তা বোঝানোর জন্য প্রতীক দেয়া থাকে। কিছু কিছু এটলাস মানচিত্র করা হয় ১ : ১০০০,০০০ স্কেলে। আমাদের দেশে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই মানচিত্র তৈরি করে থাকে।

গ. জনাব রফিউস সামস শ্রেণিকক্ষে ব্যবহারের জন্য যে মানচিত্র ব্যবহার করেন এটি ছিল একটি দেয়াল মানচিত্র। দেয়াল মানচিত্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দেয়াল মানচিত্র তৈরি করা হয় সাধারণত শ্রেণিকক্ষে ব্যবহার করার জন্য। সারাবিশ্বকে অথবা কোনো গোলার্ধকে এই মানচিত্রের মধ্যে প্রকাশ করা হয়। দেয়াল মানচিত্রে আমাদের চাহিদা মতো একটি দেশ অথবা একেকটি মহাদেশকে আলাদাভাবে প্রকাশ করা হয় বড় অথবা ছোট স্কেলে। এই দেয়াল মানচিত্রের স্কেল ভূসংস্থানিক মানচিত্রের চেয়ে ছোট কিন্তু ভূচিত্রাবলি মানচিত্রের চেয়ে বড়।

ঘ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত দেয়াল মানচিত্রে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের নিয়মাবলি অন্যান্য মানচিত্রের মতোই। যেমন-

১. একটি শিরোনাম দিতে হবে। এটি কোন দেশের বা কোন অঞ্চলের কিসের মানচিত্র এতে তা উলেস্নখ থাকে। যেমন : বাংলাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্র।

২. একটি মানচিত্র তৈরির সময় এর আয়তনকে কমিয়ে ক্ষুদ্র করে আঁকতে হয়। একে স্কেল অনুসারে আঁকা বলে। স্কেল থেকে বোঝা যায় কোন আয়তনকে কতটুকু কমানো হয়েছে। দেয়াল মানচিত্রের ক্ষেত্রে এ অবস্থায় স্থান সংকুলানের বিষয়টি বিবেচ্য। দেয়ালে প্রাপ্ত জায়গার উপর যা নির্ভর করে।

৩. মানচিত্রের দিক জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি মানচিত্রের মাথায় বাম দিকের মার্জিনে একটি তীর দেওয়া তাকে। এই তীরের মাথায় উ. লেখা থাকে। উ. দিয়ে উত্তর দিক বোঝানো হয়। একটি দিক জানা থাকলে আমরা সহজেই অন্যদকিগুলো যেমন : দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম বের করতে পারি। মানচিত্রে দিক না দেখানো থাকলে উপরে দিককে উত্তর দিক বুঝতে হবে। এসব নিয়মাবলি মেনে দেয়াল মানচিত্র আঁকতে হয়।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে