ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন
প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
হাবিবুর রহমান বাপ্পা, সহকারী শিক্ষক, শহীদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
রান্নাঘরেই ল্যাবরেটরি
কি দিয়ে তৈরি : কাচ
তৈজসপত্রের নাম : সবজি রাখার ঝুড়ি
কি দিয়ে তৈরি : পস্নাস্টিক
তৈজসপত্রের নাম : ছোট ছোট কাসার বাটি
কি দিয়ে তৈরি : তামা ও টিনের সংকর
তৈজসপত্রের নাম : শিল নোড়া
কি দিয়ে তৈরি : পাথর খন্ড
তৈজসপত্রের নাম : মাটির হাড়ি
কি দিয়ে তৈরি : মাটি
তৈজসপত্রের নাম : সিলভারের হাড়ি
কি দিয়ে তৈরি : সিলভার
একইভাবে ভেবে দেখো তো তোমাদের বাসাবাড়িতে বৈদু্যতিক যন্ত্রের সংযোগ তারগুলোতে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য কেমন? সেগুলো কী চকচক করে।
উত্তর :
আমাদের বাসাবাড়িতে বৈদু্যতিক যন্ত্রের সংযোগ তারগুলোতে কভার হিসেবে পস্নাস্টিক (রাবার) ও ভিতরে বিদু্যৎ পরিবাহী হিসেবে তামা ব্যবহার করা হয়। নিচে পস্নাস্টিক ও তামার বৈশিষ্ট্য উলেস্নখ করা হলো-
পস্নাস্টিকের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য :
১. পস্নাস্টিক বিদু্যৎ পরিবাহী নয়।
২. একে সহজে ভাংগা যায় না।
৩. তাপে পস্নাস্টিক নরম হয়ে যায়।
৪. গরম পস্নাস্টিক ঠান্ডা অবস্থায় কঠিন ও দঢ় হয়।
তামার বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য :
১. তামা বিদু্যৎ সুপরিবাহী।
২. এটি অধিক তাপে গলে যায়।
৩. এটিকে সহজে সংকুচিত করা যায়।
৪. এটি ভঙ্গুর নয়।
পস্নাস্টিক চকচক করে না কিন্তু তামা চকচক করে।
প্রশ্ন : তামার মধ্য দিয়ে কী তাপ পরিবহণ করে।
উত্তর : তামা তাপের সুপরিবাহী। তামা একটি ধাতু। তাই এর ধাতব কেলাসের বিদ্যমান সঞ্ছারনশীল ইলেকট্রনের কারণে তামার মধ্য দিয়ে তাপ পরিবহন করে।
প্রশ্ন : কাপড়ের মধ্য দিয়ে কী তাপ পরিবহন করে?
উত্তর : কাপড় তাপের কুপরিবাহী। কারণ কাপড় তাপ ভাল পরিবহন করতে পারে না।
প্রশ্ন : একটু ভেবে দেখো তো ঢাকনা অথবা চামচের হাতল হিসেবে পস্নাস্টিক ব্যবহার করা হয় কেন? যদি পস্নাস্টিকের হাতল না থাকে তাহলে কাপড় পেঁচিয়ে নেওয়া হয় কেন? কেনই বা গ্যাসের চুলার বার্নারটি লোহার বা পিতলের হয় কিন্তু সুইচটি পস্নাস্টিকের হয়। ভেবে তোমার মতামত লেখো।
উত্তর : চামচ সাধারণত স্টিলের হয়, যা অত্যন্ত তাপ সুপরিবাহী। ফলে তাপের প্রভাবে খুব দ্রম্নত গরম হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে চামচের এক প্রান্তে অন্তরক পদার্থ হিসেবে পস্নাস্টিক জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা হয়। যাতে করে তাপ পরিবাহিত হয়ে অন্যপ্রান্ত উত্তপ্ত করতে পারে না। অর্থাৎ এইরূপে ঢাকনা ও অ্যালুমিনিয়ামের বা স্টিলের তৈরি। অ্যালুমিনিয়াম অত্যন্ত তাপ সুপরিবাহী। তাই যাতে করে উভয় প্রাপ্ত তাপ পরিবাহিত হয়ে গরম না করতে পারে। এক্ষেত্রে হাতল হিসেবে কুপরিবাহী হিসেবে পস্নাস্টিক ব্যবহার করা হয়। আবার যদি পস্নাস্টিক হাতল না থাকে সেক্ষেত্রে কাপড় পেঁচিয়ে নেওয়া হয়। কারণ কাপড় তাপ কুপরিবাহী, যা তাপ পরিবহন করতে পারে না। পস্নাস্টিকের হাতল লাগানো স্টিলের চামচের এক প্রান্ত আগুনে ধরে বা তাপ প্রয়োগ করলে অন্যপ্রান্ত গরম হয়ে যায় না। পস্নাস্টিক অধাতু বলে তাপ পরিবহন করতে পারে না। অন্যদিকে, তাপ পরিবহন তথা সহজে গরম করার জন্য চুলার বার্নারটি লোহা ও পিতলের হয়।
