পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

রোমানা হাবিব চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক, ব্রাইট ফোর টিউটোরিয়াল হোম, চট্টগ্রাম
নারী-পুরুষ সমতা প্রশ্ন: নিউইয়র্কের পোশাক কারখানায় নারী শ্রমিকদের প্রথম আন্দোলনের ঠিক ৫১ বছর পর একই দিনে আরো একটি প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। উক্ত প্রতিবাদ সমাবেশটি কত সালে সংঘটিত হয়? এতে কারা অংশ নেন? এই আন্দোলন সম্পর্কে তিনটি বাক্য লেখ। উত্তর : প্রতিবাদ সমাবেশটি ১৯০৮ সালের ৮ মার্চ সংঘটিত হয়। এতে নিউইয়র্কের গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়নের নারীরা অংশ নেন। উক্ত আন্দোলন সম্পর্কে তিনটি বাক্য হলো : র. কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত শ্রম ও শিশুশ্রম বন্ধের দাবিতে তারা এ আন্দোলন করেন। রর. ১৪ দিন ধরে এই প্রতিবাদ সমাবেশ চলে এবং এতে প্রায় ২০,০০০ নারী শ্রমিক অংশগ্রহণ করেন। ররর. কর্মক্ষেত্রে এই আন্দোলন নারীদের ঐক্যবদ্ধতার একটি বড় উদাহরণ। প্রশ্ন: নারী-পুরুষের সমতা রক্ষায় তুমি কী করতে পার? উত্তর : ছোটবেলা থেকেই কাউকে ছেলে বা কাউকে মেয়ে এভাবে না দেখে সবাইকে মানুষ হিসেবে দেখব। সমাজের উন্নতির জন্য বাড়িতে মা-বাবাকে সাহায্য করব। কোনো কাজ ছেলের বা কোনো কাজ মেয়ের বলে মনে করব না। পরিবারের মা-বোন ইত্যাদি মেয়ে সদস্যদের প্রতি এবং পরিবারের বাইরের মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবো। সহপাঠী ছেলে বা মেয়ে যেই হোক একসাথে পড়ালেখা করব, খেলা করব। প্রশ্ন: ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণার প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা কর। উত্তর : ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্ক শহরের একটি সেলাইয়ের কারখানার নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি ও আট ঘণ্টা শ্রমের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করেন। সে সময় তাদের অনেককে পুলিশ নির্যাতন ও গ্রেপ্তার করে। এই দিনটিকে সামনে রেখে ১৯০৮ সালে নিউইয়র্ক শহরে হাজার হাজার নারী শ্রমিক শিশুশ্রম বন্ধ ও নারীর ভোটাধিকারের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। ১৯১০ সালে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতাত্ত্বিক সম্মেলনে জার্মান সমাজতান্ত্রিক 'ক্লারা জেটকিন' ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব দেন। পরবর্তীতে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। প্রশ্ন: যৌতুক প্রথা প্রতিরোধে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে? উত্তর : যৌতুক প্রথা প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নারীর সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলে যৌতুক প্রথা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। কেননা নারীসমাজ শিক্ষিত হলে এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাবলম্বী হলে তাদের সচেতনতা বাড়বে, যা যৌতুক প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যৌতুক প্রথা প্রতিরোধে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা অপরিহার্য। নারী ও পুরুষের ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা যৌতুক প্রথাকে নিরুৎসাহিত করবে। শিক্ষা মানুষকে সচেতন করে এবং উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে নারী-পুরুষ সকলেই দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হবে। তাই শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ঘটলে যৌতুক আদান-প্রদান কমে যাবে। প্রশ্ন: সবক্ষেত্রে নারী-পুরুষ কেমন অবদান রাখছে? উত্তর : আমাদের সমাজে বিভিন্ন পেশা, শ্রেণি ও বয়সের মানুষ বাস করে। এরা সবাই মেয়েশিশু বা ছেলেশিশু হিসেবে পরিবারে বাস করছে এবং পরিবারকে সহযোগিতা করছে। সংসারসহ কর্মক্ষেত্রের প্রায় সব জায়গায় মহিলা ও পুরুষের অবদান অস্বীকার করা যাবে না। আবার, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরুষ শিক্ষকের পাশাপাশি মহিলারাও অবদান রাখছে। এভাবে সমাজে নারী-পুরুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখছে। প্রশ্ন: নারী দিবস সম্পর্কে কী জানো? ৫টি বাক্যে লেখ। উত্তর : নারী দিবস সম্পর্কে আমি যা জানি তা হলো : ১. ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ২. ১৯৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কে নারী পোশাক শ্রমিকরা সর্বপ্রথম ন্যায্য মজুরি ও শ্রমের দাবিতে আন্দোলন করে। ৩. ১৯১০ সালে জার্মান সমাজতাত্ত্বিক ক্লারা জেটকিন নারী দিবস ঘোষণার দাবি জানান। ৪. ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস' ঘোষণা করে। ৫. নারী দিবসে নারীর অধিকার নিশ্চিত করাসহ নানা বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। প্রশ্ন: নারী নির্যাতনের কমপক্ষে পাঁচটি নেতিবাচক প্রভাব লিখ। উত্তর : নারী নির্যাতনের পাঁচটি নেতিবাচক প্রভাব হলো : ১. নারী নির্যাতন হলে নির্যাতিত নারীর শারীরিক, মানসিক ক্ষতি হয়। ২. যেসব পরিবারে মায়েরা নির্যাতনের শিকার হয় সেসব পরিবারে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধা পায়। ৩. নির্যাতিত নারী সময়মতো কাজে যেতে পারে না, ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। ৪. নারী নির্যাতন মানুষ ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর। ৫. নারীরা নানা হয়রানির শিকার হলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। প্রশ্ন: নারী নির্যাতনের পাঁচটি কারণ উলেস্নখ কর। উত্তর : নারী নির্যাতনের পাঁচটি কারণ হলো : ১. নারীদের নিম্ন সামাজিক মর্যাদা। ২. যৌতুক প্রথা। ৩. শিক্ষার অভাব। ৪. দারিদ্র্য। ৫. বিভিন্ন কুসংস্কার। প্রশ্ন: নারী শিক্ষায় বেগম রোকেয়ার পাঁচটি অবদান লেখ। উত্তর : নারী-পুরুষ সমতা ও নারী শিক্ষার বিষয়ে সমাজকে সচেতন করতে বেগম রোকেয়া অসামান্য অবদান রাখেন। তিনি নারী-পুরুষের মধ্যে বিভাজন নয় বরং সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। নারী শিক্ষার প্রসারে বেগম রোকেয়া ১৯০৫ সালে ভাগলপুরে একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আজীবন নারী শিক্ষার অগ্রগতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই মেয়েরা ধীরে ধীরে শিক্ষার আলো পেতে থাকে। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়