আর সুইচটি যেহেতু হাত দিয়ে অন-অফ করা লাগে, তাই সেটি পস্নাস্টিকের বানানো হয়, যাতে গরম না লাগে এবং হাত পুড়ে না যায়।
প্রশ্ন : ভেবে দেখেছ, কেন ধাতব চামচ থেকে কয়েনটি আগে আলাদা হয়ে গেল। তিন ধরনের পদার্থের মধ্যে কোনটার তাপ পরিবাহিতা বেশি।
উত্তর : ধাতব চামচ থেকে কয়েনটি আগে আলাদা হয়ে যাওয়ার কারণ হলো ধাতব পদার্থের তাপ পরিবাহিতা বেশি। এ কারণে ধাত চামচটি মুক্ত গরম হয় এবং চামচে থাকা মোমের প্রলেপটি দ্রম্নত গলে যায়। এর ফলে ধাতম চামচের মধ্যে মোমের প্রলেপ দ্বারা লাগানো কয়েনটি দ্রুত আলাদা হয়ে যায়। কাঠের চামচ, পস্নাস্টিক চামচ ও ধাতব চামচের মধ্যে ধাতব চামচের পরিবাহিতা বেশি।
প্রশ্ন: ভেবে দেখো তো চায়ের কাপ কেন সাধারণত ধাতব না হয়ে কাচ বা সিরামিকের হয়, আবার অন্যদিকে রান্নার হাঁড়ি পস্নাস্টিকের না হয়ে ধাতব কেন হয়? তোমার ভাবনা নিচে লিখে ফেলো-
উত্তর : চায়ের কাপ সাধারণত ধাতব না হয়ে কাচ বা সিরামিকের হয়। কারণ-
গরম চা হলেও সিরামিকের তৈরি কাপ গরম হয় না ফলে নিরাপদে কাপে ঠোঁটে লাগানো যায়। সিরামিকের আসল সুবিধাটা হচ্ছে, সিরামিক ভাপে বেশি প্রসারিত হয় না। ফলে সিরামিকের কাপ চায়ের কাপে ফেটে যায় না। আবার খুব পাতলা কাচের চায়ের কাপ সাধারণত খুবই মজবুত হয়। পাতলা কাচের গস্নাসে গরম চা ঢাললেও গস্নাস ফেটে যায় না। কারণ চায়ের উত্তাপে পাতলা কাচের ভেতর আর বাইরের তল প্রায় একই সঙ্গে উত্তপ্ত ও প্রসারিত হয়। এই সম্প্রসারণ কাচের কাপের গায়ে চাপ সৃষ্টি করে না। ফলে চায়ের কাপ ফেটেও যায় না। এজন্য চায়ের কাপ কাচের বা সিরামিকের তৈরি হয়।
অন্যদিকে, রান্নার হাঁড়ি পস্নাস্টিকের না হয়ে ধাতব হওয়ার কারণ- ধাতুর তাপ পরিবহন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। ফলে তাপের প্রভাবে ধাতুর তৈরি হাঁড়ি সহজেই খুব গরম হয়ে ওঠে। কিন্তু পস্নাস্টিক তাপ কুপরিবাহী, এজন্য দ্রম্নত গরম হয় না। তাই রান্নার হাঁড়ি পস্নাস্টিকের না হয়ে ধাতব হয়।
উপরোক্ত পরীক্ষণ থেকে নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝতে পেরেছ, তামা, গুনা, পেরেকের মধ্য দিয়ে বিদু্যৎ প্রবাহিত হতে পারে বলে বাল্বটি জ্বলেছে। অন্যগুলোর মধ্য দিয়ে বিদু্যৎ যেতে পারেনি বলে বাল্বটি জ্বলেনি।
প্রশ্ন : কেন বৈদু্যতিক তার বা যন্ত্রাংশে তামার তারের ওপর পস্নাস্টিক বা রাবারের আস্তরণ দেওয়া থাকে?
উত্তর : বৈদু্যতিক তার বা যন্ত্রাংশে তামার তারের ওপর পস্নাস্টিক রাবারের আস্তরন দেওয়া থাকে। কারণ-
বৈদু্যতিক তারের মধ্যে তামার তার থাকে। তামার তার বিদু্যতের সুপরিবাহী। অর্থাৎ, তামার তারের মধ্যে দিয়ে খুব সহজেই বিদু্যৎ প্রবাহিত হতে পারে। এই বৈদু্যতিক তার যদি খোলা থাকে, তাহলে খোলা তারে বিদু্যৎ প্রবাহের সংস্পর্শে বিপদ ঘটার আশঙ্কা থাকে। এ কারণেই মান্টিক বা রাবার জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করে বৈদু্যতিক তার ঢেকে দেওয়া হয়। এই পস্নাস্টিক বা রাবার জাতীয় পদার্থ কুপরিবাহী পদার্থ। অর্থাৎ এসব পদার্থের মধ্য দিয়ে বিদু্যৎ প্রবাহিত হতে পারে না। বলে এরা কুপরিবাহী পদার্থ। তাই বৈদু্যতিক তার বা যন্ত্রাংশে পস্নাস্টিক বা রাবার জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা হয়, যাতে কেউ বিদু্যতের সংস্পর্শে না আসে এবং শর্ট সার্কিট হয়ে যাতে আগুন লাগার কোনো সম্ভাবনা তৈরি না হয়।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়